ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘দুদক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা বদলে দিতে চাই’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ৩ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দুদক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা বদলে দিতে চাই’

এম এ রহমান মাসুম : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নবনিযুক্ত কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, ‘দুদক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের পুরাতন ধারণা বদলে দিতে চাই। এজন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে সাংবাদমাধ্যম হবে সবচেয়ে বড় অংশীদার। একসঙ্গে কাজ করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ ও পরিশুদ্ধ হয়।’

দুদকে যোগদান ও কমিশনের ভবিষ্যত কর্মকাণ্ড বিষয়ে মঙ্গলবার রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদকের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুর্নীতি দমন আইন ও বিধিমালাতেই দুদকের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া রয়েছে।  আমরা সেই আইনই অনুসরণ করব। কারণ, দুদক আইন অত্যন্ত ভালো আইন। আমি বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে কাজ করার চেষ্টা করব। দুদক আমাকে যতটুকু ম্যান্ডেট দিয়েছে সেটা বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, কমিশনে আমি এককভাবে কোনো ব্যক্তি নই। আমি কমিশনের একজন কমিশনার মাত্র। এখানে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়ে পুরো কমিশন। আমার লক্ষ্য থাকবে- কমিশনের আস্থা বজায় রেখে যেন প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায্য কাজ করতে পারি, যাতে দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন হয়। একজন নিরপরাধ মানুষ যাতে দুর্ভোগের শিকার না হয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের নতুন কমিশনার বলেন, ‘আমার প্রধান লক্ষ্য থাকবে কেউ যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয়। একজন সাধারণ মানুষও যাতে দুর্ভোগের শিকার না হয়। কারণ, আমি অন্যায়ভাবে কারো কষ্টের কারণ হতে চাই না।’

তিনি বলেন, আমরা দন্তহীন বাঘ হতে চাই না, আমরা চাই দাঁতের যথাযথ ব্যবহার যেন হয়। এক্ষেত্রে আইনকে প্রধান্য দেব।

দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদক কমিশনার বলেন, ‘প্রতিরোধ সব সময়ই প্রতিকারের চেয়ে ভালো ও কম ব্যয়বহুল। সেজন্য প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ, প্রতিরোধ অধিক কার্যকর। গণশুনানি ও সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। আমিও এ ধরনের ভালো কিছু উদ্যোগ নিতে চাই। কারণ, প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে ভালো অস্ত্র।’

দুদক নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘পুরাতন ধারণা থেকে বের হতে চাই। দুদকের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা বদলে দিতে চাই। এজন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে সাংবাদমাধ্যম হবে সবচেয়ে বড় অংশীদার। আমি দেখেছি, মিডিয়া সব সময় দুদকের পাশে থেকে কাজ করে। আমি চাইব, মিডিয়া আমাদের সাথে থাকুক। একসঙ্গে কাজ করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ ও পরিশুদ্ধ হয়।’

দুদকের নতুন কমিশনার হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ সচিব মোজম্মেল হক খান গত ২ জুলাই যোগদান করেন। ১ জুলাই সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ২৬ জুন দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়া এ পদটি শূন্য ছিল।

মোজাম্মেল হক খান ১৯৫৯ সালের ৩ নভেম্বর মাদারীপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মোজাম্মেল হক খান মিসরের সিডিসি থেকে এসডি (পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি বিসিএস ১৯৮২ সালের নিয়মিত ব্যাচে (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনে মাঠপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পর্যায়ক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সড়ক ও রেলপথ বিভাগ এবং আইএমইডি বিভাগে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সরকারের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

পেশাগত জীবনের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোজাম্মেল হক খান। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়