ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি

কেএমএ হাসনাত : এক সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতি বছর  অনাহারে-অর্ধাহারে বিপুলসংখ্যক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চল থেকে ‘মঙ্গা’ চিরতরে দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে গত প্রায় ১০ বছর মঙ্গা কবলিত অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা ও কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জীবনমানে উন্নতি হয়েছে। মঙ্গা চিরতরে দূর হয়েছে। শুধু উত্তরাঞ্চল নয় পুরো বাংলাদেশ থেকেই দারিদ্র্যতা দূর করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষি খাতের ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগ এ খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি, কৃষি উপকরণ ও সেচ সুবিধা কৃষকদের নিকট সহজলভ্য করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা/ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল পাটের  হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গবেষণা ও উৎপাদনে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি খাতে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ৫৯৫ কোটি টাকা হতে ১০ দশমিক ১ গুণ বাড়িয়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৬,০০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নিয়মিত প্রণোদনার বাইরে কৃষি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ পরিচালনার জন্য বর্তমানে হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার ক্ষেত্রে  ৭০ শতাংশ হারে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ হাওে প্রণোদনা/ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। পাটজাত দ্রব্যের বিপরীতে দেওয়া ভর্তুকি ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের ৭৫ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৭ গুণ বাড়িয়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৫০০ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে।

কৃষিবান্ধব সম্পদ সঞ্চালন কার্যক্রমের প্রভাবে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও-বিগত দশ বছরে কৃষি খাতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দমমিক ৮ শতাংশ হারে। সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দমমিক ২ শতাংশ। খাদ্যশস্য উৎপাদন ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের ২৭৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৪০৭ লাখ  মেট্রিক টনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

খাদ্যশস্য উৎপাদন ছাড়াও আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মজুত, খাদ্য আমদানি এবং দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টেস্টরিলিফ, ভিজিএফ, ভিজিডি ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থ সঞ্চালনের মাধ্যমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

খাদ্য খাতে দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণ ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের ৪৯৬ দশমিক ৩ কোটি টাকা থেকে ৬ গুণ বেড়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে হয়েছে দুই হাজার ৭২৯ কোটি টাকা।

আনুষ্ঠানিক খাতে মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর  এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন শ্রেণির পদ সৃষ্টি, সংরক্ষণ, স্থায়ীকরণ, স্থানান্তর ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় অর্থবিভাগ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি, ঋণ সুবিধা ও নীতি প্রণোদনা দেওয়া এবং সহায়ক অবকাঠামো সৃজনের ফলে শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ হয়েছে বিগত দশ বছরে। আনুষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যাপক কর্ম সৃজন হয়েছে। পাশাপাশি, ব্যক্তি উদ্যোগের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য অব্যাহত ছিল। ১০০দিনের কর্মসৃজন, চর জীবিকায়নসহ বিভিন্ন লক্ষ্য-নির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রামীণ জনপদ বিশেষ করে মঙ্গাপীড়িত উত্তরাঞ্চলে মৌসুমি বেকারত্ব দূর করেছে।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেখা যায় ২০০৫-২০০৬ থেকে ২০১৭-২০১৮ সময়ে দেশে মোট  এক কোটি ৩৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে, নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে ৭৩ লাখ। অনানুষ্ঠানিক খাতে মোট ১ কোটি ৪৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ৫ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৭৭ টি পদ সৃজন করা হয়েছে। ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মোট ৭৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৩৬ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।

কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অর্থবিভাগের সম্পৃক্ততায় প্রণয়ন করা হয় ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ননীতি ২০১১’। সরকারের ২৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থার দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কাজের সমন্বয় সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এনএসডিসি) গঠন এবং দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন অর্থের যোগান নিশ্চিত করার জন্য ‘ন্যাশনাল হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এনএইচআরডিএফ)’ স্থাপন করা হয়েছে।

দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি বড় সীমাবদ্ধতা হল শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিকের অপ্রতুলতা। ফলে একদিকে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও দেশের যুবসমাজ উপযুক্ত চাকরির সন্ধান পায় না, অন্যদিকে দেশীয় শিল্পসমূহকে মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি বিভিন্ন কাজে বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। একইভাবে, দক্ষতার ঘাটতির কারণে বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা যথাযথ মজুরি পায় না। এ সীমাবদ্ধতা দূর করতে অর্থবিভাগ শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে দক্ষতা উন্নয়নের বিশেষ কার্যক্রম শুরু করে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে। তিন ধাপে মোট ১৫ লাখ লোকের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১০ বছর মেয়াদি ‘স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)’  বাস্তবায়ন করছে অর্থবিভাগ। শ্রমবাজার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ১২টি সেক্টরভিত্তিক শিল্প দক্ষতা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত এক লাখ ৮২ হাজার ৭৫৬ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে মোট এক লাখ ২৯ হাজার ৯০০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়াও পরিবহন খাতে এক লাখ দক্ষ ও পেশাদার গাড়ি চালক তৈরির বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

**



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়