ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আপনার যে ১৩ অনুমান ভুল হতে পারে (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ২ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আপনার যে ১৩ অনুমান ভুল হতে পারে (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : নিজে নিজে স্বাস্থ্য সমস্যা ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় ভুল হতে পারে এবং এমনকি চিকিৎসকদের দ্বারাও রোগ নির্ণয়ে ভুল হওয়া নতুন কিছু নয়। একারণে রোগ শনাক্তকরণের জন্য সবচেয়ে নির্ভুল পদ্ধতি বিবেচনা করা উচিৎ।

ভুল রোগ নির্ণয় মানে ভুল চিকিৎসা আর ভুল চিকিৎসা সৃষ্টি করতে পারে নানা শারীরিক জটিলতা, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। নিজে নিজে ডায়াগনোসিসে ভুল হতে পারে এমন ১৩টি রোগ বা কন্ডিশন নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে আপনার ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত জয়েন্টের সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে, যার ফলে ফোলা ও ব্যথা হয়। কিন্তু অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে আপনার জয়েন্ট ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য কিভাবে নিরূপণ করবেন? ডিগনিটি হেলথ’স গ্লেনড্যাল মেমোরিয়াল হসপিটাল অ্যান্ড হেলথ সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চিফ মেডিক্যাল অফিসার উইলিয়াম এন. ওয়াং বলেন, ‘রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সঙ্গে শরীরের ছোট জয়েন্টের সম্পৃক্ত থাকার প্রবণতা বেশি এবং বামে ও ডানে সমানভাবে প্রকাশ পেতে পারে। একই সময়ে বিভিন্ন জয়েন্ট আক্রান্ত হতে পারে। অন্যদিকে, অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো বয়সজনিত জয়েন্টের ক্ষয়, যা সাধারণত প্রথমে বেশি ব্যবহৃত জয়েন্টে হয়ে থাকে।’ আপনার কন্ডিশন নির্ভুলভাবে ডায়াগনোসিস হওয়া প্রয়োজন, কারণ রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি হলো ওষুধ। ডা. ওয়াং বলেন, ‘আপনি লুপাস, গেঁটেবাত ও সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসকেও রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ভেবে ভুল করতে পারেন।’

* বাইপোলার ডিসঅর্ডার
মেজাজ ও শক্তির অত্যধিক পরিবর্তনের কারণে কি আপনি ভাবছেন যে আপনার বাইপোলার ডিসঅর্ডার আছে? শুধু আপনি নন, আপনার চিকিৎসকও এমনটা ভেবে আপনাকে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এসব ওষুধ আপনার উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যান্য যেসব কন্ডিশন বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে তার মধ্যে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, এডিএইচডি, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা অস্বাভাবিক আচরণের দীর্ঘস্থায়ী প্যাটার্ন এবং মাদকের অপব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

* ক্রনিক সাইনাসাইটিস
ইমার্জেন্সি রুমের চিকিৎসক বা প্রাইমারি-কেয়ার ফিজিশিয়ানরা আপনার মধ্যে ক্রনিক সাইনাসাইটিস শনাক্ত করলেও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার কথা বিবেচনা করুন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ নয় এমন চিকিৎসক দ্বারা শনাক্তকৃত ৯৯ শতাংশেরও বেশি ক্রনিক সাইনাসাইটিস আসলেই এই কন্ডিশন নয়। পুরু ও হলুদ বা সবুজ শ্লেষ্মা, মুখমণ্ডলে চাপ এবং নাকবদ্ধতা হলো অ্যাকিউট সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ যা ক্রনিক সাইনাসাইটিসের ক্ষেত্রেও প্রকাশ পেয়ে থাকে, কিন্তু ক্রনিস সাইনাসাইটিস তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে। এটি নির্ণয় করতে এন্ডোসকপি বা সিটি স্ক্যান প্রয়োজন এবং এর চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভিন্ন, যেমন- দীর্ঘমেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং সম্ভবত ওরাল স্টেরয়েড। অথবা এটি সাইনাসাইটিস নাও হতে পারে- এটি ভাইরাল ইনফেকশন অথবা অ্যালার্জি অথবা মাইগ্রেন অথবা এমনকি টেনশন হেডেকও হতে পারে।

* অ্যাকিউট ব্যাকটেরিয়াল সাইনাসাইটিস
আপনার অ্যাকিউট সাইনাসাইটিস থাকতে পারে (যা প্রতিবছর ৮ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের হতে পারে), কিন্তু ভালো সম্ভাবনা আছে যে আপনার সমস্যার ধরনটা সেটা নয় যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ সাইনাসাইটিস (সাইনাসের প্রদাহ, যার ফলে সর্দি এবং মুখমণ্ডলে ব্যথা ও চাপ অনুভব হতে পারে) ভাইরাল হয়ে থাকে, বলেন ইউএনসি স্কুল অব মেডিসিন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের সদস্য ডানা নিউটজি। তিনি যোগ করেন, ‘উপসর্গ অন্তত ১০ দিন থাকলে আমরা এটিকে ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে সাসপেক্ট করি। ততক্ষণ পর্যন্ত স্যালাইন স্প্রে ও নেটি পট, ওটিসি ডিকনজেস্ট্যান্ট, হিউমিডিফাইয়ার ও বিশ্রামের মাধ্যমে সাইনাসাইটিসের চিকিৎসা করা যায়।’ ডা. নিউটজি বলেন, ‘ভাইরাল সাইনাসাইটিসের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে এই কন্ডিশনের কিছুই হয় না, কিন্তু এটি ডায়রিয়া, ক্লসট্রিডিয়াম ডিফিসাইল নামক সেকেন্ডারি ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট) এবং ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি ব্যাকটেরিয়ার রেজিস্ট্যান্সের কারণ হতে পারে।’

* ক্রনিক কিডনি রোগ
যেহেতু ক্রনিক কিডনি রোগের (সিকেডি) প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ প্রকাশ পায় না, তাই আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ অথবা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে সিকেডি আছে কিনা জানতে টেস্ট করা উচিৎ। শেষপর্যন্ত কিছু উপসর্গ প্রকাশ পায়, যেমন- পা ও মুখমণ্ডলে ফোলা, শুষ্ক ত্বক, মূত্র উৎপাদন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, বমিবমি ভাব এবং মনোযোগ দিতে সমস্যা। তাড়াতাড়ি শনাক্তকরণের গাইডলাইন্সের কারণে সিকেডি ওভারডায়াগনোসিস (অপ্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয়) হতে পারে। অনেক লোকের সিকেডি কখনো পূর্ণ বিকশিত ও লাক্ষণিক কিডনি রোগে রূপ নেয় না। কিডনি বিকল হওয়া ঠেকাতে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এসব অপ্রয়োজনীয় ডায়াগনোসিস অপ্রয়োজনীয় স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, টেস্ট ও চিকিৎসার কারণ হতে পারে।

* ফ্লু
ফ্লুত এত বেশি কমন যে আপনারও ফ্লু হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আপনার ফ্লু’র পরিবর্তে ফ্লু’র মতো অসুস্থতা হওয়ারও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে, যদি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি জ্বর ও কাশি বা গলাব্যথা থাকে। আপনার অসুস্থতা ফ্লু নাকি অন্যকিছু তা নির্ণয় করতে পারে চিকিৎসকের অফিসে ব্যবহৃত নোজ সোয়াব। প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় এটি গুরুত্বপূর্ণ, যদি আপনি অসুস্থতার স্থায়িত্ব কমাতে ও উপসর্গ উপশম করতে টামিফ্লু’র মতো অ্যান্টি ভাইরাল ব্যবহার করতে চান। যদি এটি ফ্লু না হয়, তাহলে আপনার প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) অথবা সাধারণ ঠান্ডা থাকতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়