ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রক্তস্বল্পতার ১০ উপসর্গ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১১, ২০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রক্তস্বল্পতার ১০ উপসর্গ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : শরীরের সর্বত্র সরবরাহ হওয়ার মতো যথেষ্ট লোহিত রক্তকণিকা না থাকাকে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বলে। রক্তস্বল্পতার অনেক ধরন রয়েছে এবং রক্তস্বল্পতার বিভিন্ন ধরনের উপসর্গও রয়েছে। যাদের সিকেল সেল অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়ার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তারা জন্মগতভাবেই অ্যানিমিক বা নীরক্ত বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। তারা জেনেটিক্যালি বা বংশগতভাবে লোহিত রক্তকণিকা বা লোহিত রক্তকণিকার কিছু অংশ উৎপাদনের সমস্যা বহন করে। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, কারণ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন বি১২ ও ফোলেট গ্রহণ করেন না- কিন্তু সুস্থ লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য এসবের প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রতিবেদনে রক্তস্বল্পতার ১০টি উপসর্গ আলোচনা করা হলো।

* আপনার প্রায়সময় শ্বাসকষ্ট হয় অথবা মাথা ঘোরে
শরীর পর্যাপ্ত আয়রন বা ভিটামিন বি১২ ছাড়া হিমোগ্লোবিন নামক একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু লোহিত রক্তকণিকার কার্যক্রমের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিন রক্তকে লাল বর্ণ দেয় এবং অক্সিজেনকে কোষের বন্ধনে জড়ায় যাতে কোষসমূহ শরীরের সর্বত্র রক্তপ্রবাহে এটি বহন করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য পর্যাপ্ত আয়রন বা ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে শরীরের কিছু অংশ তাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। এর ফলে রক্তস্বল্পতার উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন- আপনার সহজ কাজেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে অথবা কখনো কখনো অক্সিজেনের পরিমাণ এতই কমে যায় যে আপনার মাথা ঘোরাতে পারে। এটা মনে রাখা ভালো যে, রক্তস্বল্পতা কোলন ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ হতে পারে।

* আপনি খুব বেশি ক্লান্তি অনুভব করেন
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু আর্টজ বলেন, ‘রক্তস্বল্পতার একটি সর্বাধিক কমন উপসর্গ হলো সাধারণ ক্লান্তির অনুভূতি। ক্লান্তি হলো রক্তস্বল্পতার শক্তিশালী উপসর্গ। কিন্তু কে কিভাবে ক্লান্তি অনুভব করবে তার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ এমনিতেই খুব ক্লান্তি অনুভব করে, আবার কেউ কেউ কাজ করার সময় ক্লান্তি অনুভব করে।’ যে প্রক্রিয়া শ্বাসকষ্ট বা মাথাঘোরার দিকে ধাবিত করে তা ক্লান্তিরও কারণ হতে পারে: পর্যাপ্ত আয়রন বা ভিটামিন বি১২ ছাড়া পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হতে পারে না এবং পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন ছাড়া শরীরের জ্বালানির জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না।

* আপনার ত্বক অধিক বিবর্ণ দেখাচ্ছে
যদি আপনার অর্গানসমূহকে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে শক্তি যোগাতে সুস্থ লোহিত রক্তকণিকা না থাকে, তাহলে আপনি আশা করতে পারেন না যে আপনার সবচেয়ে বড় অর্গানটি (ত্বক) সুস্থ দেখাবে। আয়রন বা ভিটামিন বি১২ ছাড়া ত্বকে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হতে পারে না, যার ফলে ত্বক অধিক বিবর্ণ বা ফ্যাকাসে দেখাবে, ইউ.এস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন অনুসারে।

* আপনার বুকে ব্যথা অনুভব হচ্ছে
অল্পসংখ্যক লোহিত রক্তকণিকা সংবহন হলে শরীরের সর্বত্র তাদেরকে পাঠাতে হার্টকে অধিক পরিশ্রম করতে হয়, এর ফলে হার্ট স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত স্পন্দিত হয় এবং এ টানকে আপনি বুক ব্যথা হিসেবে অনুভব করতে পারেন। এটি অবহেলা করার মতো কোনো সমস্যা নয়, বিশেষ করে যদি আপনার অন্যান্য হার্টের সমস্যা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, হার্টকে কঠোর পরিশ্রম করতে হলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, বুক ধড়ফড়, হার্টের বৃদ্ধি অথবা হার্ট বিকলের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

* আপনার পুষ্টিমান নেই এমন খাবারের প্রতি আকাঙ্ক্ষা জাগে
রক্তস্বল্পতার অন্যতম সর্বাধিক অস্বাভাবিক উপসর্গ হলো পিকা অথবা পুষ্টিমান নেই এমন জিনিস খাওয়ার প্রবণতা, যেমন- বরফখন্ড, বেকিং সোডা, মাটি, পেনসিল ও শুকনো রঙ। আরো মজার বিষয় হলো, এখনো পর্যন্ত চিকিৎসক ও গবেষকরা এটা নিশ্চিতভাবে জানেন না যে কেন রোগীরা এসব অস্বাভাবিক জিনিস খেতে চায়। ডা. আর্টজ বলেন, ‘আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতার খুব কমন উপসর্গ হলো পিকা।’

* আপনার হাত ও পা ঠান্ডা
যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার হাত ও পা সচরাচরের তুলনায় শীতল, তাহলে এটি আয়রন ঘাটতি অথবা রক্তস্বল্পতার লক্ষণ হতে পারে। এর কারণ হলো- যখন আপনি রক্তস্বল্পতায় ভুগেন, আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা থাকে না। আয়রন এসব রক্তকোষকে শরীরের অন্যান্য কোষে তাপ ও পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তাই আপনার আয়রনের ঘাটতি থাকলে ঠান্ডা অনুভূতির প্রবণতা বেড়ে যাবে।

* আপনার অস্বাভাবিক হারে মাথাব্যথা হচ্ছে
বেশিরভাগ মানুষের মাঝেমাঝে মাথাব্যথা হয়ে থাকে- এ ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, অসুস্থতা অথবা অন্যান্য কারণ থেকে। কিন্তু যদি আপনার মাথাব্যথা আপনার স্বাভাবিক হারকে অতিক্রম করে, তাহলে সম্ভবত আপনার আয়রনের মাত্রা চেক করার সময় হয়েছে। মাথাব্যথার পরিসর হালকা থেকে মাইগ্রেন পর্যন্ত হতে পারে, তাই হালকা মাথাব্যথা অনুভব করলেও অবহেলা করা উচিত নয়। নিম্নমাত্রার আয়রনের মানে হতে পারে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মস্তিষ্কে পৌঁছাচ্ছে না।

* আপনার অনিয়মিত হৃদস্পন্দন/বুক ধড়ফড় হয়
বুক ধড়ফড় অথবা উল্লেখযোগ্য হৃদস্পন্দন হতে পারে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতার অন্যতম কারণ। হেলথলাইনের মতে, নীরক্ত লোকদের নিম্নমাত্রার হিমোগ্লোবিন থাকে। হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকার একটি প্রোটিন যা শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহন করে। এর মানে হলো পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন ছাড়া অক্সিজেন বহন করতে হার্টকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। একারণে আপনার হৃদস্পন্দন অনিয়মিত বা দ্রুত হতে পারে।

* আপনি গর্ভবতী অথবা আপনার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে
আপনি হয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন খাচ্ছেন, কিন্তু তারপরও আপনি রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, এর কারণ হতে পারে আপনার গর্ভাবস্থা অথবা কোনো অনির্ণীত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে রক্তক্ষরণ। গর্ভবতী নারীদের রক্তস্বল্পতার বিশেষ প্রবণতা রয়েছে, এর কারণ হলো- গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সহায়তা করার জন্য শরীরকে অবশ্যই সচরাচরের তুলনায় বেশি রক্ত উৎপাদন করতে হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত আয়রন, ভিটামিন বি১২ অথবা ফোলেট ছাড়া লোহিতা রক্তকণিকা তেমন একটা তৈরি হতে পারে না। অন্যদিকে গর্ভবতী নয় এমন নারী, পুরুষ ও শিশুদের পরিপাকতান্ত্রিক/আন্ত্রিক সমস্যার কারণে রক্তক্ষরণ হলে রক্তস্বল্পতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যেমন- আলসার, হেমোরয়েড, পাকস্থলির প্রদাহ ও ক্যানসার।

* আপনি নিরামিষ ডায়েট অনুসরণ করেন
যেহেতু চর্বিহীন লাল মাংস ছাড়াও সয়াবিন, গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি ও টফুতে আয়রন থাকে, তাই নিরামিষভোজীরাও তাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন পেয়ে থাকে। কিন্তু শিকাগোর ডায়েটিশিয়ান এলিগ্রা বারটন বলেন, ‘উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে ভিটামিন বি১২ পাওয়া অসম্ভব। তাই নিরামিষ ডায়েট অনুসরণকারীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২ পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো নিয়মিত সাপ্লিমেন্ট সেবন করা।’

রক্তস্বল্পতার উপসর্গ দেখা দিলে কি করা উচিত?
যদি আপনি রক্তস্বল্পতার কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করে থাকেন এবং মনে করেন যে আপনার রক্তস্বল্পতা আছে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন- তিনি সঠিকভাবে নির্ণয় করবেন যে আপনার কোন ধরনের রক্তস্বল্পতা রয়েছে এবং এটি নিরাময়ে কি করা উচিত। ডা. আর্টজ কোনো ওটিসি অ্যানিমিয়া কম্ব্যাটেন্ট কিনতে অনুৎসাহিত করছেন, কারণ সকল ধরনের রক্তস্বল্পতার জন্য একক নিরাময় নেই। রক্তস্বল্পতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ডায়েটে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনের জন্য মূল চাবিকাঠি হলো রক্তস্বল্পতার কারণ বোঝা ও ঘাটতি সম্পর্কে জানা। যদি মনে করেন যে আপনি নীরক্ত, তাহলে আপনার আয়রন ঘাটতির উপসর্গও আছে কিনা লক্ষ্য করা উচিত।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়