ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এক হতে চায় খেলাফত আন্দোলন

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ৫ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এক হতে চায় খেলাফত আন্দোলন

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আবারো এক হতে চায় হাফেজী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। দলের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে দু’টুকরো হয়ে যাওয়া পুরোনো এই দলটি এখন এক প্ল্যাটফর্মে আসতে চায়।


হাফেজী হুজুরের পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। মধ্যস্থতা করছেন তারা নিজেরাই। তাদের মধ্যস্থতায় ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বাধীন অংশ থেকে দলটির মহাসচিব মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ আশরাফ পদত্যাগ করেছেন। দুই খেলাফত কখন কীভাবে এক হবেন তার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা চাইছেন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিল করে গণতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব ঠিক করতে। সেই কর্মকৌশল নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হাফেজী হুজুরের পরিবারের সদস্যরা।

ঐক্য প্রক্রিয়ার কথা স্বীকার করে পদত্যাগী খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুহিব্বুল্লাহ আশরাফ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দুই খেলাফতকে এক করার জন্যই আমি দলের মহাসচিব পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আমি দলের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে সবাই মিলে একটি শক্তিশালী খেলাফত আন্দোলন গঠন করতে পারি।’

দুই খেলাফতের ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলন হাফেজি হুজুরে প্রতিষ্ঠিত দল। নিজেদের কারণে দলটি দু’টুকরো থাকবে- এটা কেউ মন থেকে নিতে পারে না। তাই খেলাফতকে এক করার জন্য বিবাদমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হাফেজী হুজুরের পরিবারের সিনিয়র সদস্যরা উদ্যোগ নিয়েছেন। জাফরুল্লাহ খানের খেলাফতের মহাসচিব থাকাকে তারা ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য বাধা মনে করছেন, তাদের ইচ্ছাতেই ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য আমি এই পদ ছেড়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম না মেনে ইচ্ছামত কমিটি করায় আমরা দলের প্রবীন নেতা মাওলানা জাফরুল্লাহ খানকে আমির করে আরেকটি কমিটি গঠন করেছিলাম। এখন মুরব্বিরা যখন সবকিছু মেনে সবাইকে নিয়ে নতুনভাবে কমিটি করার চিন্তা করছেন তাহলে খারাপ কি। আর এতে দলের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের সায় আছে।’

তবে শেষ পর্যন্ত খেলাফতের ঐক্য প্রক্রিয়া কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে খেলাফত আন্দোলনের একাংশের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘প্রয়োজনে দলের আর কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেবেন এবং সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।’

রাইজিংবিডিকে জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘মহাসচিব নিজের সিদ্ধান্তেই পদত্যাগ করেছেন। আমাকে জানানো হলে আমি বলেছি, আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, আপনি যা ভাল মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘যে ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য মহাসচিব পদত্যাগ করেছেন বলে বলছেন, সেটা হলে তো খুবই  ভাল। আমরাও চাই সবাইকে নিয়ে সবার সম্মতিতে কাউন্সিল করে নেতৃত্ব ঠিক করতে। তবে আমার মনে হয় না এই ঐক্য বাস্তবায়ন হবে; কারণ, মাওলানা আতাউল্লাহর আচার আচরণ অনেক নেতাকর্মীর অপছন্দ। দলের নেতা নির্বাচন করবেন নেতাকর্মীরা, এই সাংগঠনিক নিয়ম মানার মতো লোক উনি না।’ খেলাফত ভাঙ্গার জন্য মাওলানা আতাউল্লাহকে দায়ী করছেন জাফরুল্লাহ খান।

জানা গেছে, খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে হাফেজী হুজুরের পরিবারের মধ্যে বিরোধ। সর্বশেষ হাফেজী হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ অসুস্থ্য হওয়ার পর থেকে এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে খেলাফত আন্দোলনের আমির আহমাদুল্লাহ আশরাফ ও তার মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের কমিটি ভেঙে দিয়ে তার ছোটভাই মাওলানা আতাউল্লাহকে আমির, মাওলানা জাফরুল্লাহ খানকে উপদেষ্টা ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজিকে মহাসচিব করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

কিন্তু মূল নেতৃত্ব থেকে আহমাদুল্লাহ আশরাফ ও জাফরুল্লাহকে সরিয়ে দেওয়ায় তাদের অনুসারি নেতাকর্মীরা সেটা মেনে নিতে পারেননি। সাংগঠনিক নিয়ম না মেনে নিজেকে আমির ঘোষণা করায় হাফেজী হুজুরের পরিবারের মধ্যে দলের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের এক পর্যায়ে খেলাফত আন্দোলন ভেঙে যায়।

প্রায় পাঁচমাস আগে মাওলানা জাফরুল্লাহ খানকে আমির ও মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফের দ্বিতীয় ঘরের ছেলে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ আশরাফকে মহাসচিব করে আরেকটি খেলাফত আন্দোলনের কমিটি গঠন করা হয়।

বর্তমানে খেলাফতের অপর যে কমিটি রয়েছে তার আমির আতাউল্লাহ হলেন পদত্যাগী মুহিবুল্লাহ আশরাফের আপন চাচা আর মহাসচিব হাবিবুল্লাহ মিয়াজি হলেন বৈমাত্রেয় ভাই। দুই কমিটি পৃথকভাবে সাংগঠনিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই দুই খেলাফতকে এক করতে চান দ্বন্দ্বে লিপ্ত হাফেজী হুজুরের পরিবারের সদস্যরা। না হলে জাতীয় রাজনীতিতে দলটি যেমন গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছেও হাফেজী হুজুরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে মনে করেন তারা।

তাদের মতে, হাফেজী হুজুরের ইমেজের উপর ভর করে ঠিক আছে খেলাফত আন্দোলন। তার বড় ছেলে মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফও আমির হিসেবে দলের নেতৃত্ব দিয়ে সেই ইমেজ ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।

ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হাফেজী হুজুরের পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যতই মতানৈক্য থাকুক না কেন, খেলাফত আন্দোলনকে বিভক্ত করার সুযোগ নেই। কারণ, সবাই হাফেজী হুজুরের আদর্শের অনুসারি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেতৃত্ব ঠিক করবো।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ আগস্ট ২০১৭/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়