ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুদিন আসছে সোনালী আঁশে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুদিন আসছে সোনালী আঁশে

কেএমএ হাসনাত: ধ্বংসপ্রায় পাট শিল্পকে উজ্জীবিত করতে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। পাট থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন এবং তা বাজারজাত করার পাশাপাশি পাট গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। পাট চাষিদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রণোদনা। পাট রপ্তানির আয় ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।

একসময় বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাটের ব্যাপক চাহিদা ছিলো বিশ্বজুড়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাটের বিকল্প বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদিত হওয়ায় এর কদর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলস বন্ধ করে দিয়ে দেশের পাট শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক এঁটে দেয়া হয়। এরপর গত ১০ বছরে পাট খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)- এর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৯৬ কোটি ডলার আয় করে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের পাট ও পাটজাত পণ্যে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ১০৩ কোটি ডলার। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পাটজাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে সরকার।

২০০৯ সালে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ছিল মাত্র অর্ধ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে দেশে ৯২ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে, ২০০৯ সালে যা ছিল ৫১ দশমিক ২৭ লাখ বেল। আগামী ৫ বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইউরোপের বাজারে বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার পচনশীল পলিব্যাগের বাজার রয়েছে, যেটাকে ব্যবহার করে পাট শিল্পকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে জুটপলি তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাটের তৈরি জুট পলিমার ব্যাগের পরীক্ষামূলক উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। এই ব্যাগের নাম দেওয়া হয়েছে সোনালী ব্যাগ বা জুট পলিমার ব্যাগ যা পচনশীল।

বর্তমানে সারা দেশে পলিথিনের কারখানার সংখ্যা প্রায় ১২০০টি। ঢাকায় প্রতিদিন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ফলে নর্দমা বন্ধ ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে এই পলিথিন ব্যাগ। কাজেই জুটপলি অর্থনৈতিকভাবে সফল হলে বিদেশে চাহিদার পাশাপাশি দেশীয় চাহিদা বিশেষ করে গার্মেন্টস ও সুপারশপগুলোতে মোড়ক তৈরিতে বিকল্প পলিথিনের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১২ কোটি ৭০ লাখ বর্গ মিটার  চট (জুট পিও টেক্সটাইল) প্রয়োজন হয়। যার আনুমানিক দাম ৮৫ মিলিয়ন ডলার। এ শিল্পের উন্নতি হলে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাট পাতা থেকে চা উদ্ভাবন করেছেন যা ইতোমধ্যেই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিজেএমসি চা শিল্পকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে পাট পাতা থেকে চা উৎপাদনের একটি কারখানা নির্মাণ করছে যার কাজ চলতি ডিসেম্বর মাসেই শেষ হওয়ার কথা। কারখানাটি চালু হলে পাট পাতা থেকে ‘গ্রিন টি’ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পাট পাতা থেকে তৈরি গ্রিন টি’তে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় তা ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভ’মিকা রাখবে। এ চা বাংলাদেশ ও জার্মানির গবেষকদের সমন্বয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুট টি’। ইতোমধ্যে ২০০ কেজি ‘গ্রিন টি’ জার্মানিতে পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি করা হয়েছে এবং আরও ৩০০০ কেজি রপ্তানির আদেশ পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানাটি সম্পন্ন হলে আগামী বছরের শুরু থেকেই বাণিজ্যিকভাবে এই চা রপ্তানিতে যাবে বাংলাদেশ। এর ফলে বিদেশী মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

এছাড়াও জামালপুরের মাদারগঞ্জে ৩৪ একর জমিতে ৫১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইলস মিল’ নামে একটি বিশেষায়িত পাটকল প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এই প্রকল্প শেষ হলে পাট ও তুলার মিশ্রনে কম খরচে সুতা ও কাপড় উৎপাদন করা যাবে। তাছাড়া পাট পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে প্রকল্পটি সহায়ক ভ’মিকা রাখবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশীয় তৈরি পোশাক শিল্পে সাশ্রয়ী মূল্যে সুতা ও কাপড় সরবরাহ করতে পারবে এবং ওই পাটকলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃস্টি হবে।

পাট খাতের পুনর্জাগরনের জন্য সরকার পাট পণ্য বহুমূখী করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের বাজার সৃষ্টির বিভিন্ন জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে। এবছর ইউরোপের বাজারে সিনথেটিক পণ্য নিষিদ্ধ হলে বিশ্বব্যাপী পাটের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। সরকার ইতোমধ্যে বন্ধ পাটকলগুলো চালু করা এবং আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে বন্ধ থাকা পাটকলগুলো আবার চালু হলে এ খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়