ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হবে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ৩০ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হবে

কেএমএ হাসনাত : চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, এলএনজি’র নতুন টার্মিনাল স্থাপনসহ গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকারের বিগত দুই মেয়াদে আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ বহু মাইলফলক অতিক্রম করা হয়েছে। সরকার পরিকল্পিত ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০০৭ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার দীর্ঘায়িত প্রভাব ও সময়ে সময়ে উদ্ভুত দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাকে প্রজ্ঞা ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে ধারাবাহিকভাবে ও উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রেকর্ড ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতির যথাযথ সমন্বয়, সার্বিক আর্থিক শৃঙ্খলা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মাধ্যমে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও পাশাপাশি মাথাপিছু আয়, খাদ্য উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিগত দশ বছরে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু  আয় এক হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে আর খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪১৫ দশমিক ১৯ মেট্রিক টন হয়েছে। ২০০৯ সালে তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন দিয়ে শুরু করে ২০১৮ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাইলফলক অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য সরকারি-বেসরকরি বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৫৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং আরো একহাজার ১৯৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি/এলওআই ইস্যু করা হয়েছে।

দেশের জনগণের দোড়গোড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সরকার সঞ্চালন লাইন ও বিতরণ লাইন নির্মাণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১১ হাজার ২৯৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং চার লাখ ৭১ হাজার কিলোমিটার বিতরন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে সিস্টেম লস কমানো, লোড ম্যানেজমেন্ট এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৪৫ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নতুন গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র অনুসন্ধানের কাজ অব্যাহত আছে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়, জনবল নিয়োগ, কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে; ইস্টার্ণ রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২য় ইউনিট স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে বাপেক্স কর্তৃক ১০৮টি কূপ খনন/ ওয়ার্কওভার সম্পাদনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বাপেক্স কর্তৃক ১৭টি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া সমুদ্র অঞ্চলে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের জন্য জরিপসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির ব্যবহার ২০২১ সালের মাধ্যে ১৫ শতাংশ হ্রাস করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে আবাসিক খাতে প্রিপেইড মিটার এবং সিএনজি ও শিল্প খাতে ইভিসি মিটার স্থাপনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর আওতায় ইতোমধ্যে একলাখ ১৫ হাজার ৮৮০টি আবাসিক প্রেপেইড মিটার এবং একহজার ৯৯২টি ইভিসি মিটার বসানো হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা পূরণের জন্য এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে মহেশখালীতে স্থাপিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে প্রথম দফায় দৈনিক ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমান এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি ২০১৯ সালের মে মাস নাগাদ দ্বিতীয় দফায় দৈনিক আরো ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমান এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া মহেশখালী ও পায়রায় দুটি ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চলছে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাখরাবাদ বুস্টার কমপ্রেসার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বোপরি ২০৪১ সাল পর্যন্ত গ্যাসের চাহিদা ও যোগানের পূর্বাভাস বিবেচনায় রেখে ‘গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান’ হালনাগাদ করার কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মার্চ ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়