ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চিকিৎসায় বিস্ময়কর অগ্রগতি

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিকিৎসায় বিস্ময়কর অগ্রগতি

এস এম গল্প ইকবাল : দিনকে দিন বিজ্ঞান সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় ২০১৮ সালেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হয়েছে। এ বছর ক্যানসার, স্ট্রোক, মাইগ্রেন ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের ১৩ বিস্ময়কর মেডিক্যাল আবিষ্কার নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* ক্যানসারের টিকা
এ বছরের শুরুর দিকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানান, তারা সম্ভাব্য ক্যানসার ভ্যাকসিন পরীক্ষা করার জন্য লিম্ফোমা রোগীদের ওপর একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করবেন। এই চিকিৎসাটি সলিড টিউমারে ইমিউন-স্টিমিউলেটিং অ্যাজেন্ট ইনজেক্ট করার সঙ্গে জড়িত। ইঁদুরের ওপর এই চিকিৎসা প্রয়োগে প্রাণীর ক্যানসারের সকল লক্ষণ দূর হয়েছে, এতে প্রচলিত ইমিউনোথেরাপির মতো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। অনকোলজির অধ্যাপক রোনাল্ড লেভি বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগে টিউমারের মধ্যে শুধুমাত্র ইমিউন কোষকে স্টিমিউলেট করার জন্য দুইটি অ্যাজেন্টের খুব অল্পমাত্রা এককালীন প্রয়োগ করা হয়। আমরা ইঁদুরের মধ্যে বিস্ময়কর শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখি, যেখানে প্রাণীর সারা শরীর থেকে টিউমার দূর হয়েছে।’ যদি মানুষের ওপর এই চিকিৎসা সফল হয়, তাহলে এটি সব ধরনের ক্যানসার টিউমার নিরাময় করতে সক্ষম হবে।

* হাইপারক্যালেমিয়া শনাক্তকরণের টেস্ট
হাইপারক্যালেমিয়া হচ্ছে এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি এবং এটি সাধারণত কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস অথবা কিছু রক্তচাপের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ অনুসারে। যখন এই ইলেক্ট্রোলাইট মিনারেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, এটি হার্টের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং বুক ব্যথা, বুক ধড়ফড় ও দুর্বল পালসের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। ক্রনিক কিডনি রোগের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সাধারণত বর্ধিত পটাশিয়ামের মাত্রা শনাক্ত করতে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যালাইভকোরের কার্ডিয়াক সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্মকে (কার্ডিয়াক হাইপারক্যালেমিয়া সফটওয়্যার) বর্ধিত পটাশিয়ামের মাত্রা নির্ণয়ের উপযোগী বলে ঘোষণা করেছে। এই প্রযুক্তি অ্যালাইভকোর ও মায়োক্লিনিকের যৌথ উদ্যোগে ডেভেলপ করা হয়েছে, যা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রামের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পটাশিয়ামের মাত্রা নির্ণয় করে- এখানে রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

* ইসিজি অ্যাপ
২০১৮ সালের শেষের দিকে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৪ ইসিজি অ্যাপ লঞ্চ করতে যাচ্ছে। অ্যাপল কোম্পানি বলছে যে, এই অ্যাপটি সিঙ্গেল-লিড ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রামের মতো ইসিজি জেনারেট করতে সক্ষম। এই ঘড়িটির পেছনে ইলেক্ট্রোড সংযুক্ত করা হয়েছে যা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের (যেমন- অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন) মতো অস্বাভাবিকতা ধরতে হার্টের ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালসের উপাত্ত নেবে। সময়ের পরিক্রমায় তথ্য জমা হতে থাকবে, পরে এই তথ্য আপনি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন। এই ঘড়ির অন্য একটি সুবিধা হচ্ছে, অ্যাকসেলারোমিটার ও জাইরোস্কোপ যা পড়ে যাওয়া শনাক্ত করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি সেবার আহ্বান করতে পারে।

* নন-ইনভেসিভ এন্ডোমেট্রিয়োসিস টেস্ট
এন্ডোমেট্রিয়োসিস হচ্ছে একটি যন্ত্রণাদায়ক দশা, যেখানে জরায়ুর বাইরে এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের স্তর) বিকশিত হয়। এটি নির্ণয় করতে ল্যাপারোস্কপির মতো ইনভেসিভ ও ব্যয়বহুল টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে, প্রায়ক্ষেত্রে এটি অনির্ণীত থেকে যায় এবং এটি শনাক্ত করতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে। ডটল্যাব নামক একটি কোম্পানি এই চিত্র পাল্টাতে প্রথমবারের মতো নন-ইনভেসিভ এন্ডোমেট্রিয়োসিস টেস্ট আবিষ্কার করেছে- এই টেস্টের নাম হচ্ছে ডটএন্ডো, এটি রোগীর লালা ও রক্তের মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের বায়োমার্কার পরিমাপ করতে সক্ষম।

* মোটর ফাংশন পুনরুদ্ধারের থেরাপি
ডিপ ব্রেইন স্টিমিউলেশন নামক একটি চিকিৎসা স্ট্রোকে প্যারালাইজড হওয়ার পর মোটর ফাংশন পুনরুদ্ধার করার থেরাপি হওয়ার খুব কাছাকাছি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের (এনআইএইচ) সহযোগিতায় ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এই চিকিৎসাটি ডেভেলপ করেছে। গবেষকরা প্রকাশ করেছেন যে, প্রথম হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৫৯ বছর বয়স্ক এক রোগীর ওপর এই চিকিৎসা চালানোর পাঁচ মাস পর তার অনেক উন্নতি হয়েছে। এনআইএইচ ঘোষণা করেছে যে এই ট্রায়াল অব্যাহত থাকবে- এ সংস্থাটি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিককে গবেষণার জন্য এ বছর ২.৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দিয়েছে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ডা. আন্দ্রে মাশাডো বলেন, ‘যদি এই গবেষণা সফল হয়, তাহলে স্ট্রোকে ভুগেছে এবং প্যারালাইজড হয়ে আছেন এমন রোগীদের জন্য এটি হবে বেঁচে থাকার নতুন উপায়। এটি রোগীদের পুনর্বাসন ও ফাংশন পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেবে- এভাবে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠবে।’

* স্ট্রোক পুনর্বাসনের নতুন সেন্সর
স্ট্রোক পুনর্বাসন উন্নত করার লক্ষ্যে নতুন ক্যাটাগরির একটি পরিধেয় যন্ত্র ডেভেলপ করা হয়েছে। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি তারবিহীন প্রসারণযোগ্য ইলেক্ট্রনিক সেন্সর ডেভেলপ করেছেন যা ত্বকের ওপর লাগানো হবে। এই সেন্সরটি দেখতে ব্যান্ড-এইডের মতো এবং এটি গলার ওপর বসানো হবে যা রোগীর কথা বলার প্যাটার্ন ও খাদ্যগ্রহণ কার্যক্রম বিশ্লেষণ করার জন্য ভোকাল কর্ডের ভাইব্রেশন পরিমাপ করবে, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুসারে। অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক সেন্সর পা, বাহু ও বুকে পরানো হয় যা সরাসরি ক্লিনিশিয়ানদের নিকট উপাত্ত পৌঁছায় যাতে তারা রোগীদের হাসপাতাল ত্যাগের পর তাদের অগ্রগতি মনিটর করতে পারেন।

* মাইগ্রেন প্রতিরোধের টিকা
মাইগ্রেনে ভুগে এমন লোকের অভাব নেই। মাইগ্রেনের চিকিৎসা করা কঠিন, কিন্তু আশার কথা হচ্ছে- এ বছরের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক অনুমোদিত নতুন একটি ওষুধ মাইগ্রেনের প্রতি ভালো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এইমোভিগ হচ্ছে প্রথম ইনজেক্টেবল ওষুধ যা মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে পারে। এফডিএ’স সেন্টার ফর ড্রাগ ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চের ডিভিশন অব নিউরোলজি প্রোডাক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর এরিক বাস্টিংগস বলেন, ‘মাইগ্রেনে ভোগার দিন কমাতে এইমোভিগ হচ্ছে রোগীদের জন্য একটি নতুন অপশন।’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে, যেসব রোগী এইমোভিগ ব্যবহার করেছেন তাদের মাইগ্রেনে ভোগার দিন যারা প্ল্যাসেবো দিয়ে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করেছেন তাদের তুলনায় মাসে আড়াই দিন কমেছিল।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়