ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বকেয়া ৯২৪ কোটি টাকা আদায়ে রবির কাছে চূড়ান্ত দাবিনামা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বকেয়া ৯২৪ কোটি টাকা আদায়ে রবির কাছে চূড়ান্ত দাবিনামা

এম এ রহমান মাসুম : মোবাইলফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কাছে বিভিন্ন বকেয়া ভ্যাটবাবদ ৯২৪ কোটি ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ টাকা আদায়ে চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট।

বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) ভ্যাট বা মূসক বিভাগ থেকে ওই টাকা পরিশোধের জন্য পৃথক পাঁচটি চিঠি গত ৬ ফেব্রুয়রি পাঠানো হয়েছে। এলটিইউ-মূসকের কমিশনার মো. মতিউর রহমান বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

এলটিইউ-মূসকের কমিশনার মো. মতিউর রহমান সই করা চিঠিগুলো রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এসব চিঠিতে কোম্পানিটির বকেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মো. মতিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বকেয়া রাজস্ব আদায়ে প্রাথমিক দাবিনামা ইস্যু করা হলেও রবি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে তৎপর ছিল না। আমরা তাদের যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছি। অন্যান্য কম্পানি যেখানে ইন্টারকানেকশন ফি ও মার্জ ফির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভ্যাট দিচ্ছে, শুধু তারা দিচ্ছে না। শুধু তাই নয় কোম্পানিটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে রেয়াত সুবিধা নিয়েছে, যা মূসক আইনে প্রযোজ্য নয়। এজন্য আমরা চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করেছি। যদিও তারা আপিল করার সুযোগ পাবে। এরপর আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।’

পাঁচটি চিঠির মধ্যে একটি চিঠিতে কোম্পানিটির কাছে ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা টাকা দাবি করেছে এলটিইউ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ মূসক অডিটের পাঁচ সদস্যের কমিটি কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এসএপি সফটওয়্যার খাতে অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা এবং অপরিশোধিত উৎসে মূসক বাবদ ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা কম পরিশোধের প্রমাণ পায়।। অর্থাৎ অনাদায়ী হিসেবে মোট ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা আদায়ের জন্য মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৫৫ এর ৩ উপধারা অনুযায়ী দাবিনামা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পৃথক অপর চিঠিতে ইন্টারকানেকশন চার্জ হিসেবে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা দাবিনামা চূড়ান্ত করে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ। এর আগে এ দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মূসক আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছিল সংস্থাটি। কোনো জবাব না পাওয়ায় এবারে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে।

আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাইডার ও সুইচ ইত্যাদি আমদানিতে রেয়াত গ্রহণ করে রবি আজিয়াটা ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে আর একটি চিঠিতে দাবি করেছে মূসক কর্তৃপক্ষ, যা মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৯ (১)(ঙ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বকেয়া ওই অর্থ আদায়ে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করার পর গতকাল দাবিনামা চূড়ান্ত করে নোটিশ দেয় বৃহৎ করদাতা ইউনিট।

অপর চিঠিতে টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, টেলেক্স, ফ্যাক্স বা ইন্টারনেট সংস্থা ও সিমকার্ড সরবরাহকারীসহ বিবিধ সেবার ওপর প্রযোজ্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ভ্যাটবাবদ চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করা হয়।

সর্বশেষ চিঠিতে রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের একীভূতকরণের ক্ষেত্রে মার্জ ফি বাবদ ১০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেলের অনুকূলে তরঙ্গ মূল্য সমন্বয়বাবদ ৫০৭ কোটি টাকাসহ মোট ৬০৭ কোটির ওপর প্রযোজ্য উৎসে মূসক হিসেবে ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে, যা মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৬(৩), ৬(৪ক), ৬ (৪খ), ৬(৪ঙ) ধারা ও বিধিমালা অনুযায়ী আদায়যোগ্য। অনাদায়ী ওই টাকার দাবিনামা মূসক আইনের ৫৫ এর (৩) উপধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়। আর দাবিকৃত রাজস্ব অনতিবিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান জন্য অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিটি চিঠিতে।

এনবিআরের এমন দাবিকে অযৌক্তিক ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এলটিইউ ভ্যাট আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অযৌক্তিক দাবি করছে, যা রীতিমত হয়রানির সামিল। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগও করেছি। অভিযোগে আমরা বলেছি অ্যাকাউন্টিং বিশেষজ্ঞ এনে কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত দেখা হোক। ওই কমিটি যদি মনে করে দেশের বৃহৎ করদাতা একটি কোম্পানি কর ফাঁকি দিয়েছে তাহলে যে বিচার হবে আমরা তা মাথা পেতে নেব।’

এলটিইউ দাবির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এলটিইউ আমাদের সময় না দিয়ে, আমাদের ব্যাখ্যা না শুনে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো দাবিনামা ইস্যু করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, ইন্টারকানেকশন চার্জের ক্ষেত্রে যে ভ্যাট দাবি করেছে তা আমাদের কাছে চাইতে পারে না। ওই ভ্যাটের জন্য এনবিআরের উচিত বিটিসিএলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তা না করে এনবিআর আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। গত পাঁচ বছর যাবৎ বিটিসিএল ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করছে না। আমরা তাদের কাছে অনেকবার ভ্যাট চালান চেয়েছি, তারা দেয়নি।’

মার্জ ফির বিষয়ে শাহদ আলম বলেন, ‘২০১২ সালের একটি মামলায় ২০১৪ সালের একটি রায় দেওয়া হয়েছিল মার্জ ফিসংক্রান্ত মামলায় বিটিআরসিকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের জন্য। বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। সেই আপিলের এখনো সুরাহা হয়নি। বিটিআরসি আজ পর্যন্ত আমাদের ভ্যাট চালান দেয়নি। তাই আমরাও ভ্যাট দিতে পারছি না। প্রকৃত অর্থে এনবিআরের ভ্যাট পাওনা বিটিআরসির কাছে। কারণ এনবিআর আমাদের কোনো সার্ভিস দেয় না, আমরা সার্ভিস নেই বিটিআরসির কাছ থেকে।’

অন্যদিকে ৭০০ কোটি টাকার মতো যে বড় অংশের যে ভ্যাট দাবি করেছে সেটাও অযৌক্তিক দাবি করে রবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এলটিইউ শুধু ক্রেডিট ব্যালেন্স হিসাব করে আমাদের কাছে ভ্যাট দাবি করেছে। তারা ডেবিট হিসাব আমলে নেয়নি। এটা এলটিইউ কর্তৃপক্ষের অযাচিতভাবে দাবি, যা দুঃখজনক।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়