ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছাত্রদলের শীর্ষ পদ বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১৯ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছাত্রদলের শীর্ষ পদ বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা

এস কে রেজা পারভেজ : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটিই এখন বিভিন্ন জেলা ইউনিটের কমিটি দিচ্ছে। কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে উঠছে অর্থ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। এ নিয়ে সংগঠনের মধ্যে ক্ষোভ আছে।

তবে তা ছাপিয়ে নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রতা মেনে নিতে পারছেন না সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। খুব শিগগিরই কমিটি না হলে পরিস্থিতি আরো বেগতিক হরে পারে বলে শঙ্কা তাদের।

ছাত্রদলের সাংগঠনিক অবস্থা ও নতুন কমিটি গঠনের খবর নিতে গিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঈদের পরপরই ছাত্রদলের নতুন কমিটি পাবেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এজন্য পদপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চলছে বিশ্লেষণ। উদ্দেশ্য, সিন্ডিকেটের কবল থেকে সংগঠনটিকে মুক্ত করা।

সূত্র বলছে, পুরো কমিটিই হবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে। পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা, অতীত কর্মকাণ্ডসহ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কর্মসূচি সফল করার বিচক্ষণতা পর্যবেক্ষণ করছেন দলটির এই দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা।

লন্ডনের একটি সূত্রের খবর, ছাত্রদলের পুরনো দিন ফিরিয়ে আনতে এবার সিন্ডিকেটের বেড়াজাল ভাঙছে। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী যেভাবে নিজে দায়িত্ব নিয়ে কমিটি দিয়েছেন, তারেক রহমানও চাচ্ছেন তার প্রত্যক্ষ নজরদারিতে ছাত্রদলে নিবেদিতপ্রাণ নেতা দিতে। সেক্ষেত্রে সংগঠনটির শীর্ষ পদ দুটির বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থাৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একটি পদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিয়ে অন্য পদটি ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিতে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে যোগ্যতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনায় নিচ্ছেন তিনি। যদিও এ বিষয়টি এখন পর্যন্ত শুধু বিবেচনায় রয়েছে। হিসেব মিলে গেলে এ ধরনের কমিটিও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দৃষ্টি থাকতে পারে জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়ের ওপর। কর্মসূচি বাস্তবায়নের সক্ষমতার দিকে খেয়াল রেখে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় রাখছে বিএনপির শীর্ষ মহলের। এজন্য ছাত্রদলের প্রাক্তন সভাপতি নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুকে উদাহরণ হিসেবে টানা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেসব সংগঠন বা ইউনিটের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব জায়গায় নতুনদের আনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো করা হচ্ছে। ছাত্রদলের নতুন কমিটি আসবে। এ নিয়ে কাজ চলছে।

এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, জানিয়ে দলটির অন্যতম এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিভিন্ন কমিটি করার বিষয়ে এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপরই সব দায়িত্ব আছে। তিনি ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের প্রাক্তন সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ছাত্রদলের কমিটি আরো আগেই হয়ে যেত। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হামলা-মামলার কারণে এই প্রক্রিয়া বারবার হোঁচট খেয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে। দ্রুত কমিটি দেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই বছর আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও হচ্ছে, হবে করে কেটে গেছে আরো দুই বছর। পরিস্থিতি এখন এমন- সংগঠনটিতে চেইন অব কমান্ড বলতে আর কিছু নেই। বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রদলের প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতা। প্রতিষ্ঠার তিন যুগেরও বেশি সময় পর বিএনপির সবচেয়ে কঠিন সময়ে ‘জনপ্রিয়’ এই ছাত্রসংগঠন এখন ‘অকার্যকর ও ‘বিশৃঙ্খল’ সংগঠনের রূপ নিয়েছে।

সংগঠনটির নেতাদের মতে, এখন ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এতটা চরমে পৌঁছেছে যে নতুন কমিটি না হলে সংগঠনটির অস্তিত্বই বিপন্ন হওয়ার পথে। পদ পেতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর ক্ষমতার অপব্যবহার সংগঠনটিকে তার স্বকীয়তা থেকে বের করে এনে করে তুলেছে বিশৃঙ্খল।

সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না বলেন, ‘দলের এই ক্রান্তিকালে পুরো সংগঠনকে ঢেলে সাজানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব পথ দেখাবে। শুধু একটি ভালো নেতৃত্ব ছাত্রদলের স্বর্ণালী সময় ফিরিয়ে দেবে। আমার বিশ্বাস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেই ধরনের সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব বের করে আনবেন।’

ভবিষ্যত সময়কে সংকটপূর্ণ অভিহিত করে ছাত্রদলের নতুন কমিটির পদপ্রত্যাশী এই নেতা বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় নেত্রী (খালেদা জিয়া) জেলে। এই পরিস্থিতিতে তাকে মুক্ত করে এনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ছাত্রদলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এজন্য দক্ষ নেতৃত্বর বিকল্প নেই।’

সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান নেতাকর্মীদের এখন একমাত্র দাবি হচ্ছে, দ্রুত নতুন কমিটি গঠন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় নতুন কমিটির প্রশ্নে সংগঠনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বহু গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থান পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী একজোট হয়ে অবস্থান নিয়েছে বর্তমান কমিটির বিপক্ষে।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়ার অপরিহার্যতার পক্ষে যুক্তি টেনে পদপ্রত্যাশী আরেক নেতা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমানে ছাত্রদল যে পরিস্থিতি পার করছে, নতুন কমিটি না দিলে চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। যোগ্য নেতৃত্ব না আসলে পুরো সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হবে। আমরা চাই, ছাত্রদলের স্বর্ণালী সময় ফেরাতে বিতর্কের ঊর্ধ্বে একটি ভালো কমিটি আসুক।

কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, ইসহাক সরকার, ইখতিয়ার রহমান কবির, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না, নূরুল হুদা বাবু প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ আগস্ট ২০১৮/রেজা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়