ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘটনার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল ‘দৃষ্টান্ত’

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘটনার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল ‘দৃষ্টান্ত’

কুমিল্লা প্রতিনিধি : চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়া মাকে অবশেষে ফিরে পেল নবজাতক ‘দৃষ্টান্ত’।

বড় অংকের টাকা বিলের ভয়ে ২৪ আগস্ট কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলায় মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্তানকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায় মা রোকেয়া এবং বাবা শাহ আলম।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চাঁদপুরে হাজীগঞ্জের শাহ আলম ও রোকেয়া বেগম দম্পতির ১৮ আগস্ট পুত্র সন্তান জন্ম হয়। সাড়ে ৬ মাসের মাথায় প্রসব হওয়ায় শিশুর ওজন হয় মাত্র ৭০০ গ্রাম। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে প্রি-ম্যাচিউর বেবী। শিশুর জীবন সংকটাপন্ন হওয়ায় ভর্তি করা হয় কুমিল্লা শহরের ঝাউতলার মা ও শিশু স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিবীড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। সাত দিন চিকিৎসার পর ২৪ আগস্ট শিশুটিকে রেখে তার বাবা-মা উধাও হয়ে যায়।

এমন অবস্থায় শিশুর ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরির পর পুলিশের সহযোগিতায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বাকিলা থেকে তার মাকে খুঁজে বের করে আনা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম এবং সিভিল সার্জন ডাক্তার মুজিবুর রহমান শিশুর মা রোকেয়া বেগমকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

শিশুর মা রোকেয়া বেগম জানান, তার স্বামী খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। এর আগেও তাদের দুটি সন্তান জন্ম হয়েছিল। দুটি সন্তানই নির্ধারিত সময়ের আগে ভুমিষ্ঠ হওয়ায় জন্মের পর মারা যায়।



এই শিশুর চিকিৎসা চলাকালে হাসপাতালের পক্ষ থেকে বেঁচে থাকার আশ্বাস দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো শঙ্কায় ফেলে দেন এবং তাদের কাছে বার বার বিল পরিশোধের জন্যে চাপ দেওয়া হয়।

মাত্র ১৪ দিনে দুই লাখ টাকার উপরে বিল আসায় তারা হাল ছেড়ে দেয়। সন্তানের মায়া ত্যাগ করে ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। তার দিনমজুর স্বামী শাহ আলম হাসপাতাল থেকে বাড়ি গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় পুলিশের সহযোগিতায় সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুশি রোকেয়া বেগম। 

সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার শিশুর চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, এটি দারিদ্র্যের কারণে হয়েছে। শিশুর মা-বাবা চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এখন সকলে মিলে তারা চিকিৎসার ব্যয় বহন করবেন এবং এটা নিয়ে তার মাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলনে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান করেছেন যেন শিশুটির চিকিৎসায় দরিদ্র পিতা-মাতার পাশে এসে দাঁড়ায়।

তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটির নাম রাখা হয় ‘দৃষ্টান্ত’। পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম এই নাম প্রস্তাব করেন। শিশুর মা পাশে ছিলেন। জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার এই ঘটনা অবশ্যই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।





রাইজিংবিডি/কুমিল্লা/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়