ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রক্তদানের পর আপনার রক্তকে যা করা হয়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২০ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রক্তদানের পর আপনার রক্তকে যা করা হয়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনার রক্ত তিনজন ভিন্ন রোগের রোগীকে বাঁচাতে পারে। কিভাবে? আপনার রক্ত থেকে তিনটি উপাদান, যথা- লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা ও রক্তরস, পৃথক করা হয় যা তিনজন ভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা লোকের জীবন রক্ষা করতে পারে। কিন্তু তার আগে আপনার রক্তের জন্য রয়েছে কিছু চমকপ্রদ প্রক্রিয়া।

* রক্তকে বরফে রাখা হয়
রক্ত দেওয়া সহজ এবং সাধারণত রক্ত দিতে ১৫ মিনিটের চেয়ে কম সময় লাগে। কিন্তু কারো শরীরে প্রবেশ করানোর পূর্বে আপনার রক্তকে কিছু বিস্ময়কর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। শুরুটা হয় রক্তকে বরফে রাখার মাধ্যমে। রক্তদান কেন্দ্রের কর্মকর্তারা আপনার রক্তের ব্যাগকে একটি কুলারে রাখেন। এটি সেখানে ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রক্রিয়ার জন্য বের করে আনা হয়। উল্লেখ্য যে, কর্মকর্তারা ল্যাবে পরীক্ষার জন্য আপনার রক্তের কিছু অংশ একটি টিউবে নিয়ে রাখেন- প্রত্যেক ডোনারের রক্তের ক্ষেত্রে তারা এটা করে থাকেন।

* রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়
টেস্ট টিউবে সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়- টেকনিশিয়ানরা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ইনফেকশন আছে কিনা খোঁজ করেন। রক্ত পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যদি কোনো ইনফেকশনের জন্য আপনার টেস্ট পজিটিভ হয়, তাহলে আপনার ডোনেশন বাতিল করা হবে। কিন্তু আপনার রক্তে কোনো সমস্যা পাওয়া না গেলে রোগীর জীবন রক্ষা করতে রক্ত প্রক্রিয়াকরণ শুরু করা হবে।

* রক্তকে তিনটি অংশে পৃথক করা হয়
বেশিরভাগ দানকৃত রক্তকে তিনটি সঞ্চালনযোগ্য উপাদানে আলাদা করা হয়: লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা ও রক্তরস, বলেন আমেরিকান রেড ক্রস বায়োমেডিক্যাল ডিভিশনের চিফ মেডিক্যাল অফিসার পম্পি ইয়াং। টেকনিশিয়ানরা রক্তকে উচ্চ গতিতে ঘোরাতে সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করেন এবং উপাদান তিনটিকে পৃথক করেন। ডা. ইয়াং বলেন, ‘এই পরীক্ষা এবং প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ শেষ হতে প্রায় তিনদিন লাগে।’ তিনজন ভিন্ন লোককে বাঁচাতে রক্তের এই তিন উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে।

* লোহিত রক্তকণিকাকে ফ্রিজে রাখা হয়
রক্তের লাল কোষকে পৃথক করার পর রেফ্রিজারেটরে ৪২ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে। লাল রক্তকোষ সঞ্চালনে যেসব রোগী সবচেয়ে বেশি উপকার পেয়ে থাকেন তাদের মধ্যে কিডনি বিকল ও পাকস্থলি-অন্ত্রের রক্তক্ষরণের কারণে ক্রনিক রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এমন লোক এবং ট্রমার কারণে খুব রক্ত হারিয়েছেন এমন লোক অন্তর্ভুক্ত, বলেন ডা. ইয়াং। তিনি আরো বলেন, ‘সিকেল সেল রোগের মতো রক্তব্যাধিতে ভুগছেন এমন লোকদের চিকিৎসায়ও লাল রক্তকোষ বা লোহিত রক্তকণিকা ব্যবহার করা যেতে পারে।’

* রক্তরসকে হিমায়িত করা হয়
মাইনাস ২৭ ডিগ্রিতে ফ্ল্যাশ ফ্রিজারে প্লাজমা বা রক্তরসকে সংরক্ষণ করা হয়। সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে এটি হিমায়িত হয়ে যায়। ডা. ইয়াং বলেন, ‘রক্তদানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রক্তরসকে সংরক্ষণ করলে এর শেলফ লাইফ বা ব্যবহারযোগ্য আয়ু হলো ১ বছর। ট্রমা, বার্ন ও শক, লিভার রোগ এবং মাল্টিপল ক্লটিং ফ্যাক্টর ডেফিশিয়েন্সি বা রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানের ঘাটতিতে ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তরস সঞ্চালন কমন।’

* অণুচক্রিকাকে ট্রেতে রাখা হয়
রক্তরসকে হিমায়িত করা হলেও অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটকে সংরক্ষণ করা হয় স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রায়। অন্তত এক ঘণ্টার জন্য অণুচক্রিকাকে ট্রে এর ওপর রাখা হয়, লক্ষ্য রাখা হয় এ সময়টাতে যেন কোনো অণুচক্রিকার নড়নচড়ন না হয়। টেকনিশিয়ানরা একটি মেশিনে অণুচক্রিকা রাখেন যা জমাটবদ্ধতা প্রতিরোধের জন্য অণুচক্রিকাকে এদিক-ওদিক হালকাভাবে মুভ করায়। ডা. ইয়াং বলেন, ‘অণুচক্রিকার শেলফ লাইফ মাত্র পাঁচদিন। ক্যানসারের চিকিৎসা অথবা সার্জিক্যাল প্রসিডিউরের (যেমন- অঙ্গ প্রতিস্থাপন) ক্ষেত্রে অণুচক্রিকার ব্যবহার কমন।’

* রক্তকে হাসপাতালে পাঠানো হয়
হাসপাতালের চাহিদা মোতাবেক রক্তদান কেন্দ্রগুলো ব্লাড প্রোডাক্ট (লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা, রক্তরস) সরবরাহ করে থাকে। ডা. ইয়াং বলেন, ‘রোগীর রোগ, রক্তের গ্রুপ ও প্রয়োজনীয় ব্লাড প্রোডাক্টের ওপর ভিত্তি করে হাসপাতালই নির্ধারণ করবে তাদের কোন ধরনের রক্ত বা ব্লাড প্রোডাক্ট প্রয়োজন।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন : যে ১৩ কারণে রক্তদান করা যায় না



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়