ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

৪৮ শিক্ষকের প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৮ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪৮ শিক্ষকের প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচার না হওয়ায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনিক পদ থেকে ৪৮ জনের পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতারা জোর করে পরীক্ষা দেওয়ানোর সময় বাধা দিলে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা। উপাচার্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।

এর মধ্যে দুই জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চার জন ডিন, চার জন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সকল হাউজ টিউটর, সকল সহকারী প্রক্টর রয়েছেন।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেওয়ার পরও এক ছাত্রীকে জোর করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। গত শনিবার দ্বিতীয়বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস উন্নীত হতে পারেনি।

পরীক্ষায় ফলাফল এক দিন আগে ঘোষণা করায় একে অধ্যাদেশবিরোধী উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার সহযোগীদের নিয়ে ঈশিতার পক্ষ হয়ে তাকে জোর করে পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেয়। বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার ওই বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাদের মারার উপক্রম করেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে পরীক্ষা শেষ করায়।

ঈশিতাকে পরীক্ষা শেষ করানোর পর শিক্ষার্থীদের ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় রোববার বিকেল ৪টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিচারের দাবি জানানো হয়। শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দুটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয়।

পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা বের হয়ে এসে হল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে।

অর্ডিন্যান্স হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া ক্লাস পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি ও ফলাফল পদ্ধতি।

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভাইস চ্যান্সেলর অফিস থেকে বৈঠক করে জানান, স্যাররা তাদের আশ্বস্ত করেছেন অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে। তারা সকাল ৯টায় ছাত্র-ছাত্রী স্বাক্ষরিত স্বারকলিপি ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর জমা দেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এরপর ছাত্র-ছাত্রীরা হলে ফিরে যায়।

ছাত্র-ছাত্রীরা চলে যাওয়ার পর ভাইস চ্যান্সেলরের কনফারেন্স রুমে বিচার না পাওয়ার কারণে মধ্য রাতে সকল শিক্ষক একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

রাতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলে ফিরে গেলে সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ছাত্রলীগের নেত্রীরা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানকে জানায়। পরে সজীব ও সাইদুর ছাত্রী হলের ভিতরে প্রবেশ করে ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে সজীব ও সাইদুরকে ছাত্রীরা হল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এসে ছাত্রলীগের নেত্রীদের হলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, ‘‘সঠিক বিচার না পাওয়ায় আজ সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষকরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।’’ 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’’ 

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৮ অক্টোবর ২০১৮/শাহরিয়ার সিফাত/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়