ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্যের বছর

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্যের বছর

আসাদ আল মাহমুদ : বিদায় নিচ্ছে ২০১৭ সাল। এটি সরকারের অর্জনের বছর। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ বছর বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও কাজ করেছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

বজ্রপাতে প্রাণহানি কমিয়ে আনতে সামাজিক ও টেকনোলজি উভয় দিক থেকেই কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ২০টি জেলার ৫৬টি উপজেলায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি  মোকাবেলা, ঘুর্ণিঝড় মোরার দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড মহড়া উল্লেখযোগ্য।

বজ্রপাত:  দেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি ভয়ানকরূপ ধারণ করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে সহায়তা নেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাত নিয়ে কাজ করতে ভিয়েতনাম থেকে বেশ কিছু কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রাজধানী ঢাকা ও দেশের কোন কোন জায়গায় এবং বাড়ির ছাদে বজ্র নিরাপত্তা টাওয়ার স্থাপন করা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করেছেন। শিগগিরই টাওয়ার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি হাওর ও বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে একতলা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের তালিকা করা হয়েছে। হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে হাওরে কাজ করা লোকজনের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতেও বেশ সময় লাগে। মানুষ যাতে দ্রুত গরু-ছাগলসহ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে সে লক্ষে শিগগিরই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডকে অনুসরণ করে দেশে বজ্র নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশে ১০ লাখ তালগাছ রোপণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় : গত ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকির ওপর বিদ্রোহীদের হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ১৫ হাজার  রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে  বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫৮ জনের নাম নিবন্ধন করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর আলাদাভাবে ২৯ হাজার ২২ এতিম শিশুকে শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখ লোকের খাদ্যের দায়িত্ব নিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। লক্ষাধিক লোকের খাদ্যের ব্যবস্থা করছে দেশী বিদেশী এনজিও। বাকী খাদ্য সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রেরিত ত্রাণ সামগ্রী থেকে মেটানো হচ্ছে।

৫৬ উপজেলায় বন্যা মোকাবেলা:  গত আগস্ট মাসে দেশের ২০টি জেলার ৫৬টি উপজেলায় বন্যা হয়। এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৯টি পরিবার। এসময় এ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব জেলায়  ১০৬৩০ মেট্রিক টন চাল, ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা ও ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

ঘূর্ণিঝড় মোরা:  গত মে মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় মোরার তাণ্ডবে ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৫ জন মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এতে ৬ জন লোক নিহত হয়েছেন এবং ৬১ জন লোক আহত হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার ১৩ উপজেলা ও রাঙ্গামাটি জেলার ১০ উপজেলা ঘুর্ণিঝড় মোরায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ১৬টি। এগুলো হলো কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও রাঙ্গামাটি। এতে ৩৯৫৯৯টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং ১৯৯২৯টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। ঘুর্ণিঝড়ের সময় ৩১৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৯ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

১৬ জেলায় চালের রিজার্ভ মজুদ ছিল ১২২১ টন। ঘুর্ণিঝড় উপলক্ষে আরও ১৭০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলায় নগদ টাকা রিজার্ভ ছিল ১৯ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। ঘূর্ণিঝড় উপলক্ষে আরো ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য ৩০০ বান ঢেউটিন ও ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

চট্টগ্রামে পাহাড় ধস, মার্কেট ও শপিংমলে অগ্নিকাণ্ড মহড়া : গত ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড মহড়ার অংশ হিসেবে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে এক মহড়ার আয়োজন করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি এড়াতে প্রত্যেক মার্কেট ও শপিংমলকে নিয়মিত ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড মহড়া করতে হবে।

অগ্নিকাণ্ড সাধারণত চুলা, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বা ছেঁড়া তার থেকে হয়ে থাকে। তাই প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের তার ও গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করতে হবে। পূর্ব-প্রস্তুতি ও মহড়া ব্যতীত দুর্যোগকালে সাড়া দান সঠিক হয় না। মহড়া করলে এক ধরনের অভিজ্ঞতা হয় ও ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়া যায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৭/আসাদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়