ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যোগ্য এমডি পাওয়া যাচ্ছে না বেসিক ব্যাংকের জন্য

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১০ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যোগ্য এমডি পাওয়া যাচ্ছে না বেসিক ব্যাংকের জন্য

কেএমএ হাসনাত : রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংকটির এমডি নিয়োগের জন্য দেড় মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো প্রার্থী এখনো এই পদের জন্য আবেদনই করেননি। তাই এখন আবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুটি দৈনিক পত্রিকায় এমডি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এমডি পাওয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু শর্তেরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারপরও এই ব্যাংকের জন্য একজন দক্ষ ও যোগ্য এমডি পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনের পরিচালনা পর্ষদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই ব্যাংকের অবস্থা দুই বছর ধরে খুবই নাজুক। বছরখানেক ধরে বেসিক ব্যাংকের অর্ধেকেরও বেশি ঋণ খেলাপি তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ ঋণের পুরোটা উদ্ধার করা কখনোই সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে কোনো পেশাজীবী ব্যাংকারই বেসিক ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না।

পত্রিকায় ছাপানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক অথবা লিয়েনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা যাচ্ছে। এই পদে আবেদনকারীর ব্যাংকিং পেশায় সক্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী অব্যবহিত পূর্ববর্তী পদে অথবা প্রধান নির্বাহী পদে অথবা উভয় পদে কমপক্ষে এক বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। অর্থনীতি, ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স কিংবা ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময়সীমা হবে তিন বছর।’

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগের জন্য আমরা একজন ভালো ও দক্ষ লোককে পেতে চাচ্ছি। কিন্তু অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, এই পদে কোনো যোগ্য লোক আবেদনই করছে না। তবুও আমরা চেষ্টা করছি, ভালো লোক পেতে। এজন্য এমডি পদের যোগ্যতাও শিথিল করা হয়েছে

দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত এই ব্যাংকটির এমডি মুহাম্মদ আউয়াল খান গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর থেকে পদটি খালি রয়েছে। তার পদত্যাগপত্র গত ৩০ আগস্ট বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ না করে বলা হয়, নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়ার সাথে সাথে তার পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বেসিক ব্যাংকের এমডি পদে যোগদানের জন্য আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায়নি। দু-একজনের সাথে এ বিষয়ে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে রাজি নন। এদিকে, আলোচিত বেসিক ব্যাংকের এমডির পদত্যাগের বিষয়ে এই ব্যাংকে নানা কথা চালু রয়েছে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণ অনুমোদন ও কিছু ঋণ পুনঃতফসিলের মতো ব্যাংক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সাথে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পেরে আউয়াল খান পদত্যাগ করেছেন।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, সুদহার কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছর বেসিক ব্যাংক ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা লোকসান করবে, এমন পরিস্থিতি বুঝেই সমালোচনা এড়াতে আউয়াল খান আগেভাগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।

সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক ব্যাংক ছিল। কিন্তু এরপর যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন থেকেই ব্যাংকটির আর্থিক অনিয়মের সূত্রপাত ঘটে।

চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ মদদে বেসিক ব্যাংকে একে একে ঘটে যায় অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারি। এই কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র ফুটে ওঠেছে।

২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটি বিরোধিতা করলেও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সেই ঋণ অনুমোদন করেছে। ৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। বেসিক ব্যাংক পর্ষদের ১১টি সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যার অধিকাংশ ঋণই গুরুতর অনিয়ম সংঘটনের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ বা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ নভেম্বর২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়