ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ২৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ‘ব্যবসাবান্ধব বাজেট’ প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছে। এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রাখতে একটি ব্যবসাবান্ধব বাজেট সময়ের চাহিদা।

এক্ষেত্রে বাজেটকে সামনে রেখে বিভিন্ন চেম্বার ও প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ণের আহবান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

‘কেমন বাজেট চাই’ বিষয়ে দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে আলাপকালে এ সব বিষয় উঠে আসে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজেটে আমাদের উপর যেন কোন চাপ বা বাধার সৃষ্টি না হয়। কারণ, ব্যবসা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে দেশের সমগ্র অর্থনীতির উপর তার প্রভাব পারবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প (এসএমই) খাতের উন্নয়নে, নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি, সেগুলোতে গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ, পণ্য আমদানি, রপ্তানি ও সকল ক্ষেত্রে বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা যেন থাকে আমরা সেটি চাইছি।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাজেট কেমন হওয়া উচিত এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দিয়েছি। মূলত, আমরা এমন একটি বাজেট চাচ্ছি যেখানে ব্যবসায়ীদের জন্য কোন চাপ সৃষ্টি না হয়। তারা যেন দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সব সময়ের মত বড় ধরনের অবদান রাখতে সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে- এই আশাই করছি।

তবে আমাদের বড় আশা হচ্ছে, এবার বাজেটে ভ্যাটের হার কমানো। এটি আমাদের আশা অনুযায়ী কমানো হলে ব্যবসা করতে সুবিধা হবে। এছাড়া রপ্তানিতে উৎসাহিতকরণ ও প্রতিযোগিতায়  টিকে থাকার ক্ষেত্রে পোশাক খাতসহ সকল রপ্তানি পণ্যে উৎসে কর ০ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০ দশমিক ৫ শতাংশ ধার্য্য করা হবে বলে আশা করছি আমরা।’

দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বর্ধিত হারে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে বর্তমান শুল্কস্তর ১ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ নতুন বাজেটে অব্যাহত রাখা, বর্তমানে ট্যারিফ সিডিউলে ৩১২টি পণ্যের উপর যে শূন্য শতাংশ শুল্ক আছে তা আগামী অর্থবছরে অব্যাহত রাখা ও যে ৭টি পণ্যের ক্ষেত্রে স্পেসিফিক ডিউটি নির্ধারণ করা আছে তা অব্যাহত রাখা হবে বলে আশা করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসএমই খাতের উন্নয়নে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে আলাদা নির্দেশনা থাকবে বলেও আশা করছি আমরা। তবে আমরা এ খাতের উন্নয়নে আলোচনা শুরু করেছি। এসএমই ফাউন্ডেশন, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথাও হয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা করার জন্য অনেক আন্তরিক।’

এফবিসিআইয়ের সদ্য বিদায় নেয়া সভাপতি মাতলুব আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সরকার থেকে আলাদা নন। কারণ, সরকার যে ২০২১ ও ২০৪১ ভিশন বা লক্ষ্য স্থির করেছে সেখানে দেশের ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা চাচ্ছি ব্যবসায়ীরা যেন সুন্দর পরিবেশে, কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন এমন বাজেট।’

কেমন প্রতিবন্ধকতা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে বাজেট ঘোষণার পরে বুঝতে পারা যাবে যে, কোন কোন বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এখন বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা অনেকটাই আশাবাদী যে, বাজেট ব্যবসাবান্ধব হবে।

এছাড়া আশা করছি সঞ্চয়, মূলধন গঠন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যক্তি করদাতার প্রদর্শিত নিট পরিসম্পদের ভিত্তিতে সারচার্জের শূন্য শতাংশের সীমা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর আশা করছি। গ্রস প্রফিটের (জিপি) যে বিষয়টি রয়েছে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাগণ গতানুগতিক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না এবং করদাতাগণ নানাবিধ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করদাতা ও কর কর্মকর্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে যৌক্তিক ও স্ট্যান্ডার্ড গ্রস মুনাফা হার নির্ধারণের জন্য বাজেটে সঠিক গাইডলাইন বা দিক-নির্দেশনা চাচ্ছি আমরা।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘এসএমই খাতের উন্নয়নে ২০১৭-১৮ বাজেটে এসএমইবান্ধব করনীতি প্রণয়ন করা এবং শিল্প ও জিডিপির হার ২৯ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো উচিত।’

তিনি কর্মসংস্থানের হার ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো, শিল্পনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ এবং নির্দেশনার কথাও বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ীদের বর্তমানে টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ২০ লাখ টাকা, খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ পর্যন্ত ৩ শতাংশ করা হলে ব্যবসা পরিচালনা সহজতর হবে। তাই আমরা চাচ্ছি এ সকল কিছু চিন্তা করে ব্যবসায়ী ও জনগণের কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয় এমন একটি সুন্দর বাজেট প্রকাশ করা হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মে ২০১৭/নাসির/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়