ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি কেমন সফল (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ৫ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি কেমন সফল (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : নতুন বিয়ে করেছেন- এখনই বাচ্চা নিতে চান না? অথবা একটি বাচ্চা আছে- এখনই আরেকটা বাচ্চা নিতে চান না? কিংবা পরিবার আর বড় করার ইচ্ছে নেই? তাহলে আপনাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

অনেক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে- সকল পদ্ধতি যে সমানভাবে কার্যকর এমনটা নয়। এখানে সবচেয়ে কার্যকর ১৬টি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে র‍্যাংক অনুসারে আলোচনা করা হলো (দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব)।

১৬. স্পার্মিসাইড (এ পদ্ধতি গ্রহণকারী বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২৮ জন গর্ভবতী হয়)
স্পার্মিসাইড সবসময় ডায়াফ্রামের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিৎ এবং এটি কনডমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে (এ কারণে স্পার্মিসাইড কোটেড অনেক কনডম পাওয়া যায়)। কিন্তু শুক্রাণুর গতি হ্রাস করতে ও সার্ভিক্স (ভ্যাজাইনার নিচের দিক) ব্লকে সাহায্য করতে এটি নিজে নিজেও কাজ করে। আপনি ক্রিম, জেল, ফিল্ম, ফোম অথবা সাপোজিটরি ফর্মে স্পার্মিসাইড পাবেন। কোন ধরনের স্পার্মিসাইড ব্যবহার করছেন এটা কোনো ব্যাপার নয়, কিন্তু সহবাসের ঠিক পূর্বে স্পার্মিসাইড প্রবেশ করাতে হবে- এ পদ্ধতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও এটি অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির তুলনায় কম কার্যকর। যদি আপনি স্পার্মিসাইড ব্যবহার করতে চান, তাহলে ফিল্ম স্পার্মিসাইড বেছে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির ফ্যামেলি মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ প্রফেশনালস এর চেয়ারম্যান ডা. ওউ। এই ক্ষুদ্র শিটস ভ্যাজাইনায় শোষিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘এটি আসলেই ছোট, এমনকি সঙ্গীরা অনুভব করতে পারবে না যে এটি সেখানে আছে।’

১৫. ফার্টিলিটি অ্যাওয়ারনেস (এ পদ্ধতি গ্রহণকারী বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২৪ জন গর্ভবতী হয়)
যদি আপনি খুব সচেতন ব্যক্তিত্ব এবং পিরিয়ড ট্র্যাকিং অ্যাপের প্রতি নির্ভরশীল হন, তাহলে আপনি কোনো ফার্টিলিটি অ্যাওয়ারনেস মেথড বিবেচনা করতে পারেন, যাকে ন্যাচারাল ফ্যামিলি প্লানিং অথবা রিদম মেথডও বলে। এ পদ্ধতি আপনার পিরিয়ড ও ডিম্বস্ফোটনের ক্লোজ ট্র্যাক বজায় রাখার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তাই জানতে পারবেন যে কখন আপনি সর্বাধিক উর্বর- এবং এর ফলে আপনি এসব দিনে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করবেন না। নারীরা তারা কখন ডিম্বস্ফোটনের কাছাকাছি তা নির্ণয় করতে ফার্টিলিটি অ্যাওয়ারনেস মেথডের মাধ্যমে প্রতি সকালে তাদের তাপমাত্রা মাপতে পারেন, প্রতিদিন সার্ভিক্যাল মিউকাস চেক করতে পারেন অথবা মাসিক চক্রের তালিকা করতে পারেন। মনে রাখবেন যে, এ পদ্ধতি সেসব নারীর জন্য সর্বোত্তম যাদের মাসিক চক্র খুব অনুমেয় অথবা নিয়মিত, যাতে তারা এসব পরিবর্তন খেয়াল রাখতে পারেন এবং সেই অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারেন, বলেন ডা. ওউ।

১৪. স্পঞ্জ (যারা ১ বছরের মধ্যে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি গ্রহণকারী প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২৪ জন গর্ভবতী হয় এবং যারা কখনো সন্তান জন্ম দেননি তাদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি গ্রহণকারী প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ১২ জন গর্ভবতী হয়)
নরম ও নমনীয় প্লাস্টিক দিয়ে তৈরিকৃত স্পঞ্জ সার্ভিক্সকে ঢেকে রাখে ও শুক্রাণুকে ব্লক করে। শুক্রাণুকে গতিহীন বা নিস্ক্রিয় করতে এতে স্পার্মিসাইডও থাকে। আপনি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি রেখে দিতে পারেন, কিন্তু সহবাসের পর এটি কার্যকর হতে অন্তত ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত রাখতে হবে। এটি নিজে নিজে সঠিকভাবে স্থাপন করতে হয়। যদি আপনি অতীতে বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকেন, তাহলে এটি তেমন নিখুঁতভাবে ফিট নাও হতে পারে। যেহেতু স্পঞ্জ গর্ভনিরোধের সর্বাধিক জনপ্রিয় ধরন নয়, তাই আপনি অন্যান্য পদ্ধতি চেষ্টা করতে পারেন।

১৩. উইথড্রয়াল (এ পদ্ধতি গ্রহণকারী বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২২ জন গর্ভবতী হয়)
আমাদের অধিকাংশই যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত তা হচ্ছে, বীর্যপাতের পূর্বেই ভ্যাজাইনা থেকে পেনিস বের করে আনা, এর ফলে কোনো শুক্রাণু ভ্যাজাইনাতে প্রবেশ করতে পারে না। চিকিৎসকদের ভাষায় এ পদ্ধতিকে উইথড্রয়াল মেথড বলে। এ পদ্ধতি ততটা কার্যকর নয়। যদি উইথড্রয়াল প্রসেসের সময় সামান্য বীর্য ভ্যাজাইনাতে প্রবেশ করে অথবা ভ্যাজাইনার কাছে থাকে, তাহলে গর্ভধারণ হতে পারে- তাই সঠিক সময়ে পেনিস বের করে আনার ভালো নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রি-ইজাকুলেট থেকে গর্ভধারণ বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য গবেষণা নেই, কিন্তু অন্তত একটি গবেষণায় প্রি-ইজাকুলেট থেকে গর্ভধারণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, ডা. ওউ উল্লেখ করেন। যদি আপনি এই মুহূর্তে বাচ্চা নিতে না চান, তাহলে আরো বেশি কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করুন। যদি নারীরা গর্ভধারণের ব্যাপারে উদার থাকে এবং উইথড্রয়াল মেথডে সুখ অনুভব করে ও এসটিডির ঝুঁকি না থাকে, তাহলে এ পদ্ধতিতে সহবাস করতে পারেন।

১২. ফিমেল কনডম (এ পদ্ধতি গ্রহণকারী বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ২১ জন গর্ভবতী হয়)
ফিমেল কনডম সহবাসের ৮ ঘণ্টা আগে ভ্যাজাইনায় প্রবেশ করানো লাগে, কিছুটা ডায়াফ্রামের মতো। শুক্রাণুর প্রবেশ ঠেকাতে এটি সার্ভিক্সকে ঢেকে রাখে। এটি মেল কনডমের মতো কার্যকর নয় এবং এসটিডি প্রতিরোধেও কার্যকর নয়। এর কারণ হচ্ছে, এটি প্রবেশ করাতে ও সঠিকভাবে বসাতে সামান্য জটিলতা রয়েছে। মেল কনডমের মতো এটি কোনোকিছুতে দৃঢ়ভাবে ফিট করা যায় না এবং এটি আশপাশে শিফট হতে পারে ও অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। এনওয়াইইউ’র ল্যানগোন মেডিক্যাল সেন্টারের অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. তারানেহ শিরাজিয়ান বলেন, ‘ফিমেল কনডম পরতে মেল কনডমের তুলনায় বেশি কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ফিমেল কনডমের কার্যকারিতার হার নিম্ন এবং এ কারণে এটি খুব জনপ্রিয় পদ্ধতি নয়।’

১১. মেল কনডম (এ পদ্ধতিতে বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ১৮ জন গর্ভবতী হয়)
এসব ল্যাটেক্স বা পলিইউরেথ্যান স্লিভস আপনার অনিষিক্ত ডিম্বাণুর কাছে শুক্রাণুর আগমন প্রতিরোধ করতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। সঠিকভাবে কনডম পরলে আপনি এসটিডি বা যৌন সংক্রমিত রোগ থেকেও রক্ষা পাবেন, কিন্তু রোগ ছড়ানো প্রতিরোধের জন্য ল্যাম্বস্কিন কনডম কার্যকর নয়। গর্ভনিরোধের অন্যতম পুরোনো ধরন হচ্ছে কনডম, কিন্তু শত শত বছর ধরে এটির ব্যবহার হয়ে আসলেও লোকজন এখনো ঠিকভাবে কনডম পরে না- এ কারণে এটি যতটা কার্যকর হওয়া উচিৎ ততটা কার্যকর নয়, বলেন ডা. শিরাজিয়ান। তিনি যোগ করেন, ‘আমি সবসময় শুনি যে কনডম ছিঁড়ে গেছে! কিন্তু সঠিকভাবে পরলে কনডম ছিঁড়ে না। এটি এমনভাবে পরুন যেন পেনিসের শীর্ষে সামান্য ফাঁকা জায়গা থাকে এবং এটি করতে পেনিস খাড়া না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ ভালোভাবে কনডম পরলে এটি ভালোভাবে কাজ করে, বলেন ডা. ওউ।

১০. ডায়াফ্রাম (এ পদ্ধতি গ্রহণকারী বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ১২ জন গর্ভবতী হয়)
এই রাবার বেরিয়ারটি ভ্যাজাইনার ভেতরে বসানো হয় যা আপনার সার্ভিক্সকে আবৃত রাখবে। এটি শুক্রাণুকে জরায়ুর বাইরে রেখে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন সাইজের ডায়াফ্রাম পাওয়া যায়- আপনার জন্য কোনটি ফিট হবে তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। ডায়াফ্রামের সঙ্গে সবসময় স্পার্মিসাইড ব্যবহার করা উচিৎ, যা শুক্রাণুকে গতিহীন বা নিস্ক্রিয় করে- কারণ তারা ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে ডায়াফ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ডায়াফ্রাম কোনো হরমোন নির্গত করে না এবং এটি তখন ব্যবহার করবেন যখন আপনি সহবাসের জন্য প্রস্তুত। আপনি এটি লাগানো মাত্রই সহবাস করতে পারবেন। সহবাসের পর ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত এটি রাখুন, নয়তো অপেক্ষমান কোনো শুক্রাণু আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে হয়তো এটির কার্যকারিতার হার যতটা হওয়া উচিৎ ততটা নয়।

৯. রিং (এ পদ্ধতি গ্রহণকারী বছরে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯ জন গর্ভবতী হয়)
অন্যতম হরমোনগত জন্মনিয়ন্ত্রণ অপশন হচ্ছে ভ্যাজাইনাল রিং- এটি আপনার ভ্যাজাইনাতে তিন সপ্তাহের জন্য পরবেন এবং পিরিয়ডের সপ্তাহে খুলে ফেলবেন। ডিম্বস্ফোটন বাধা দিতে ও সার্ভিক্যাল মিউকাসকে ঘন করতে এটি ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টিন নির্গত করে- ভ্যাজাইনার স্তরের মধ্য দিয়ে উভয় হরমোনই শোষিত হয়। সঠিকভাবে স্থাপনে রিংটি সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে, বলেন ডা. শিরাজিয়ান। তিনি যোগ করেন, ‘মাঝেমাঝে লোকজন বলে যে তারা এটি অনুভব করে অথবা এটি সহজে চলে আসে- এর মানে হচ্ছে, এটি ভালোভাবে স্থাপন করা হয়নি। ভ্যাজাইনার যতটা সম্ভব ভেতর এটি পুশ করুন।’ কখন নতুন রিং লাগাতে হবে এবং কতদিন রিং ছাড়া থাকা যাবে তা খেয়াল রাখার প্রয়োজন হবে। ডা. ওউ বলেন, ‘আপনি সহবাসের সময় টেকনিক্যালি এটি খুলে ফেলতে পারেন। এটি খুব ধীর গতিতে হরমোন নিঃসরণ করে, তাই ২০ থেকে ৩০ মিনিটের সহবাস পার্থক্য গড়ে দেবে না। কিন্তু তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য এটি খুলে না রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি পুনরায় লাগানোর কথা মনে রাখুন।’

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : হেলথ

পড়ুন : * জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি কেমন সফল (শেষ পর্ব)

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়