ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ফেব্রুয়ারি থেকে সব মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফেব্রুয়ারি থেকে সব মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা

হাসান মাহামুদ : পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। এরইমধ্যে কিছু সরকারি হাসপাতালে এ সেবা নিশ্চিত হয়েছে। আগামী ২০১৮ সাল থেকে বিষয়টি পুরোদমে কার্যকর হতে যাচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভাবেন। ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন। তবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হবে। এজন্য আলাদা বরাদ্দও হতে পারে।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত এক বৈঠকে দেশের সরকারি সব হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, ২ লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে এ নির্দেশ কার্যকর করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে কোনো মুক্তিযোদ্ধা রোগী গেলে তার চিকিৎসা প্রদানে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই চিকিৎসা হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এমনকি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বিনামূল্যে করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সব হাসপাতালের পরিচালককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, এই প্রসঙ্গে একটি নির্দেশনা আগেও ছিল। কিন্তু এ নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা কম ছিল। এবার দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও হাসপাতালের মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবোরের সদস্যদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও অনুরোধ জানানো হবে। যাতে দেশের এসব বীর সন্তানদের চিকিৎসাবঞ্চিত হতে না হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তিসহ যেকোনো প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। চিকিৎসা প্রদানে তাদের প্রতি অবহেলা করা চলবে না।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে সকল সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। তা হতে হবে অতি গুরুত্বের সঙ্গে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদানে কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতাল অবহেলা প্রদর্শন করতে পারবে না।

বর্তমানে গেজেট আকারে প্রকাশিত তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার। সরকারের বর্তমান ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে এসব মুক্তিযোদ্ধা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন। এর বাইরে গত ৪৬ বছরে দেশে বিভিন্ন তালিকা হয়েছে। কিন্তু সরকারের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের এখন পর্যন্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়। এরাই মু্ক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা পেয়ে আসছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষায়িত চিকিৎসা ও বিশেষ অনুদান দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। এদিন প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৬০ বছর করার ঘোষণা দেন। এর আগে এই বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, সাধারণ সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়সসীমা ৫৮ বছর।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়