ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এরশাদের জোটে ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়া সবই নাম সর্বস্ব

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৬ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এরশাদের জোটে ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়া সবই নাম সর্বস্ব

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট আর বিএনপির ২০ দলীয় জোটের মত একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জোটে কারা থাকছেন, তাদের নাম ও জোট ঘোষণার দিনক্ষণ সবকিছুই চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, রোববার এরশাদের নেতৃত্বে নতুন এই রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।

সৃত্রমতে, এরশাদের এই জোটের নাম রাখা হয়েছে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’। জোটে জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগ দিাচ্ছে একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং আর নাম সর্বস্ব অনিবন্ধিত প্রায় অর্ধশতাধিক দলের নেতৃত্বে সম্প্রতি গঠিত পৃথক দুটি জোট। এক কথায় জাপা, ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় ইসলামী মহাজোট ও বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) নিয়ে গঠিত হচ্ছে এরশাদের এই সম্মিলিত জাতীয় জোট।

সংখ্যার বিচারে অনেকগুলো দল নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এরশাদ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বিকল্প জোট গঠন চূড়ান্ত করলেও এই জোট নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে।

বড় দুইজোটের বিকল্প ভাবা হলেও এরশাদের এই জোট তাদের তুলনায় ধামরে কাছে নেই। রাজনীতিতেও তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা মনে করেন।

তাদের ধারণা আওয়ামী লীগের জোটে মঞ্জু’র জাতীয় পার্টি, ইনুর জাসদ, মেননের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, নজিবুল বশরের তরিকত ফেডারেশনসহ যে ১৪ দল রয়েছে সবই নিবন্ধিত, তৃণমূলে নেতাকর্মী আছে এমন সব রাজনৈতিক দল, একইভাবে বিএনপি জোটে কয়েকটি দল ছাড়া বাকী দলগুলোরও নিবন্ধন রয়েছে। সেই তুলনায় এরশাদের জোটে একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে মাত্র একটি। কেবল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। তাদের নেতাকর্মী ও জনসমর্থন রয়েছে। তাদের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। জাপা ও ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়া বাকী সব দলই নাম ও প্যাড সর্বস্ব। অধিকাংশ দল অতি সম্প্রতি গড়ে উঠা। এসব দলের অফিস নেই, নেই তেমন কোনো নেতাকর্মীও। দলগুলো কখনো কোনো জোটের হয়ে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আর নিবন্ধন না থাকায় নাম সর্বস্ব দলগুলো এককভাবে কখনো জাতীয় নির্বাচন করার সুযোগও পায়নি। সব মিলিয়ে এরশাদের এই জোট বড় দুই দলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে কিনা- এই নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি ও শরিক দলগুলোর নেতারা এরশাদের জোট নিয়ে আশাবাদী।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী বলেন, ‘দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে জনপ্রিয়তা তুলনা করলে দুই নেত্রী পিছিয়ে। জেল থেকে দু’বার পাঁচ আসনে জেতার ইতিহাস আছে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের। তাই প্রাক্তন সফল রাষ্ট্রনায়কের নেতৃত্বে যে জোট গঠন হচ্ছে তা নিয়ে আমরা আশাবাদী। জোটগত নির্বাচন করেই আমরা আগামীতে ক্ষমতায় যাবো।’ এই নতুন জোট দেশের বড় দুটি জোটের বিকল্প হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জোটের একমাত্র নিবন্ধিত শরিক দল ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন বলেন, ‘আশাবাদী বলেই আমরা জোট গঠন করছি। দেশ পরিচালনায় বড় দুটি দলই ব্যর্থ হয়েছে, সেই হিসেব করলে জাতীয় পার্টির আমলে মানুষ অনেক ভাল ছিল। একদিকে এরশাদের জনপ্রিয়তা অন্যদিকে ইসলামী ফ্রন্টের আছে ইতিবাচক রাজনীতি। এসব অর্জন সামনে রেখে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে ধারণ করে জোটের ব্যানারে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলেই আমরা সফল হবো। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে যে লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তার প্রতি সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।’

জানা গেছে, নতুন জোটের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। আর জোটের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকবেন দলটির মহাসচিব এবি এম রুহুল আমীন হাওলাদার। তাছাড়া জোটের শরিক দলগুলোর চেয়ারম্যানরা হবেন এই জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতা।

সুত্র জানায়, এরশাদের নতুন জোটে একটি লিয়াজো কমিটি হবে। এই কমিটির প্রধান তথা মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন এরশাদের প্রেস সেক্রেটারি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। কমিটিতে শরিকদলগুলোর মহাসচিবরা থাকবেন সদস্য হিসেবে।

সুত্র আরো জানায়, জোট গঠনের পর থেকে কেউ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, যে কোনো বিষয়ে জোটের বৈঠকে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতভাবে নির্ধারণ করা হবে। আর জোটের কর্মসূচি কিংবাী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে এই লিয়াজো কমিটি।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে জাপা চেয়ারম্যাৈন এরশাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে জোাট গঠনের সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়। জোট গঠনের উদ্দেশ্য, জোট পরিচালনা, জোটের ঘোষণা পত্র এবং জোটের সামনে কি কর্মসূচি হবে সব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার সর্বশেষ চূড়ান্ত করা হয়। এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠনের জন্য তারা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরও করেন।

এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান, মহাসচিব এমএ মতিন, যুগ্ম মহাসচিব সওম আব্দুস সামাদ, বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক।

জাপা ও ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়া লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জোটে অনিবন্ধিত মোট ২১টি আর মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুকের নেতৃত্বে জাতীয় ইসলামী মহাজোটে ৩৪টি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টসহ এরশাদের এই জোটে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৭টি। 

জাতীয় পার্টির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, জীবনের শেষ বয়সে এসে যে কোন মূল্যে আরেকবার ক্ষমতায় যেতে চান প্রাক্তন সেনা প্রধাীন এরশাদ। যদি ক্ষমতায় যেতে না পারেন যেন তিনি ক্ষমতার ভাগ কিংবা আমৃত্যু রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকতে পারেন- এসব চিন্তা করেই দেশি বিদেশি বন্ধু মহলের পরামর্শে তার এই জোট গঠন। যাতে নির্বাচনের আগ থেকে খুব সহজে এরশাদ প্রভাবশালী দেশি বিদেশি বন্ধুদের সুনজরে পড়েন, সহযোগিতা পান।

তাছাড়া আগামী নির্বাচনে কোনো কারণে যদি বিএনপি না আসে এক্ষেত্রে বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেবেন এরশাদ। এ কারণে তিনি নির্বাচনের আগে বয়োবৃদ্ধ জীবনে একটি নতুন জোট গঠন করছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৭/নঈমুদ্দীন/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়