ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে হচ্ছে পৃথক স্ক্যানিং বিভাগ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২৪ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রাম বন্দরে হচ্ছে পৃথক স্ক্যানিং বিভাগ

এম এ রহমান : চট্টগ্রাম বন্দরে শতভাগ কনটেইনারকে স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনতে পৃথক স্ক্যানিং বিভাগ চালু করতে যাচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমসে যুক্ত হতে যাওয়া স্ক্যানিং বিভাগে থাকবে দক্ষ টেকনিশিয়ানসহ ১৮৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্দরের ১২টি গেটের জন্য ১২টি স্ক্যানার মেশিন, ১০টি বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র, ৩৭টি কম্পিউটার, প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি, মাইক্রোবাস, টেলিফোন ও আনুষঙ্গিক সব সুবিধা।

এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে চলতি বছরেই প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হবে। স্ক্যানিং বিভাগ হলে স্ক্যানার সংকট সমাধান ও কনটেইনারজট অনেক কমবে বলে মনে করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।

স্ক্যানিং বিভাগের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বিভাগ চালু করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস তার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রস্তাবটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। জনপ্রশাসনের মতামত পেলে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। পরে মন্ত্রিসভা ও সর্বশেষ সচিব কমিটিতে চূড়ান্ত হবে। আমরা চাচ্ছি, দ্রুত সময়ে মধ্যে এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হোক।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পণ্যবাহী ৫৫ শতাংশ কনটেইনারকে স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না স্ক্যানারের অভাবে। শতভাগ কনটেইনারকে স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনতে ২০১৬ সালের শেষদিকে স্ক্যানিং বিভাগের কাঠামো অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও এনবিআরে পাঠানো হয়। এতে ১৮৩ জন লোক নিয়োগ, ১২টি গেটের জন্য ১২টি স্ক্যানার মেশিন, ১০টি বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র, আটটি মাইক্রোবাস, ৩৭টি কম্পিউটারসহ সিসিটিভি, টেলিফোন ও আনুষঙ্গিক আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে বলা হয়।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, স্ক্যানিং বিভাগের কনটেইনার স্ক্যানিং ও বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র পরিচালনার জন্য একজন অপারেশন ম্যানেজার, একজন কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার, একজন সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর থাকবেন। প্রতিটি বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র পরিচালনার জন্য দুজন কম্পিউটার অপারেটর ও দুজন ট্রাফিক কো-অর্ডিনেটর (সমন্বয়কারী) পদ রাখা হয়েছে। মোট ৮০ জন কম্পিউটার অপারেটর ও ৮০ জন ট্রাফিক কো-অর্ডিনেটরসহ পুরো বিভাগে মোট ১৮৩ জন চার শিফটে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টির গেটের মধ্যে মাত্র চারটিতে স্ক্যানার আছে। এসব স্ক্যানার দিয়ে সব কন্টেইনার স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া স্ক্যানিং বিভাগে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় সার্বক্ষণিক তদারকি করাও সম্ভব নয়।  এজন্য আমরা একটি স্ক্যানিং বিভাগের প্রস্তাব দিয়েছি। যেখানে টেকনিশিয়ানসহ  ১৮৩ জন লোক নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। দেশ ও বন্দরের নিরাপত্তার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে এ স্ক্যানিং বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। যা বাস্তবায়ন হলে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কাজে গতি বাড়বে।

চট্টগ্রাম কাস্টস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় অঘোষিত ও বিস্ফোরক জাতীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়। বাধ্যতামূলক হলেও শুরু থেকেই স্ক্যানার সংকটে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারগুলোকে স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। গত সাড়ে পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্ক্যানিং সংকটের কারণে কোনো ধরনের স্ক্যানিং বা তদারকি ছাড়াই ছাড়করণ এবং জাহাজীকরণ হয়েছে ৩৭ লাখ ৮১ হাজার রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার, যা মোট হ্যান্ডলিং হওয়া কনটেইনারের প্রায় অর্ধেক।

চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানিংয়ের দায়িত্বে থাকা সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান এসজিএসের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ১ হাজার ৫৯৪টি কনটেইনার স্ক্যানিং করা হয়েছে। এর মধ্যে সন্দেহজনক পণ্য আনার অভিযোগে আটক হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৮টি কনটেইনার। এসব কনটেইনারে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আনার পাশাপাশি বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য থাকার প্রমাণ পাওয়ায় মামলাসহ জরিমানা আদায় করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৭/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়