ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দীর্ঘদিন বাঁচতে চাইলে ১০ খাবার বাদ দিন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দীর্ঘদিন বাঁচতে চাইলে ১০ খাবার বাদ দিন

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বর্ধিত আয়ু কে না চায়? এই সুন্দর পৃথিবী থেকে কেউই চিরবিদায় নিতে চায় না, কিন্তু মৃত্যু হলো এমন এক ধ্রুব সত্য যার স্বাদ সবাইকেই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে আপনার জীবনকালকে বাড়াতে পারেন।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন মানে রোগমুক্ত জীবন, আর রোগমুক্ত জীবন মানে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা। স্বাস্থ্যসসম্মত জীবনযাপনের একটি উপায় হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা। এখানে এমন ১০টি খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা এড়িয়ে চলে আপনার জীবনে কিছু অতিরিক্ত বছর যোগ করতে পারেন।

* প্রক্রিয়াজাত মাংস
মাঝেমাঝে লাঞ্চে ডেলি স্যান্ডুইচ খাওয়া সম্ভবত আপনাকে অসুস্থ করবে না, কিন্তু প্রতিনিয়ত ডেলি মিট ও প্রক্রিয়াজাত মাংস ভোজনের সঙ্গে অনেক ধরনের অসুস্থতার সংযোগ পাওয়া গেছে, যেমন- হৃদরোগ ও ক্যানসার, বলেন হাউসটনভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান এবং ইটরাইটফিটনেস ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা রজার. ই অ্যাডামস। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রক্রিয়াজাত মাংসকে (অধিকাংশ ডেলি মিট, হট ডগস, হ্যাম, বেকন, সসেজ) কার্সিনোজেন হিসেবে শনাক্ত করেছে। অ্যাডামস বলেন, ‘১০ দেশের ২২ জন বিশেষজ্ঞ ৮০০ এর বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা রিভিউ করে পেয়েছেন যে, প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস ভোজনে কোলরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়া অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত মাংসের উচ্চ সোডিয়াম উপাদান স্বল্পস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।’

* ডায়েট পানীয়
অধিকাংশ কৃত্রিম সুইটেনার সমৃদ্ধ খাবারে (যেমন- ডায়েট সোডা) কেমিক্যাল কালপ্রিট হচ্ছে অ্যাসপারটামি, যার সঙ্গে ব্রেইন টিউমার ও রক্ত-সম্পর্কিত ক্যানসারের (যেমন- লিউকেমিয়া ও লিম্ফোমা) সংযোগ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য, খাবার ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিন ডিন বলেন, ‘অ্যাসপারটাটি ভেঙে নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাস্পারটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা অন্যান্য অ্যামিনো অ্যাসিডের সঙ্গে আবদ্ধ না হলে স্নায়ু টিস্যুর জন্য বিষাক্ত বা নিউরোটক্সিক।’

* সাদা চিনি ও সাদা ময়দার খাবার
প্রক্রিয়াজাত, পরিশোধিত এবং সাদা চিনি ও সাদা ময়দার খাবার আপনার শরীরে হজমের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। এসব খাবার (যেমন- ব্রেড, ক্র্যাকার্স, সাদা ভাত, পাস্তা) অত্যধিক সরল কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে যা দ্রুত রক্ত শর্করায় রূপান্তরিত হয়, এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি করতে পারে এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। ডা. ডিন বলেন, ‘চিনি হঠাৎ করে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে এবং যকৃতের সরল চিনি, গ্লুকোজ বিপাকের প্রক্রিয়াকেও পরিবর্তন করতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘চিনি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি করে এবং অভ্যন্তরীণ প্রদাহ সৃষ্টি করে যা মরিচা পড়ার অনুরূপ। এই অভ্যন্তরীণ মরিচা বয়স্কতার ছাপ ও বলিরেখা সৃষ্টি করে, কারণ এটি কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ চিনি অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড ও ইমিউন সিস্টেমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যখন অ্যাড্রিনাল ফাংশন ক্ষতিগ্রস্ত বা দুর্বল হয়, কোনো লোক নিম্ন রক্ত শর্করা, নিম্ন রক্তচাপ, নিম্ন শারীরিক তাপমাত্রা ও অবসাদ বা ক্লান্তিতে ভুগতে পারেন, বলেন ডা. ডিন।

* এমএসজি সমৃদ্ধ খাবার
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা এমএসজি নামক উপাদান আপনার খাবারকে সুস্বাদু করে, কিন্তু এটির সঙ্গে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সংযোগ পাওয়া গেছে, যেমন- মাথাব্যথা, ফ্লাশিং, ঘাম নিঃসরণ, মুখমণ্ডলে চাপ বা টাইটনেস, অসাড়তা, সুঁই বিদ্ধ হওয়ার অনুভূতি, জ্বালাপোড়া, বুক ধড়ফড়, বুক ব্যথা ও বমিবমি ভাব। ডা. ডিন এমএসজি যুক্ত করা হয়নি এমন খাবার খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যেমন- উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ অর্গানিক বাদাম ও বীজ খেতে পারেন। আমাদের শরীরে ৭০০ থেকে ৮০০ এনজাইম অ্যাকশনের (যেমন- সঠিক ইমিউন ফাংশন, ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ, রক্ত শর্করার ভারসাম্য ও শক্তি উৎপাদন) জন্য ম্যাগনেসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ।

* চাইনীজ টেকআউট
কিছু এশিয়ান খাবারে উচ্চমাত্রায় লবণ ও চর্বি থাকে, যেমন- চাইনীজ টেকআউট। ডা. অ্যাডামস বলেন, ‘উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ খাবার আপনার স্থূলতা, হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এসব খাবারে যোগ করা অত্যধিক সোডিয়াম দ্রুত রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে এবং নিয়মিত ভোজন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি।’

* গ্রিলড মাংস
অ্যাডামস বলেন, ‘মাংসের পৃষ্ঠ যখন উচ্চ তাপের সংস্পর্শে আসে তখন একটি কেমিক্যাল রিয়্যাকশন হয়, যেখানে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইন (এইচসিএ) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচ) সৃষ্টি হয়।’ গবেষণায় পাওয়া গেছে, এইচসিএ এবং পিএএইচ প্রাণীদের মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে এবং গবেষণায় এখনো মাংস রান্নার পদ্ধতি ও ক্যানসার ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত চলছে। সুখবর হচ্ছে এই রিয়্যাকশন হ্রাস করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। ডা. অ্যাডামস রিয়্যাকশন হ্রাস বা প্রতিরোধ করতে নিম্ন চিনির ম্যারিনেড ব্যবহার করতে, সস বা তেলে মাংসকে ব্রাশিং করতে অথবা মাংসকে গ্রিলের ওপর রাখার পূর্বে পানিতে ভেজাতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া মাংস রান্নার সময় ঘনঘন নেড়ে, পোড়া মাংস কেটে ফেলে এবং মাংসকে নিম্ন তাপমাত্রায় রান্না করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

* ট্রান্স ফ্যাট
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, প্যাস্ট্রি, বিস্কুট বা কুকিজ ও অতি মিষ্টান্ন খাবারের অধিকাংশেই অত্যধিক মাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট থাকে। মেট্রো ইন্টিগ্রেটিভ ফার্মেসির ট্রাডিশনাল ন্যাচারোপ্যাথ সাল্লি ওয়ারেন সতর্ক করেন, ‘ট্রান্স ফ্যাটের সঙ্গে প্রদাহ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও জীবনের আয়ু কমাতে পারে এমন অন্যান্য ক্রনিক সমস্যার সংযোগ পাওয়া গেছে।’ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে ২ শতাংশ শক্তি অর্জনে করোনারি হৃদরোগ বা সিএইচডি'র ঝুঁকি ২৩ শতাংশ বেড়ে যায়, যা হঠাৎ কার্ডিয়াক মৃত্যুর প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর।

* এনার্জি ড্রিংক
আপনি জানেন যে এসব অত্যধিক ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভীতিপ্রদ, কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি এখনো মাঝেমাঝে এসব পানীয় পান করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আপনার আয়ু বাড়াতে চান ও সুস্থ থাকতে চান, তাহলে এ ধরনের পানীয় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করাটাই সর্বোত্তম। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা মনিকায় অবস্থিত প্রভিডেন্স সেন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট নিকোলে ওয়েইনবার্গ বলেন, ‘এসব পানীয়তে এত বেশি ক্যাফেইন থাকে যে আপনার অনিয়মিত হৃদস্পন্দন সৃষ্টি হতে পারে।’ বিরল ক্ষেত্রে, অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে।

* ফাস্ট ফুড
ফাস্ট ফুড আপনার শরীরের ওপর কি রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা হয়তো আপনি ধারণাও করতে পারেন না। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা মনিকায় অবস্থিত প্রভিডেন্স সেন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শেরি রস বলেন, ‘আপনার ডায়েট থেকে ফাস্ট ফুড অপসারণ আপনাকে ক্যালরি ও ফ্যাট হ্রাস করতে সাহায্য করবে। ডায়েট থেকে ফাস্ট ফুড অপসারণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনার কোলেস্টেরল মাত্রা উন্নত হবে।’

* অ্যালকোহলিক বেভারেজ
অত্যধিক অ্যালকোহল পানে পুরুষ ও নারীর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অল্প মাত্রায় অ্যালকোহল পানে কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া গেলেও তা কিন্তু পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। একটি বৈশ্বিক গবেষণা বলছে যে, অ্যালকোহল পানের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই, অর্থাৎ যেকোনো মাত্রার অ্যালকোহল পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অ্যালকোহল পানে স্বল্পস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়, যা আপনার আয়ু হ্রাস করবে। অত্যধিক অ্যালকোহল পানের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে হৃদরোগ, লিভার ড্যামেজ, প্যানক্রিয়েটাইটিস (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ), মুখের ক্যানসার, খাদ্যনালীর ক্যানসার, গলার ক্যানসার, লিভারের ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার অন্তর্ভুক্ত। তাই অ্যালকোহল পরিহার করাটাই সবচেয়ে ভালো।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

*






রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়