ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বুকজ্বালা যখন বিপজ্জনক

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৭ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বুকজ্বালা যখন বিপজ্জনক

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : যদি আপনি মসলাদার খাবার খান, অত্যধিক খাবার খান, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হন অথবা গর্ভবতী হন, তাহলে আপনার কখনো কখনো বুকজ্বালা বা হার্টবার্ন হতে পারে। সাধারণত এটি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নয়, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বুকজ্বালাকে অবহেলা করা উচিত নয়।

* বুকজ্বালা হার্ট অ্যাটাককে অনুকরণ করতে পারে
বুকজ্বালার উপসর্গ হার্ট অ্যাটাক বা অ্যানজিনার উপসর্গের অনুরূপ হতে পারে, যেমন- বুকে নিষ্পেষণমূলক ব্যথা, যা হার্টে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হয়। বুকজ্বালা এবং হার্ট অ্যাটাককে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার কিছু নিয়ম রয়েছে। শুয়ে থাকলে বুকজ্বালা আরো খারাপ হতে পারে এবং মুখে টক স্বাদ অনুভূত হবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। সন্দেহ থাকলে সবসময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বুকে টাইট অনুভব করলে, ঘাম ঝরলে, বিবর্ণ হলে, অত্যধিক দুর্বল হলে অথবা চেতনা হারালে হাসপাতালে যেতে হবে।

* আপনার বুকজ্বালা পিত্তপাথরের কারণ হতে পারে
পিত্তপাথর হচ্ছে শক্ত ডাইজেস্টিভ ফ্লুইড, যা আপনার পেটের ডানদিকের একটি ছোট অর্গান গলব্লাডারে তৈরি হতে পারে। পিত্তপাথর পিত্তনালীকে ব্লক করলে পেটের মাঝখানে অথবা উপরিস্থ পেটের ডানদিকে ক্র্যাম্প অনুভূত হবে। প্রায়সময় খাওয়ার পরপরই ব্যথা অনুভূত হয়- যা বুকজ্বালার অনুরূপ। যদি খাওয়ার পর আপনার পাকস্থলী ব্যথা হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যান।

* তীব্র বুকজ্বালা জিইআরডি’র উপসর্গ হতে পারে
জিইআরডি আছে এমন লোকদের প্রায়ক্ষেত্রে বুকজ্বালা হয়। জিইআরডি হচ্ছে একটি ক্রনিক ডাইজেস্টিভ ডিজিজ। টক ঢেকুর ওঠে এবং জ্বালাপোড়া হয়। এটি তখন ঘটে যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড বা উপাদান খাদ্যনালীতে চলে আসে। যদি আপনার সপ্তাহে অন্তত দুইবার বুকজ্বালা অথবা টক ঢেকুর ওঠে থাকে তাহলে চিকিৎসক দেখানোর সময় হয়েছে।

* জিইআরডি ব্যারেট’স এসোফ্যাগাসের কারণ হতে পারে
চিকিৎসা করা না হলে জিইআরডি ব্যারেট'’স এসোফ্যাগাসে রূপ নিতে পারে। ব্যারেট'স এসোফ্যাগাসের ক্ষেত্রে খাদ্যনালীর টিস্যুর স্তর পরিবর্তন হয়ে অন্ত্রের স্তরের মতো হয়ে যায়। এই দশা খাদ্যনালীতে ক্যানসার বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

* বুকজ্বালার ব্যথা পাকস্থলী ক্যানসারের ছদ্মবেশ হতে পারে
পাকস্থলীর আলসার হচ্ছে পাকস্থলীর স্তরের ক্ষত। পাকস্থলীর আলসারের ব্যথা উপরিস্থ পেট থেকে বুক পর্যন্ত অনুভব হতে পারে এবং কখনো কখনো বুকজ্বালার অনুরূপ ব্যথা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে আলসার পাকস্থলীর দেওয়ালে রক্তপাত ও ছিদ্রের কারণ হবে এবং পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তের মাঝে ব্লকেজ সৃষ্টি করবে। কিছু পাকস্থলীর আলসার নিজে নিজে সেরে ওঠলেও কিছু আলসারের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হবে, এমনকি সার্জারিও।

* হিয়াটাল হার্নিয়ার কারণে বুকজ্বালা হতে পারে
স্বাভাবিকভাবে আপনার ডায়াফ্রামে একটি ছোট ছিদ্র থাকে, যার মাধ্যমে খাদ্যনালী পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। হিয়াটাল হার্নিয়া তখন ঘটে যখন আপনার ডায়াফ্রামের এই ছিদ্রের মাধ্যমে পাকস্থলী পুশ আপ করে। বড় হিয়াটাল হার্নিয়ার কারণে আপনার খাদ্যনালীতে পাকস্থলীর অ্যাসিড ও খাবার চলে আসতে পারে, যার ফলে বুকজ্বালা সৃষ্টি হয়। যদি আপনার অনবরত বুকজ্বালার লক্ষণ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সাধারণত ওষুধ দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও কখনো কখনো সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

* তীব্র বুকজ্বালা এসোফ্যাজাইটিসের কারণ হতে পারে
এসোফ্যাজাইটিস হচ্ছে খাদ্যনালীর প্রদাহ, যা প্রায়ক্ষেত্রে খাদ্যনালীতে পাকস্থলীর অ্যাসিড চলে আসার ফলে হয়ে থাকে। এটি গিলতে ব্যথা বা অসুবিধা এবং বুকব্যথার কারণ হতে পারে। চিকিৎসা করা না হলে এসোফ্যাজাইটিস খাদ্যনালীর স্তরকে ড্যামেজ করতে পারে এবং ক্ষত ও গিলতে অসুবিধার মতো জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদি আপনার বুকজ্বালার উপসর্গ কয়েকদিনের বেশি থাকে, ওভার-দ্য-কাউন্টার অ্যান্টাসিড দিয়ে উপশম না হয়, খেতে কষ্ট হয়, সঙ্গে ফ্লু’র মতো উপসর্গ থাকে অথবা শ্বাসকষ্ট বা বুকব্যথা (খাওয়ার পর অল্প সময়ের জন্য) হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* বুকজ্বালা ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে
বিরলক্ষেত্রে বুকজ্বালা পাকস্থলী অথবা খাদ্যনালীর ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। যদি আপনার তিন সপ্তাহ বা তার অধিক সময় অনবরত বুকজ্বালা থাকে অথবা খাবার গিলতে কষ্ট হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে খাবার খাওয়ার সময় গলায় খাবার আটকে যাওয়ার অনুভূতি, অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস, গ্যাসীয় অবস্থা, অস্বাভাবিক পেটভরা অনুভব, বমিবমি ভাব বা বমি এবং উপরিস্থ পাকস্থলীতে ব্যথা বা অস্বস্তি উল্লেখযোগ্য।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়