ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিদ্যুতের ১২ দরপত্রে পুকুর চুরি, দুদকে নথিপত্র তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদ্যুতের ১২ দরপত্রে পুকুর চুরি, দুদকে নথিপত্র তলব

এম এ রহমান মাসুম : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ১২টি দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে রয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ক্রয় পরিদপ্তরের পরিচালক আবু ইউসুফসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে গড়া সিন্ডিকেটটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে।

এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরইমধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা ওই ১২টি কাজের দরপত্র সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছেন বলে বিদ্যুৎ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। যার স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৫০২.০১.০০১.১৭-২২০৭৬।

গত মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের Pur-156/33kv Insolator, Pur-248/oil Centrifuging Machine, Pur-159/Transformer Oil, Pur-252/100v DC Nickel cadmium Alkine, Pur- 234/10/13.33 MVA Power transformer, Pur-235/16/20 MVA Power transformer, Pur-254/5kv & 10kv Digital Isolation Test set Lot-1 & Lot-2, Pur-155/11kv Isolator, Pur-329/2016, Pur-329/2016, Pur-427/2016, Pur-438/2016 এবং ফেঞ্চুগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টে ইলেকট্রিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের স্পেয়ার পার্টস সবরাহ সংক্রান্ত দরপত্রসহ মোট ১২টি দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদারগণের দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, সিএস, ইভালুয়েশন রিপোর্টসহ আনুসঙ্গিক সকল কাগজপত্র জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা গেল।

দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পিডিবির চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য বিদ্যুতের ১২টি কাজের দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে চেয়ারম্যানসহ একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদের দুর্নীতিতে বর্তমানে ক্রয় পরিদপ্তর দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিণত হয়েছে।

দরপত্রগুলো হলো-Pur-156/33kv Insolator, Pur-248/oil Centrifuging Machine, Pur-159/Transformer Oil, Pur-252/100v DC Nickel cadmium Alkine, Pur- 234/10/13.33 MVA Power transformer, Pur-235/16/20 MVA Power transformer, Pur-254/5kv & 10kv Digital Isolation Test set Lot-1 & Lot-2, Pur-155/11kv Isolator, Pur-329/2016, Pur-329/2016, Pur-427/2016, Pur-438/2016 এবং ফেঞ্চুগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টে ইলেকট্রিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের স্পেয়ার পার্টস সবরাহ সংক্রান্ত দরপত্র। কারণ হিসেবে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, ক্রয় পরিদপ্তরের পরিচালক আবু ইউসুফ বিদ্যুৎ ‍উন্নয়ন বোর্ডের নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির এক মহাষযন্ত্রে লিপ্ত। যাতে সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় কালিমা লেপন করা যায়।

উদাহরণ হিসেবে অভিযোগে বলা হয়, চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাস টারবাইনের মালামাল ক্রয় করার জন্য আন্তর্জাতিক খোলা দরপত্র (Pur-329/2016) আহ্বান করা হয়। সেখানে গ্যাস টারবাইনের প্রকৃত প্রস্তুতকারক জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)। উক্ত দরপত্রে দরদাতা যথাক্রমে  জেঅ্যান্ডসি ইমপেক্স লিমিটেড- ২৭ লাখ ৭৬ হাজার ইউএস ডলার, টারবাইন সার্ভিসেস লিমিটেড ৯ লাখ ৩৮ হাজার ইউএস ডলার, এনসালডো থমাসিন ৭ লাখ ৪৯ হাজার ইউএস ডলার এবং বেল জিই ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার। কিন্তু দুর্নীতি করার অভিপ্রায়ে খালেদ মাহমুদের সিন্ডিকেট সর্বোচ্চ দরদাতা জেঅ্যান্ডসি ইমপেক্স লিমিটেডকে দিয়েছে। শুধু তাই নয় জেঅ্যান্ডসি ইমপেক্স লিমিটেডের নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি ইথোস এনার্জি (Ethos Energy) নামের আরেকটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ভুয়া অথোরাইজেশন নিয়েও দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইথোস এনার্জি ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, তাদের নামে অথোরাইজেশন বানোয়াট ও ভুয়া। এরপরও পিডিবি চেয়ারম্যান মিথ্যা অথোরাইজেশনটি গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যান্য দরপত্রের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকারের হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছেন।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুসন্ধানাধীন বিষয়ে মন্তব‌্য করতে অস্বীকার করেন।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর স্বাভাবিকভাবে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। অবসরোত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ আগস্ট ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়