ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খেজুর বাজার নিয়ন্ত্রণে জোট বেঁধেছে আমদানিকারকরা

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৬ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেজুর বাজার নিয়ন্ত্রণে জোট বেঁধেছে আমদানিকারকরা

আসাদ আল মাহমুদ : পবিত্র রমজান শুরুর আগেই রাজধানীর বাদামতলীতে খেজুর বাজার নিয়ন্ত্রণে জোট বেঁধেছেন আমদানিকারকরা।

পাইকারি–খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, রমজানে দেশের বাজারে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। সারা দেশে বছরে যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয় তার অধিকাংশ রমজান ও আগের দুই মাসে বিক্রি হয়। এ কারণে আমদানিকারকরা জোট হয়ে ইচ্ছেমতো খেজুরের দাম নির্ধারণ করেন।

পর্যাপ্ত খেজুর থাকলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের দুই মাস আগ থেকেই আমদানিকারকরা খেজুরের দাম নির্ধারণ করেন। বাধ্য হয়ে পাইকারী-খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রি করেন। এক মাস আগে ইরানের মরিয়ম খেজুর গ্রেড-১ পাঁচ কেজির কার্টন ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও এখন ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি খেজুর বাজার বাদামতলীতে পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা এসব কথা বলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাদামতলী থেকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দক্ষিণ অঞ্চলে খেজুরসহ বিভিন্ন ফল নেন পাইকারি- খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাদামতলীতে খেজুরের ব্যবসায়ী (আড়তদার) ৪০ থেকে ৪৫ জন। বাজারে খেজুরের সরবরাহ কত হবে এবং দাম কেমন হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে আমদানিকারকদের ওপর। ইরাক, ইরান, তিউনেশিয়া, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ভারত থেকে খেজুর আমদানি করেন তারা।

আমদানিকারকরা পণ্য (খেজুর) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। কিছু খেজুর চট্টগ্রামের কাপ্তানবাজারে পাঠান। খেজুর ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা অন্যত্র যেখানে পাঠানো হোক না তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করা হয়।

খেজুর আমদানি করেন বাদামতলীর এস এম এন্টারপ্রাইজের সিরাজুল ইসলাম, তানভীর এন্টারপ্রাইজের রাসেল হোসেন, খাজা ফ্রুটের হাজি বয়রাত হোসেন, আল্লাহর দানের মালিক হাজি আফসার আলী, শাকিল ফ্রুটসের মালিক হাজি শামসু হাওলাদার, জিল্লুর এন্টারপ্রাইজের জিল্লুর রহমান, নাবিল এন্টারপ্রাইজের হাজি মনির হোসেন, মদিনা ফ্রুটের মালিক সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম, বাগদাদ ও জয়া এন্টারপ্রাইজের হাজি সাজাহান। তারা ইচ্ছেমতো খেজুরের দাম নির্ধারণ করছেন।

কথা হয় পাইকারি খেজুর ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক মাস আগে প্রতি কেজি ইরানের মরিয়ম গ্রেড-১ পাঁচ কেজির কার্টন ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও এখন ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মরিয়ম গ্রেড-২ ৭০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ১০০০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। বরই খেজুরের পাইকারি ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২০০-২৪০ টাকায় (মানভেদে) বিক্রি হচ্ছে। তিউনিশিয়ার পাঁচ কেজির প্যাকেট খেজুর আগে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ৫০০-৬০০ টাকা (মানভেদে) দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের খেজুরের কার্টুনে ৩০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান তিনি।

বাদামতলীর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী না প্রকাশ না করে বলেন, খেজুরের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন আমদানিকারকরা। আমদানি করা খেজুরের বড় অংশ মজুদ করা হয় সোয়ারীঘাট এলাকার চান কোল্ড স্টোরেজসহ কয়েকটি স্টোরে। খেজুরের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আমদানিকারকরা ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করেন। এদের ছাড়া নতুন করে কোনো ব্যবসায়ী খেজুর আমদানি করতে পারছেন না। তাই তারা তাদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন।

খেজুর আমদানিকারক ও খাজা ফ্রুট স্টোরের মালিক হাজি বরাত মিয়া বলেন, ‘রমজান ছাড়া অন্য সময় খুব কম খেজুর বিক্রি করা হয়। আমরা যেভাবে আমদানি তার চেয়ে সামান্য লাভে বিক্রি করি। খেজুর বাজারের কোনো নিয়ন্ত্রক নেই।’

জানুয়ারির তুলনায় সব ধরনের খেজুরের কার্টনে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি কার্টনে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা বেশি দামে আমদানি করায় এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৭/আসাদ/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়