ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সুযোগের অপেক্ষায় বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুযোগের অপেক্ষায় বিএনপি

এস কে রেজা পারভেজ : দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে সুযোগ খুঁজছে ঘুরে দাঁড়ানোর।

দীর্ঘদিন সংকটে থাকা বিএনপি এখন তাকিয়ে আছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। ওই নির্বাচন ঘিরেই এখন দলটির সব রাজনৈতিক কার্যক্রম।

দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিএনপির এই খারাপ সময় নতুন নয়। অতীতেও বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং সফলও হয়েছে। এক্ষত্রেও তারা ব্যর্থ হবেন না। যদিও কাজটি সহজ হবে না, তবুও বিএনপি সঠিক পথেই আছে বলে মনে করছেন তারা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের এক পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেন, যা পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপিতে রূপান্তরিত হয়।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। দলের বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৪ বছর ধরেই দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে আছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে লন্ডনে বসবাসকারী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবদান রাখছেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে দলটি প্রথমবারের মতো সংকটে পড়ে। তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সাময়িকভাবে সরকার ও দলের হাল ধরলেও ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। বিচারপতি সাত্তারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বিএনপি প্রকৃত অর্থেই অস্তিত্ব-সংকটের মুখে পড়ে। মওদুদ আহমদসহ বিএনপির অনেক নেতাই জেনারেল এরশাদের সরকারে যোগ দেন। দলের সেই সংকটকালে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।

জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভূমিকা দলটিকে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আনে বলে মনে করা হয়। এরপর ২০০১ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে দলটি। রাজনীতিতে আসার পর খালেদা জিয়া মোট চারবার গ্রেপ্তার হলেও ১/১১ এর মতো সংকটে পড়েনি বিএনপি। সর্বশেষ ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে সেই সময়ের চাপের মুখেও সংকট সামাল দিতে পেরেছে দলটি।

বর্তমানে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩০টি মতো মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দুদকের করা মামলা, বাকি মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা, নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও ১৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মানহানির একটি মামলায় লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। একই ভাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা আগামী একাদশতম নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না- তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে অসংখ্য মামলা মোকাবিলা, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করা, নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’র দাবি আদায় দলটির জন্য এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, বিএনপি সংকটে থাকলেও শিগগিরই এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে জনপ্রিয় অবস্থায় রয়েছে বলেও মনে করছেন তারা। এই অবস্থান ধরে রেখে একাদশতম নির্বাচনে বাজিমাত করতে চায় দলটি।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করে সমসাময়িক ইস্যুগুলোতে সোচ্চার হতে চায় বিএনপি। বিভিন্ন ঘটনাটপ্রবাহে সরকার যে অস্বস্তিতে বা চাপে রয়েছে সেটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে দাবি আদায়ের স্বার্থে ক্ষমতাসীনদের আরো বেশি চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি। এর পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী হওয়ার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এক কোটি সদস্য টার্গেট করে চলছে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। কিছুদিন আগে শেষ করেছে বিএনপির তৃনমূল পুনর্গঠনের কাজ। এরই মধ্যে প্রায় সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব এনেছে বিএনপি। এখন সময় সুযোগ মতো সহায়ক সরকারের দাবি তুলে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেবে দলটি।

বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যে আন্দোলন করছে তা ব্যর্থ হবে না। কারণ জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। জাতীয়তাবাদী দর্শনকে ধারণ করে বিএনপির জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করছে।

৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান মূল্যায়ন করতে গিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে বা জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলেও দেশে এখন গণতন্ত্র বা সেই চেতনা নেই। সুশাসনের পরিবর্তে দুঃশাসন চলছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীতে সেই গণতন্ত্র ফেরানো আর জনগণের ভোটাধিকার ফেরানোর শপথ থাকবে।

বিএনপির নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি গত ১০ বছর যে আন্দোলন করছে তা বৃথা যাবে না। এর আগেও বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে সফল হয়েছে, এবারও হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অধিকার আদায়ে জনগণকে বিএনপির পাশে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সকল মানুষের কাছে আবেদন জানাতে চাই, বর্তমানে যে মানুষের অধিকার বিলুপ্ত হচ্ছে সে অবস্থার পরিবর্তনে বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকার ধূলিসাৎকারীদের পরাজিত করতে হবে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে আরো দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রেজা/এনএ/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়