ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্তনের পিণ্ড যা হতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ১৫ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্তনের পিণ্ড যা হতে পারে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনার স্তনে পিণ্ড অনুভব করছেন? তাহলে এটিকে ক্যানসার ভেবে আতঙ্কে অস্থির হবেন না, কারণ ৮৫ শতাংশ স্তনের পিণ্ড ক্যানসার নয়। যেহেতু স্তনের পিণ্ড ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে, তাই আপনার পিণ্ড আসলে কি তা নির্ণয় করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। এ প্রতিবেদনে স্তনের পিণ্ড ক্যানসার ছাড়াও যা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

* ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা
সবচেয়ে কমন ধরনটি হলো ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা- এটি একটি আলংকারিক শব্দ, যা শুধু পিণ্ডকে বোঝায়, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল প্রিকনসেপশন হেলথ অ্যান্ড হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটের সভাপতি ও নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জিয়ানে কনরি। এই শক্ত, ক্যানসারবিহীন টিউমারটি প্রায়ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল ও তারুণ্যকালে (বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর) এবং বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় স্তনের ভেতর পাওয়া যায়। মায়ো ক্লিনিক এসব পিণ্ডকে সুনির্দিষ্ট আকৃতির শক্ত, মসৃণ বা রবারময় পিণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছে- এগুলো মার্বেলের মতো, যা স্পর্শ করলে ত্বকের নিচে সরে যায়। ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা সাধারণত অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে হাজির হয় না এবং এগুলো দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নয়, বলেন ডা. কনরি। কিন্তু যেকোনো স্পর্শগ্রাহ্য পিণ্ড চিকিৎসক দ্বারা মূল্যায়ন হওয়া উচিত- পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তিনি আপনাকে কেবলমাত্র আশ্বস্ত করবেন অথবা প্রয়োজন মনে করলে ম্যামোগ্রাম বা আল্ট্রাসাউন্ড করবেন।

* সিস্ট
তরলে পূর্ণ ছোট থলেকে সিস্ট বলে, যা একটি বা উভয় স্তনে বিকশিত হতে পারে এবং এসব পিণ্ড শক্ত বা নরম অনুভূত হতে পারে, বলেন ডা. কনরি। এরা ক্ষতিকারক নয়। মেনোপজ পূর্ববর্তী নারীদের মধ্যে এসব পিণ্ড সবচেয়ে বেশি কমন, কিন্তু নারী জীবনের যেকোনো সময়ে এটি বিকশিত হতে পারে। মজার বিষয় হলো, আপনার মিল্ক সিস্টও হতে পারে, যা ম্যামারি ডাক্ট বা দুধনালীতে বিকশিত হয় এবং এটি দুধে ভরা থাকে। সাধারণত সিস্ট নিজে কোনো উপসর্গ প্রকাশ করে না এবং চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারা যদি যথেষ্ট বড় হয় এবং ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে কিংবা স্তনকে বিকৃত করে, তাহলে এগুলোর ভেতর থেকে তরল বের করতে হবে অথবা সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে।

* ঘন স্তন টিস্যু
আপনার স্তনের টিস্যুও পিণ্ডময় হতে পারে। আমাদের সকলের স্তনের আকার ও নিপলের বর্ণ ভিন্ন, আমাদের অনন্য টিস্যুও রয়েছে এবং প্রায় অর্ধেক নারীর স্তনের টিস্যু প্রাকৃতিকভাবে অধিক ঘন- একারণে তাদের স্তনে পিণ্ডের মতো অনুভূতি হয়, বলেন ডা. কনরি। ঘন স্তন টিস্যুর সাধারণ মানে হলো আপনার চর্বি কম এবং কানেক্টিভ ও গ্ল্যান্ডুলার টিস্যু বেশি। প্রাকৃতিকভাবে ঘন বা পিণ্ডময় স্তন টিস্যু নিজে কোনো সমস্যা না হলেও এটি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং স্ক্রিনিংকে একটু কঠিন করে তুলতে পারে। তাই আপনার স্তনে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা ও নিয়মিত চেকআপ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করে থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* ইনজুরি
সম্প্রতি কি আপনার বুকে কোনোকিছুর আঘাত লেগেছে (যেমন- বলের আঘাত, গাড়ি দুর্ঘটনায় আঘাত অথবা অন্যকিছুর আঘাত)? অন্যান্য টিস্যুর মতো স্তনেও আঘাত হলে কালশিটে হতে পারে অথবা ফুলে যেতে পারে এবং কখনো কখনো এটি পিণ্ডের মতো অনুভব হতে পারে। এ পিণ্ডে তীব্র ব্যথা হলে অথবা পিণ্ডটি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে চলে না গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* ফাইব্রোসিস্টিক ব্রেস্ট
নডুলার বা গ্র্যানুলার টিস্যু দিয়ে ফাইব্রোসিস্টিক ব্রেস্ট তৈরি হয়, যা অস্বস্তিকর, পিণ্ডময় বা তন্তুময় অনুভূত হতে পারে। অতীতে এটিকে একটি রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো, কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে অর্ধেকেরও বেশি নারীর জীবনকালে কোনো না কোনো সময় ফাইব্রোসিস্টিক ব্রেস্টের অভিজ্ঞতা হতে পারে, মায়ো ক্লিনিক অনুসারে। এ দশা সাধারণত কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না, কিন্তু কিছু নারী ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, বিশেষ করে মাসিক চক্রের শেষে।

* লিপোমা
লিপোমা হলো ধীরে বিকশিত চর্বিময় পিণ্ড, যার অবস্থান ত্বকের ঠিক নিচে। এসব পিণ্ড সাধারণত নরম, ব্যথা অনুভূত হয় না এবং স্পর্শে নাড়ানো যায়। এগুলো খুব কমন এবং একই সময়ে আপনার একাধিক লিপোমা হতে পারে। অন্যান্য নির্দোষ বৃদ্ধির মতো এসব পিণ্ডও ক্যানসারময় নয় এবং তারা সাধারণত উপসর্গ সৃষ্টি করে না ও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। যদি আপনি বিরক্তি অনুভব করেন, তাহলে সার্জারির মাধ্যমে এসব পিণ্ড অপসারণ করতে পারেন।

* ইন্ট্রাডাক্টাল প্যাপিলোমা
আপনার স্তনে ওয়ার্ট বা আঁচিল বিকশিত হতে পারে। ইন্ট্রাডাক্টাল প্যাপিলোমা হচ্ছে গ্ল্যান্ড টিস্যুর ছোট আঁচিলাকৃতির বৃদ্ধি, যা আপনার মিল্ক ডাক্ট বা দুধ নালীর ভেতর গঠিত হতে পারে। চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে ইন্ট্রাডাক্টাল প্যাপিলোমা সবচেয়ে বেশি কমন। অবস্থানগত কারণ ও নিপল থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণের কারণে এসব আঁচিলকে প্রায়সময় সহজেই শনাক্ত করা যায়। এরা নিজেরা ক্যানসারময় না হলেও একাধিক ইন্ট্রাডাক্টাল প্যাপিলোমা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। তাই এ ধরনের আঁচিল চিকিৎসকের দ্বারা নিয়মিত মূল্যায়ন হওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়