ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শরীরের যে ১৪ গন্ধকে অবহেলা করবেন না (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১২ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শরীরের যে ১৪ গন্ধকে অবহেলা করবেন না (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : শরীরের গন্ধ চিকিৎসকদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করতে পারে, যেমন- ক্রন’স রোগ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, লিভার সিরোসিস, সি. ডিফিসাইল ও ক্যানসার। শরীরের ১৪ গন্ধ সম্পর্কে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব, যার কোনোটি আপনার শরীর থেকে বের হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* সকালের শ্বাসে দুর্গন্ধ
যদি আপনি মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তাহলে আপনি সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস ফেলবেন না। ঘুম ব্যাধির বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মাইকেল জে. ব্রিউস বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে মাউথ ব্রিদারদের  (মাউথ ব্রিদারের অর্থ হলো: নাকের কনজেশনের কারণে যারা মুখ দিয়ে শ্বাসকার্য চালায়) মধ্যে অনির্ণয়কৃত স্লিপ অ্যাপনিয়া (স্লিপ অ্যাপনিয়া হচ্ছে একটি বিপজ্জনক ঘুমের ব্যাধি) থাকে। এছাড়া খুব শুষ্ক মুখের কারণে তাদের শ্বাস দুর্গন্ধময় হয়।’ তাই যদি আপনার সকালের শ্বাসে দুর্গন্ধ থাকে এবং আপনি তীব্রভাবে নাক ডাকেন ও বিশেষ করে সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে আপনার ঘুমকে বিশ্লেষণ করার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* অধিক দুর্গন্ধযুক্ত মল
মল থেকে দুর্গন্ধই বের হয়, কিন্তু যদি আপনার মল প্রতিনিয়ত তরল হয় অথবা উচ্চ মাত্রার ডায়রিয়া থাকে অথবা ডায়রিয়ার সঙ্গে রক্ত বের হয় কিংবা মল সচরাচরের তুলনায় অধিক দুর্গন্ধময় হয়, তাহলে আপনার চেকআপ করার প্রয়োজন আছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের মেডিসিন অ্যান্ড এপিডেমিওলজির সহকারী অধ্যাপক ড্যানিয়েল ফ্রিডবার্গ বলেন, ‘আপনার খাদ্যাভ্যাস দিনকে দিন আপনার মলের গন্ধ পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু যেসব লোকের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স অথবা সি. ডিফিসাইল নামক কোলনিক ইনফেকশন থাকে, তাদের মল সচরাচরের চেয়ে বেশি দুর্গন্ধময় হয়।’

* মাছ পঁচা গন্ধ
ট্রাইমিথাইলঅ্যামিনিউরিয়া উচ্চারণ করতে কঠিন, তাই এই সমস্যা ‘ফিশ ওডর সিন্ড্রোম’ নামে অধিক পরিচিত, যেখানে রোগীর শরীর থেকে পঁচা মাছের গন্ধ বের হয়। এই বিরল জেনেটিক সমস্যার ক্ষেত্রে শরীরের এফএমও৩ নামক এনজাইম ট্রাইমিথাইলঅ্যামাইন ভাঙতে ব্যর্থ হয়, যা আমরা দুধ, মাংস, শিম ও ডিম থেকে পেয়ে থাকি, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ অনুসারে। খাবারে বিদ্যমান এই রাসায়নিক উপাদানের সালফারযুক্ত কটু গন্ধ থাকে যার ঘ্রাণ পঁচা মাছ বা ডিমের অনুরূপ হতে পারে। এর কোনো নিরাময় না থাকলেও আপনি ট্রাইমিথাইলঅ্যামাইন আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলে এই সমস্যা হ্রাস করতে পারেন।

* রসুন বা পঁচা ডিমের গন্ধ
যদি আপনি রসুন অথবা ডিম না খাওয়া সত্ত্বেও শরীর থেকে রসুন বা পঁচা ডিমের গন্ধ বের হয়, তাহলে তা হবে খুব উদ্বেগের বিষয়। প্রিভেনশন ফার্স্ট হেলথকেয়ারের মার্ক এস. র‍্যাবিনোভিটজ বলেন, ‘যদি যকৃত রক্ত পরিশুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আপনার এমনটা হতে পারে এবং এটি হতে পারে সিরোসিসের একটি লক্ষণ- এক্ষেত্রে আপনি টক টক গন্ধও অনুভব করতে পারেন। জার্নাল অব ক্রোমেটোগ্রাফি বি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, এটি হতে পারে লিভার সিরোসিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রারম্ভিক সতর্কীকরণ লক্ষণ। আপনার শরীর থেকে এ ধরনের গন্ধ বের হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

* গোপানাঙ্গে মাছের গন্ধ
গোপানাঙ্গে মাছের গন্ধ (সেই সঙ্গে বর্ধিত ক্ষরণ) হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের একটি লক্ষণ। সকল নারীর গোপানাঙ্গে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা স্বাভাবিকভাবে বাস করে, কিন্তু কখনো কখনো প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি পিরিয়ডের সময় অথবা ডাউচিং (গোপানাঙ্গ পরিষ্কারকরণ) বা অত্যধিক সহবাস করার পর হয়ে থাকে। প্রথমে গাইনিকোলজিস্টের কাছে না গিয়ে ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ ব্যবহার করবেন না। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনিকোলজিস্ট অনুসারে, এই ইনফেকশন ও মাছের গন্ধের চিকিৎসায় আপনার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হবে।

* মূত্রের গন্ধ
কিডনি বিকল রোগীদের শরীর থেকে অ্যামোনিয়া অথবা মূত্রের গন্ধ বের হতে পারে। আপনার কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয় বলে এমনটা হয়ে থাকে। কিডনি বিকল ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। যদি আপনার এর সঙ্গে মাংসপেশীর ক্র্যাম্প অথবা পা বা গোড়ালিতে ফোলা থাকে কিংবা মূত্রত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ
যদি আপনার মুখ থেকে সবসময় দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে আপনার মাড়িতে সমস্যা থাকতে পারে। ক্যাটনসভিলে ডেন্টাল কেয়ারের ডেন্টিস্ট স্কট এইজেন বলেন, ‘মুখের দুর্গন্ধ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া, প্লেক ও দাঁতের ওপর শক্ত আবরণের (যা ক্যালকুলাস বা টার্টার নামেও পরিচিত) বাই-প্রোডাক্ট।’ যখন আপনি ডেন্টাল ক্লিনিং করবেন না এবং ফ্লসিং ও ব্রাশিংয়ের প্রতি উদাসীন থাকবেন, আপনার দাঁতের চারপাশে প্লেক হবে এবং মাড়ি ইনফেক্ট হতে শুরু করবে- এর ফলে পেরিয়োডোন্টাল রোগ হবে, আপনার মাড়ি থেকে দাঁতের অবস্থানের বিচ্যুতি ঘটবে ও গর্তের সৃষ্টি হবে যেখানে খাবার আটকা পড়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। অবিলম্বে ডেন্টিস্টের কাছে যান।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়