ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তারপরও ভরসা রাখছে বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তারপরও ভরসা রাখছে বিএনপি

এস কে রেজা পারভেজ : সার্চ কমিটিতে দায়িত্বপালনকারীদের ‘আওয়ামী ঘরানার’ অভিহিত করে তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, এর শেষ দেখতে চায় বিএনপি। মুখে সার্চ কমিটির বিরোধিতা করলেও এখনই রাষ্ট্রপতির ওপর ভরসা হারাতে চাইছে না দলটি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, গঠিত সার্চ কমিটিতে জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এই কমিটি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আশা করা যায় না। তবে ভেতরের কথা হচ্ছে, এখনও একটি গ্রহণযোগ্য, সৎ, নিরপেক্ষ ও দলীয় মনোভাবাপন্ন নয়- এমন ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সুপারিশ আশা করেন দলটির নেতারা। এজন্য দলটি শেষ পর্যন্ত দেখতে চায়- সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাদের নাম প্রস্তাব করেন। এরপরই দলীয় অবস্থান স্থির করবে বিএনপি। দলটির রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে, তা ইসি গঠনের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান  নেতারা।

সার্চ কমিটি গঠনের আগে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দেশের ৩১টি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করে তাদের মতামত নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেন তিনি। তাদের সুপারিশ থেকেই অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার।

এদিকে শনিবার সার্চ কমিটির প্রথম সভার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, যে ৩১টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার মধ্যে পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে মতামত নেওয়ার জন্য আগামী সোমবার বিকাল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বসবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা।

সার্চ কমিটি গঠনের পর তা প্রত্যাখ্যান না করলেও বিএনপি বলেছে, এই কমিটির দ্বারা সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করা সম্ভব নয়।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এমন সব ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটিকে নির্দলীয় কিংবা নিরপেক্ষ বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই। আর এমন একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী ও যোগ্য ব্যক্তিরা আগামী নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য হবেন- এমনটা আশা করাও বাতুলতা।’

গঠিত সার্চ কমিটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই কমিটিতে ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছাপূরণে  সহযোগিতা করে পুরস্কৃত এবং আওয়ামী পরিবারের বিশ্বস্ত সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি সার্চ কমিটিকে শুধু বিতর্কিত করেনি- এর মাধ্যমে জনমতকে অগ্রাহ্য করার আরেকটি অগণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।’

এদিকে প্রকাশ্যে সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিএনপি একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের আশা এখনই ছাড়ছে না। দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির সব পরিকল্পনা-কর্মসূচি এখন একাদশতম নির্বাচনকে ঘিরে। সেজন্য শাসক দলকে চাপে রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন এবং ‘সহায়ক সরকারের’ দাবি কতটা আদায় করা সম্ভব তা নিয়েই ভাবছে দলটি। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন না হলে আন্দোলনের যে হুঁমকি তারা দিচ্ছেন- তা কেবল চাপ প্রয়োগের কৌশল। কারণ নিকট ভবিষ্যতে বিএনপির আন্দোলনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করছে সূত্রটি। এজন্য আপাতত সার্চ কমিটির বিরোধিতা করে সরকারকে চাপে রাখতে চায় বিএনপি। এর মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি চাপে থাকবে বলে মনে করছে দলটির নেতারা। তা ছাড়া কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সবমহল থেকে যেভাবে বিতর্ক হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে চাইবে সার্চ কমিটির সদস্যরা। এজন্য গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি ভালো কমিশনের সুপারিশ আশা অপ্রত্যাশিত নয় বলেও মনে করছেন নেতারা।

দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জানান, সার্চ কমিটি নিয়ে অনেকে নিরাশার কথা বলছেন। তারপরও তিনি আশাবাদী।

তিনি আশা করেন, এই কমিটি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এমন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে, যাদের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল না, নেই। জ্ঞান, সততা, গ্রহণযোগ্যতা, দলীয় স্বার্থ-সম্পর্কিত নন, এমন ব্যক্তিদের নাম তারা সুপারিশ করবে। সার্চ কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দলীয় কাউকেও আপনারা সুপারিশ করবেন না।’

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান মনে করেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের বিতর্ক এড়াতে রাষ্ট্রপতির আরেকবার বিএনপির সঙ্গে বসা উচিত।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘আগেরবার যে সার্চ কমিটি হয়েছিল সেখানেও বর্তমান কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে যে নির্বাচন কমিশন আছে তা বরাবরই বিতর্ক থেকেছে। সুতরাং আবার যে একটি বিতর্কিত ইসি হবে না তা কীভাবে বলা যায়?’

তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে যারা এসেছেন, তাদের নাম শুনেই তো আত্মবিশ্বাস চলে গেছে। তবে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। সেজন্য একটি নিরপেক্ষ কমিশন হবে বলে আমরা ভরসা রাখছি। এজন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে বিএনপির সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আরেকবার বসা উচিত, যাতে বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে একটি শক্তিশালী কমিশন করা যায়।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জানুয়ারি ২০১৭/রেজা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়