ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এসপি মিজানের আরো সম্পদের খোঁজে ৩৪ সংস্থায় দুদকের চিঠি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ৬ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এসপি মিজানের আরো সম্পদের খোঁজে ৩৪ সংস্থায় দুদকের চিঠি

এম এ রহমান মাসুম : পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর আরো সম্পদের খোঁজে এবার ৩৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পৃথক পৃথক চিঠিতে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কমান্ড্যান্ট মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী নীপা মিজান ও পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে তাদের সুনির্দিষ্ট তথ‌্য-উপাত্তসহ সংশ্লিষ্ট নথি চাওয়া হয়েছে।

এসব চিঠি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ভূমি অফিস, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কেমিক‌্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, পিপলস লিজিং কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ ব‌্যাংক, বেসিক ব‌্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়ায়ল ব‌্যাংক, সোনালী ব‌্যাংক, ইসলামী ব‌্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব‌্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড ও এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ৩৪টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফারুক আহমেদের সই করা চিঠিগুলো গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট অফিসের প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে।

দুদক, এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট ব‌্যাংক সূত্রে এসব তথ‌্য জানা গেছে।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও মডেল থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় মিজানুর রহমানের নামে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী নীপা মিজানের নামে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে এসপি মিজানের নামে তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৯৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার বাড়িসহ ১৩.০৮ একর জমি, ঢাকার তেজকুনি পাড়ায় ১৮০০ বর্গফুট ও ১৭১৮ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকার জুড়াইনে একটি দোকান, মিরপুরসহ বিভিন্ন মৌজায় ৩ দাগে ১৫ শতাংশ জমি, উত্তরায় ৩ কাঠার আরেকটি প্লটের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তার নামে ব্যাংকে ৯১ লাখ ১২ হাজার ৫৪৭ টাকা নগদ ও ৭৫ লাখ টাকার এফডিআর, মোল্লা এনপিকেএস লিমিটেড সার কারখানার নামে ২ লাখ টাকার শেয়ারের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, মেঘনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স খোয়াজ ফার্টিলাইজার, ফার্ম নেস্ট অ্যান্ড মিল্ক প্রডাক্টস লিমিটেড ও একটি মাইক্রোবাসের মালিকানার প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

অন্যদিকে, নীপা মিজানের নামে উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডে তিন তলা ভবনসহ ৫ কাঠার জমি, ২ কাঠা জমিতে দোকান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২ তলা বাড়িসহ ১০ শতাংশ ও ৬৬ শতাংশ জমি, তেজকুনি পাড়ায় ১৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৫.৩৮ একর জমি এবং ব্যবসায়িক মূলধন ও নগদ অর্থসহ মোট ৭ কোটি ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ‌্য কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য‌্য রাইজিংবিডিকে বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর তদন্ত চলছে। এ পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে চিঠি দিতেই পারেন। এ বিষয়ে আমারা কোনো বক্তব‌্য নেই।

সাভারের হেমায়েতপুরের আলীপুর ব্রিজ সংলগ্ন ৮৪ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি তৈরি ও ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডের আলমাস টাওয়ারের পাশে আরো একটি বাড়ি নির্মাণে পুলিশের ৬০ জন সদস্যকে রাজমিস্ত্রির সহকারী বা যোগালির কাজ করানোর অভিযোগ ওঠে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১৬ সালে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপ-পরিচালক এস এম মফিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় দুদক। এরপর অনুসন্ধানকালে মিজানের বিরুদ্ধে নকল সার কারখানা পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। এটিও যুক্ত হয় অভিযোগ নথিতে। এরপর অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়।  

২০১১ সালে এসপি মিজানের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম। অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর নামে ব্যবসা পরিচালনাসহ নানা অভিযোগে মামলা রুজুর সুপারিশ করলেও মামলা না করে অভিযোগটি নথিভুক্ত করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অক্টোবর ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়