ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সরকারি চাল-গম আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধানে নামছে দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি চাল-গম আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধানে নামছে দুদক

এম এ রহমান মাসুম : টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও রেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সেবামুলক কর্মসূচিতে বরাদ্দ চাল ও গম অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সরকারি চাল, গম, আটা ও বিভিন্ন পণ্যের চোরাই হওয়া চালান ও মজুত বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অভিযানে ধরা পড়েছে এবং সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। বরাবরই এর সঙ্গে খাদ্য বিভাগ ও ডিলারদের একটি শক্তিশালী চক্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল।

গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও সরকারি খাদ্যগুদাম, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এক অভিযান চালিয়ে ২১৫ টন চাল ও আটা জব্দের ঘটনায় পুরাতন অভিযোগও জনসন্মুখে আসে। এর পাশাপাশি র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুপারিশ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অভিযোগ আকারে আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত কয়েকটি অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়। শিগগিরই শক্তিশালী একটি টিমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।

এ প্রসঙ্গে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। র‌্যাব ও গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া অভিযোগ যাচাই-বাছাই শাখায় নেওয়া হয়। তবে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা সহনীয় করতে ৩৯ টাকা কেজি দরের চাল এবং ৩২ টাকা কেজি দরের আটা ওএমএসের মাধ্যমে যথাক্রমে ৩০ ও ১৮ টাকা দরে রাজধানীর ১৪১টি পয়েন্টে সপ্তাহে ৬ দিন বিক্রি করা হয়। কিন্তু একটি সংঘবব্ধ চক্র চাল ও আটা নির্দিষ্ট স্থানে বিধি মোতাবেক বিক্রি না করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়, যা সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মতো। গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও সরকারি খাদ্যগুদাম, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ২১৫ টন চাল ও আটা জব্দ করার কথা জানায় র‌্যাব। অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানান, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪১টি ট্রাকে করে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি করার কথা। কিন্তু তা না করে খাদ্য গুদামের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জব্দ করা চাল কালোবাজারে বিক্রি করেছেন। এ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে র‌্যাব-৩। মামলায় ওএমএস ডিলার সমিতির সভাপতি আলমগীর সৈকতসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে খাদ্য অধিদফতর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয় গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে জমা দেয়া হয়। তবে ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে জব্দকৃত চালকে রেশনের বলে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের জব্দকৃত চাল বিভিন্ন সংস্থার রেশনের চাল। যেগুলো ব্যবসায়ীরা কিনেছেন। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উৎস থেকে চাল, গম ও আটা কিনে কম মুনাফায় পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা অনেকেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশন ও বিভিন্ন ত্রাণ খাতের (টিআর, কাবিখা) চাল, গম তাদের ঠিকাদার ডিওধারীদের কাছ থেকে কিনে থাকেন। তবে আটককৃত আটার বস্তাগুলো সরকারি ওএমএস খাতের কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে বিভিন্ন বাহিনীর রেশন সামগ্রীর ভর্তুকি মূল্য বৃদ্ধি, সিএসডির সার্বিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ও ত্রুটি থাকায় ব্যবস্থাপককে সরিয়ে একজন দায়িত্বশীল ও দক্ষ ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদায়ন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের কালো তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সিএসডির প্রবেশদ্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, সিএসডি চত্বরে সশস্ত্র আনসার মোতায়েন করা, অনিয়ম রোধ করতে ডিলারদের যুক্তিসঙ্গত কমিশন প্রদান এবং সিএসডি থেকে লেবার ইউনিয়ন অফিস সরানো ইত্যাদিসহ ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জব্দ পণ্যের বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, আটককৃত ১৪-২৯৮৫ নম্বর ট্রাকে ছিল অধিনায়ক র‌্যাব-১, উত্তরা ও এডি, আইজি, এসবি, ঢাকার নামে বরাদ্দ ১০ টন গম। এর ডিও নম্বর ছিল ৫৮২০৪০৪ ও ৫৭৯০০৪০। সিএসডির ৩৩ নম্বর গুদাম থেকে এসব খাদ্যশস্য বের হয়েছিল। ১৪-২৭৭৭ নম্বর ট্রাকে ছিল এডি, আইজি ও এসবি, ঢাকার নামে বরাদ্দ করা ১০ টন গম। ৫৭৯০০৪০ ডিও নম্বরের এসব গম বের হয়েছিল ৩২ নম্বর গুদাম থেকে। ১৪-৪৯৮১ নম্বর ট্রাকে এডি, আইজি, এসবি, ঢাকা এবং পুলিশ সুপার ঢাকার নামে বরাদ্দ করা গম ছিল ১০ টন। ৫৮২০৪০২ ডিও’র এসব গম বের হয়েছিল ৩৩ নম্বর গুদাম থেকে। ১১-০২৭৫ নম্বর ট্রাকের বরাদ্দ করা গম ছিল ঢাকার পুলিশ সুপারের। ১০ টন গমের ডিও নম্বর ছিল ৫৮২০৪০২। এসব গম বের করা হয়েছিল ৩২ নম্বর গুদাম থেকে। অপর ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো ট-১৪-০৫৮৩) সাত টন চাল ও আট টন আটা তেজগাঁও সিএসডি থেকে বের করা হয়েছিল কিনা তার কোনো তথ্য তদন্ত কমিটি পায়নি। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি দেখতে পায় ৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন খাতে মোট ৮১ দশমিক ৫০০ টন গম বিলি করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ডিসেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়