ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিএনপিকে

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিএনপিকে

এস কে রেজা পারভেজ : দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি ডিঙিয়ে ঢাকায় বিএনপির জনসভায় নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফূর্ত জমায়েত আর উচ্ছ্বাসের চিত্র নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে দলটিকে। সমাবেশে প্রত‌্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া এসেছে দাবি করে দলটির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, এটি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের এক ধরনের প্রতিবাদ।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দল ক্ষমতায় নেই। এক-এগারোর পর থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের শাসনামল পর্যন্ত হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারে নাজুক অবস্থা নেতাকর্মীদের। এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কর্মসূচি সার্থক করতে তারা (নেতাকর্মী) যা করেছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

তারা বলেন, ‘রোববারের সমাবেশের আগে যে ধরনের বাধাবিপত্তি এসেছে তারপরও জনসভায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি প্রত‌্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখার জন্য দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কক্সবাজার যাওয়ার সময় পথে মানুষের যে ঢল নেমেছিলো তাকেও বিএনপির জনপ্রিয়তার প্রতীক হিসেবে দেখতে চাইছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। অনেকদিন পর সুযোগ পাওয়ায় মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বলে ধারনা তাদের।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস‌্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে মানুষের যে উপস্থিতি ঘটেছে এটি সময়ের দাবি। জনগণের এই সমাগম সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ। তারা অনেকদিন পর সুযোগ পেয়ে তাদের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে। এজন‌্য শত বাধা স্বত্বেও মানুষের স্রোত ঠেকানো যায়নি। ঠিকই জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে সমাবেশ।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ ভবিষ‌্যতে সুযোগ পেলে তাদের ক্ষোভের চুড়ান্ত বহি:প্রকাশ ঘটাবে ভোটেও। কারণ, সরকার গত কয়েক বছরে যে অনৈতিক কাজগুলো করেছে মানুষ তার রায় দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।’

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটি জনগণের- মন্তব‌্য করে বিএনপির  এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এই দাবিটি বিএনপির নয়, এটি আওয়ামী লীগ, জামায়াত এবং এরশাদের। তৎকালীন সময়ে তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই সংবিধানে না থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তা সংসদে পাশ করেছিলেন। সেই দাবিটিই আমরা করছি। আর আমাদের দাবির প্রতি জনগণের যে স্বত:স্ফুর্ত সমর্থন আছে তা কয়েকটি কর্মসূচির গনজমায়েতে প্রমাণ হয়েছে।’                

বিএনপির অন‌্যতম ভাইস চেয়ারম‌্যান শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন ‘বিশাল গণসমাবেশের’ মাধ‌্যমে মানুষ সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি আর লুটপাটের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘এখন দেশে আইনের শাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। নিত‌্যপ্রয়োজনীয় দ্রব‌্যমূল‌্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আর বিচারবিভাগ নিয়ে সরকার সর্বশেষ যে নজির স্থাপন করেছে সে ব্যাপারেও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছে মানুষ বিএনপির জনসভায় যোগদানের মধ্য দিয়ে।’

গণজমায়েত বিএনপির প্রত‌্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে মন্তব‌্য করে দলটির এই উচ্চ পর্যায়ের নেতা বলেন, ‘সরকার যদি জনগণের মনের ভাব বোঝে, তাহলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব‌্যবস্থা করবে। আর যদি তারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে জনগণও সেটার জবাব দিতে জানে।’   

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থানের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন দেশে ফিরেছেন, তখন থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব তৈরি হয়েছে। এর রেশ কক্সবাজার সফর এবং সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশে পড়েছে বলে মনে করছেন দলটির থিংকট্যাঙ্ক। এই ধারা ধরে রাখতে ঢাকার বাইরে বিএনপি নেত্রীর একাধিক সফরের কথা ভাবছেন তারা। অন্তত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে একটি সমঝোতার আগ পর্যন্ত দলীয় প্রধানের এই ধরনের কর্মসূচি সারাদেশের নেতাকর্মীদের আন্দোলিত করবে বলে মনে করেন তারা।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণাকে সামনে রেখে এসব সফর হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সড়কপথে সফর করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙা করাই এর মূল লক্ষ্য।

বিএনপি নেতাদের পর্যবেক্ষণ হলো, খালেদা জিয়ার উখিয়া সফরের কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় বড় সমাবেশ আয়োজন এবং তাতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি আলোচনায় আসতে সরকারকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ধরনের সংঘাতময় রাজনীতিতে যেতে চাইছে না দলটি। বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে জনগণের দোড়গোড়ায় বার্তা পৌঁছাতে তাদের সঙ্গে মিশে যেতে চায় দলটি। বিএনপি চায় অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পক্ষে একটি বিপ্লব ঘটাতে। এজন্যই ঐক্যের রাজনীতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া।

রোববারের সমাবেশেও তিনি সরকারকে আলোচনায় বসে ঐক্যের রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানান। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপি সাংঘর্ষিক রাজনীতির পরিবর্তে ঐক্যের রাজনীতি চায়। দেশের মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে চায়। সংঘর্ষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু আলাপ আলোচনা ছাড়া তা সম্ভব নয়। আমরা এমন এক সংসদ দেখতে চাই যার জবাবদিহিতা থাকবে, যেখানে সরকারি দল ও বিরোধী দল মিলে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৭/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়