ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর

কেএমএ হাসনাত : দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা খুবই দুর্বল। যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থায় দুর্বল হয়ে যাওয়া ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ব কয়েকটি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকগুলো মূলধন সংকটে পড়েছে। এসব ব্যাংককে মূলধন যোগান দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু দিন ধরে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কথা বলে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, গত ২৮ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কয়েকটি ব্যাংক বর্তমানে বেশ দুরবস্থায় রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, এসব ব্যাংকের কোনোটির উদ্যোক্তা ব্যাংককে দেউলিয়া করছেন। আবার কোথাও উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে। আবারও কোথাও কতিপয় পরিচালক জোট বেঁধে উদ্যোক্তাকে কোণঠাসা করে মালিকানা পরিবর্তন করতে চাচ্ছে।

ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সঠিক দায়িত্ব পালন করছে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বত্রই তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। আবার কোনোটায় তদন্ত করছে, পরিচালক পরিবর্তন করছে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এমন দুরবস্থায় থাকায় ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এই সুযোগে দু-একটি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ বিবেচনায় আনলে ভালো হবে। এ দেশে অচিরেই ব্যাংকগুলোর সঞ্চায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আমার মনে হয়। সেজন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ নেবার সময় হয়ত হয়েছে। এটি আমার একটি পরামর্শ, বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রীর এ পরামর্শ খুবই সময় উপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ।

এদিকে, ৭২ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা মনে করেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ব্যাংক রয়েছে তা কমাতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক মো. মহিউদ্দিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে চার সদস্যের টিম এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের মধ্যে ৭২ শতাংশ ব্যাংকের সংখ্যা কমানোর পক্ষে মত দিলেও ১১ শতাংশ মনে করেন ব্যাংকের বর্তমান সংখ্যা ঠিক আছে। জরিপের এই প্রশ্নে মন্তব্য করতে রাজি হননি ১৭ শতাংশ ব্যাংকার।

জরিপে ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়েও প্রশ্ন রাখা হয় ব্যাংকারদের কাছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- সুশাসনের অভাব, বোর্ডের গোপন সুবিধা, রাজনৈতিক দুর্বলতা, মানসিকতার পরিবর্তন, পরিচালকদের দুর্বলতা, নেতৃত্ব এবং কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে ব্যাংক একীভূতকরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তবে  বাংলাদেশে এ ধারণা কিছুটা নতুন। তবে একীভূতকরণের ব্যাপারে সব সময় আমরা প্রস্তুত আছি। এ বিষয়ে আমরা একটা গাইডলাইন করেছি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জানুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়