ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার বরিশালে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

31,69 || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৃহস্পতিবার বরিশালে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

নৃপেন রায় ও জে খান স্বপন : বাংলাদেশের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় অঞ্চল বরিশাল বিভাগ। হ্যাটট্রিক জয়ের মিশন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার জনসভায় যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সেই জনপদে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন শেখ হাসিনা। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বরিশাল যাচ্ছেন তিনি।

বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভাকে ঘিরে পুরো নগরীতে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দলের নেতাকর্মীদের মতে, আগামীকাল আওয়ামী লীগের সমাবেশে জনতার ঢল নামবে। এ লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে বরিশালে প্রথম সফর এটি।

বুধবার বিকেলে বরিশাল ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে এখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বরিশাল জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সাজ সাজ রব পড়েছে। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। বৃহস্পতিবার বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা হবে।

জনসভা সফল করার লক্ষ্যে এবং স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম নিশ্চিত করতে দুই সপ্তাহ ধরে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একের পর এক প্রস্তুতি ও মতবিনিময় সভা হয়েছে। বরিশাল বিভাগের বাকি পাঁচ জেলা- পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা ও পিরোজপুরেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন জনসভা সফল করতে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দলীয় প্রধানের জনসভায় সর্বোচ্চ শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে তার কোনো ছাপ পড়েনি।

জনসভাস্থলের আয়োজন দেখতে বিকেল থেকে দলের নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। জনসভাস্থলের আশপাশের প্রধান সড়কগুলো তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন, রঙবেরঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু উদ্যানের বিশাল মাঠে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটা প্রধানমন্ত্রীর বরিশালে প্রথম সফর। এর আগে ২০১২ সালের ২১ মার্চ বরিশাল সফর করেন তিনি। সভায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সভাপতিত্ব করবেন।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে বঙ্গবন্ধু উদ্যান, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম এবং নগরীর সকল রাস্তাঘাট সাজানো হচ্ছে। সাজ-সজ্জায় সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বসানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। জনসভা মঞ্চের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতীকী পদ্মা সেতু। আর মঞ্চের পাশে ডিজিটাল বিলবোর্ডে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জনসভার সামগ্রিক প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বরিশালে কয়েক দিন থেকেই অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা হলেন- দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট স ম রেজাউল করিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন প্রমুখ।

 



এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে নিজের এলাকার মতো ভালবাসেন। তিনি এই অঞ্চলের মানুষকে যা দিয়েছেন, অন্য কোনো সরকার তা দেয়নি। আগামী নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ তাকে ভোট দিয়ে আবারও দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে। এ অবস্থান জানান দিতেই তার জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে। আমরা সাজ সাজ রব দেখে সেটা টের পাচ্ছি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও ৪২ উপজেলা থেকে সড়ক ও নৌপথে কর্মী-সমর্থকদের জনসভায় আনার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরের ৩০ ওয়ার্ডে বিরামহীন প্রস্ততি সভা, প্রচারণা ও গণসংযোগ চলছে। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জনসভায় সর্বোচ্চ লোকসমাগম নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সতর্ক নজরদারি করতে দেখা গেছে।

যেসব উন্নয়ন প্রকল্প উপহার পাচ্ছে বরিশাল
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী যেসব উন্নয়ন প্রকল্পরের উদ্বোধন করবেন সেগুলো মধ্যে মধ্যে রয়েছে- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একাডেমিক ভবন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল একাডেমিক ভবন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, শেরেবাংলা হল, বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন সরকারি শিশু পরিবার বালিকা (দক্ষিণ), বরিশালবাসীদের জন্য নবনির্মিত ডরমেটরি ভবন।

বরিশাল সদরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণ শীর্ষক প্রকল্প, বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, বাবুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (বি-টাইপ), মেহেন্দিগঞ্জ থানা কমপেক্স ভবন; স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, বাকেরগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, গৌরনদী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উজিরপুর উপজেলার হারতা-বানারীপাড়া বর্ডার রাস্তায় ২৮০ মিটার প্রি-স্ট্রেস গার্ডার ব্রিজ, বানারীপাড়া উপজেলাধীন চৌমোহনা জিসি-বানারীপাড়া হেড কোয়ার্টার ভায়া বিশারকান্দি, ওমারের পাড় রাস্তায় নান্দুগার নদীর ওপর ২৯০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া-কালীগঞ্জ ব্রিজ।

জেলা পরিষদের আওতাধীন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আওতায় বরিশালে সদরে অবস্থিত ৩ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণাগার, ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আলু বীজ হিমাগার। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকায় ১৬ এমএলডি শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট মেহেন্দিগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন শহীদ আরজু মনি ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পৃথক সাত তলা দুটি একাডেমিক ভবন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হিজলা ডিগ্রি কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, হিজলার সংহতি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া মোজাফফর খান ডিগ্রি কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতায় বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম ভবন।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় বরিশাল সদরের কড়াপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের উদ্বোধন করা হবে। পাঁচটি প্রকল্পের নাম এখনো জানা যায়নি।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনযোগ্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন বরিশাল পুলিশ সুপার (এসপি) অফিস নির্মাণ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স নির্মাণ, নারী কারারক্ষীদের বাসভবন নির্মাণ, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় নির্মাণ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর ভবন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ, মুলাদী থানা ভবন নির্মাণ, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং হোস্টেল নির্মাণ প্রকল্প।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/নৃপেন/জে খান স্বপন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়