ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

উর্বরতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উর্বরতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনি কি গর্ভধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন? অথবা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবছেন? এটা স্বাভাবিক যে সন্তান নিতে ইচ্ছুক প্রত্যেক নারীরই উর্বরতা বা গর্ভধারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহ থাকে। উর্বরতা সম্পর্কে ১১টি বিস্ময়কর তথ্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* উর্বরতার পথে বয়সই একমাত্র বাধা নয়
যদি আপনি মা হতে চান, তাহলে আপনার বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কারণ সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে মা হওয়ার সম্ভাবনা তত কমতে থাকে। মা হওয়ার প্রচলিত আদর্শ বয়স হচ্ছে ৩৫ বছর পর্যন্ত, তবে মধ্য-ত্রিশের চেয়ে কম বয়সের অনেক নারীও বন্ধ্যা হতে পারে- কিন্তু তারা গর্ভধারণের চেষ্টা না করলে এটি ধরা পড়ে না, বলেন ফার্টিলিটি ক্লিনিক সিসিআরএম-নিউ ইয়র্কের ফাউন্ডিং পার্টনার এবং প্র্যাকটিস ডিরেক্টর ব্রায়ান লেভিন। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, যেসব নারীর বয়স ৩৫ বছরের নিচে তাদের মেডিক্যাল সেবা অনুসন্ধানের এক বছর আগে থেকে গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ, যেখানে পয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের ছয় মাস আগে থেকে চেষ্টা করা উচিৎ, বলেন লেভিন।

* সময় পরিক্রমায় ডিম্বাণুর গুণ সংখ্যা কমে যায়
পরিবার পরিকল্পনার জন্য বয়সের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ। যেসব নারী বাচ্চা নিতে চান, তাদের আর বিলম্ব না করে ত্রিশের কোঠা পার হওয়ার প্রথম দিকে গর্ভধারণের চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বয়স যত বাড়তে থাকবে, অনুর্বর হওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে এবং বাচ্চা হলেও তার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে। অরিগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পাউলা আমাটো বলেন, ‘নারীর বয়স যত বাড়তে থাকে, ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণও কমতে থাকে, বিশেষ করে মধ্য-ত্রিশ থেকে ত্রিশের শেষদিকে গর্ভধারণ করা খুব কঠিন। এছাড়া নারীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভপাত ও ভ্রুণের ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।’

* বন্ধ্যাত্ব শুধুমাত্র নারীর রোগ নয়
বন্ধ্যাত্ব এড়াতে নারীরা তাদের শরীরের যথেষ্ট যত্ন নিয়ে থাকে, তবুও তাদেরকে বন্ধ্যাত্বের জন্য দোষারোপ করা হয়ে থাকে- এটা বিবেচনা করা হয় না যে পুরুষের মধ্যেও সমস্যা থাকতে পারে। ডা. লেভিন বলেন, ‘একটি বাচ্চা জন্মাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই অবদান থাকে, তাই গর্ভধারণে ব্যর্থতা স্বামী-স্ত্রী দুজনের যে কারো সমস্যার কারণে হতে পারে। অতএব, স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব পরীক্ষার পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করা উচিৎ।’ তিনি বলেন যে, প্রায় ৪০ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে নারীর ব্যাধির কারণে, অন্য ৪০ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে পুরুষের ব্যাধির কারণে এবং ২০ শতাংশ কারণ স্পষ্ট নয়। ডা. আমাটো বলেন, ‘সহবাসের সময় ব্যবহৃত কিছু লুব্রিক্যান্ট শুক্রাণুর গতিশীলতা হ্রাস করতে পারে অথবা শুক্রাণুর মৃত্যর কারণ হতে পারে, একারণে গর্ভধারণ সহজ করতে স্ত্রীর পাশাপাশি স্বামীরও ডায়েট ও লাইফস্টাইলের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিৎ।’

* বন্ধ্যাত্ব মূল্যায়ন ব্যয়বহুল বা কঠিন নয়
যদি আপনার বয়স ২৫ হয়, যদি আপনি পরিবার শুরু করার জন্য প্রস্তুত হন এবং যদি আপনি আপনার গর্ভধারণের ক্ষমতা যাচাই করতে চান, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। কারণ সফলভাবে উর্বরতা বা বন্ধ্যাত্ব মূল্যায়নের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, বলেন লেভিন। তিনি যোগ করেন, ‘পূর্বে বন্ধ্যা রোগীদের অনেককে সিস্ট, এন্ডোমেট্রিয়োসিস ও অন্যান্য অস্বাভাবিকতার জন্য ডায়াগনস্টিক সার্জারির মধ্য দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে উচ্চ-রেজলুশনের আল্ট্রাসাউন্ড, নির্ভুল রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য ইমেজিং টেকনিকের কারণে কোনো রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয় না, যদি না স্পষ্ট অস্বাভাবিকতা থাকে।’

* উর্বরতা পরিবর্তনশীল বন্ধ্যাত্ব অননুমেয়
উর্বরতা কতদিন থাকবে কিংবা কেমন হবে তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। উর্বরতার পরিবর্তন হতে পারে এবং যে কারো হঠাৎ করে কোনো পূর্বানুমান ছাড়াই বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। উর্বরতার ওপর লাইফস্টাইলের প্রভাব পড়ে। নিয়মিত পিরিয়ড না হলে তা হতে পারে কোনো সমস্যার ইঙ্গিত, আবার এর মানে এটাও হতে পারে আপনি অত্যধিক মানসিক চাপে আছেন। যদি আপনি মা হতে না পারেন, তাহলে টেস্ট করুন। ডা. লেভিন বলেন, ‘উর্বরতার অনেক অ্যাসেসমেন্ট টেস্টের সময়নির্ধারণ ও টেস্টের ধরন দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং আমরা জানি যে লোকজন লাইফস্টাইল পরিবর্তন করলে তাদের উর্বরতার পরিবর্তন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নারী ম্যারাথন ট্রেনিং করেন, তাহলে তার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি তিনি এ ট্রেনিং থামিয়ে দেন এবং তার শরীরে ফ্যাট পুনরুদ্ধার হয়, তাহলে তার স্বাভাবিক চক্র শুরু হতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘নিয়মিত টেস্টিং ছাড়া কোনো সিঙ্গেল টেস্ট দেখে বলা যাবে না যে কারো উর্বরতা উচ্চ, পরিমিত, নিম্ন নাকি ক্ষয়শীল।’

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়