ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রোবটের মাধ্যমে গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর প্রথম গর্ভবতী নারী

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোবটের মাধ্যমে গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর প্রথম গর্ভবতী নারী

দেহঘড়ি ডেস্ক : রোবট ব্যবহার করে জরায়ু প্রতিস্থাপনের পর একজন নারী গর্ভবতী হয়েছেন। ২০১৭ সালে সুইডেনে বিশ্বে প্রথমবারের মতো রোবটের মাধ্যমে জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া নারীটি আশা করছেন যে, তিনি চলতি বছরের বসন্তে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হবেন।

জরায়ু প্রতিস্থাপনের জন্য ডোনারের গর্ভ সার্জিক্যালি অপসারণ করা হয় এবং এটি এমন একজন নারীর মধ্যে স্থাপন করা হয় যিনি প্রাকৃতিকভাবে গর্ভবতী হতে পারেন না।

রোবটের মাধ্যমে জুরায়ু প্রতিস্থাপন হওয়া ওই সুইডিশ নারীর নাম ও বয়স জানা যায়নি। সন্তান জন্ম দিলে তিনি হবেন গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর সন্তান জন্ম দেওয়া বিশ্বের ১৪তম নারী এবং রোবটের মাধ্যমে গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর সন্তান জন্ম দেওয়া বিশ্বের প্রথম নারী। চিকিৎসকদের মতে, জরায়ু প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় রোবট ব্যবহারের ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং এ সার্জারিতে ডোনারদের তেমন একটা ক্ষতি হবে না।

ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গে রোবটিক সার্জারির মাধ্যমে আরো পাঁচজন নারীর মধ্যে গর্ভ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের কেউ এখনো গর্ভবতী হননি। সার্জিক্যাল রোবটের এ পদ্ধতিতে ডোনারের পেটে পাঁচটি ১ সেন্টিমিটার প্রশস্ত গর্ত করা হয়- চিকিৎসকদের দ্বারা সম্পাদিত সার্জারির মতো রোবটিক সার্জারিতে বেশি কাটার প্রয়োজন হয় না। এর ফলে ডোনাররা বেশি রক্ত হারায় না এবং গর্ভ ডোনেট করার পর বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হয় না, বিশেষজ্ঞরা বলেন। জরায়ু প্রতিস্থাপনের পর জন্ম নেওয়া ১৪টি বাচ্চার মধ্যে আটটিরই জন্ম সুইডেনে, অন্যান্যদের জন্ম যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, সার্বিয়া ও ভারতে।



২০১৭ সালে মৃত ডোনার থেকে প্রতিস্থাপনকৃত জরায়ু থেকে প্রথম বাচ্চা হওয়ার পর, জরায়ু প্রতিস্থাপনের জন্য বিশ্বে প্রথমবারের মতো রোবটিক সার্জারি সম্পন্ন করা হয়। জীবন-পরিবর্তনকারী এই রোবটিক সার্জারিটি সেসব নারীদের জন্য আশার আলো, যারা প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম নন। উদাহরণস্বরূপ, মেয়ার রকিট্যানস্কাই কুন্টার হাউসার আছে এমন নারীরা এ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে পারেন, এ অবস্থার নারীদের জন্ম হয় গর্ভ ছাড়াই।

রোবটিক সার্জারির মাধ্যমে গর্ভ প্রতিস্থাপনের প্রধান গবেষক ম্যাটস ব্রানস্টর্ম বলেন, ‘আমি মনে করি গর্ভ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। রোবটিক সার্জারিতে ডোনারের রক্তক্ষরণ কম হয়, হাসপাতালে কম থাকতে হয় এবং সার্জারির পর ডোনার তুলনামূলক ভালো অনুভব করেন।’ দুজন দক্ষ সার্জন কর্তৃক রোবট নিয়ন্ত্রিত হয়, যারা জয়স্টিক ব্যবহার করেন। জয়স্টিকের মাধ্যমে তুলনামূলক নিখুঁতভাবে ডোনারের শরীরের ভেতর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করানো হয়। রোবট মানুষের হাতের মুভমেন্টকে মিলিমিটার-স্পেসিফিক মোশনে কনভার্ট করে এবং অপ্রয়োজনীয় বা দুর্ঘটনাজনিত ড্যামেজের ঝুঁকি কমায়। কিহোল ইনসিশনের (ছোট কাটাছেঁড়ার সার্জারি) মাধ্যমে ডোনারের শরীর অ্যাকসেস করার মানে হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে প্রচলিত অস্ত্রোপচারের তুলনায় কম ক্ষতি হয়।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এই সার্জারি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়, যখন একজন নারীর শরীরে মৃত ডোনারের জরায়ু প্রতিস্থাপনের পর তিনি বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম হন। ৩২ বছর বয়স্ক ব্রাজিলের এই নারীর (ফ্যাবিয়ানা অ্যামোরিম ডি লিমা) সফল গর্ভধারণ উর্বরতা চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি বিশেষ আবিষ্কার। অপারেশনের পূর্বে তার ডিম্বাণুকে হিমায়িত করা হয় এবং গর্ভ প্রতিস্থাপনের পর তার নিয়মিত পিরিয়ড শুরু হলে আইভিএফ ব্যবহারে তাকে গর্ভবতী করা হয়। ৩৫ সপ্তাহ গর্ভধারণের পর সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে লুইসা স্যান্টোশের জন্ম হয়।


                                               বাবা-মার সঙ্গে লুইসা স্যান্টোশ

চিকিৎসকদের মতে, মৃত নারীর জরায়ুর ব্যবহার মা হতে অক্ষম নারীদের আশা দেখাচ্ছে, কারণ এক্ষেত্রে উপযুক্ত ডোনার পাওয়া সহজ হতে পারে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চেক প্রজাতন্ত্র ও তুরস্কে মৃত ডোনার থেকে গর্ভ প্রতিস্থাপনের ১০টি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। জন্মের সময় লুইসার ওজন ছিল ৫ পাউন্ড ১০ আউন্স- এটি প্রমাণ করেছে যে মৃত ডোনারের গর্ভ ব্যবহার করে এ পদ্ধতি নিরাপদে সম্পন্ন করা যেতে পারে।

এ আবিষ্কার দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাজ্যের সার্জনরা সেদেশে প্রথমবারের মতো জরায়ু প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে অন্তত ১৫,০০০ নারীর জন্ম থেকেই গর্ভ নেই অথবা ক্যানসার বা অন্যান্য অসুস্থতার কারণে এটি অপসারণ করতে হয়েছে। এসব নারীদের এ পদ্ধতিতে মা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জরায়ু প্রতিস্থাপন সার্জারি বিরল এবং এখনো পর্যন্ত বিশ্বে এ পদ্ধতিতে ১৪টি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। এটি ডোনার থেকে সার্জিক্যালি গর্ভ অপসারণের সঙ্গে জড়িত- তারপর এটি গর্ভ নেই এমন কোনো নারীর শরীরে লাগানো হয় এবং এরপর আইভিএফ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ আত্মীয় কিংবা গর্ভবতী হতে ইচ্ছুক নারীর বান্ধবী ডোনার হয়ে থাকে। রোবটের মাধ্যমে ডোনার থেকে গর্ভ অপসারণ করা হলেও এখনো পর্যন্ত চিকিৎসকদের মাধ্যমেই তা অন্য নারীর শরীরে স্থাপন করা হয়।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়