ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিদেশীদের করজালে আনবে লিফলেট, চিহ্নিত করবে টাস্কফোর্স

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ৫ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদেশীদের করজালে আনবে লিফলেট, চিহ্নিত করবে টাস্কফোর্স

এম এ রহমান মাসুম : দেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের করজালে আনতে ও কর ফাঁকির প্রবণতা হ্রাস করতে তাদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে কর বিষয়ে সম্যক ধারণা দিয়ে ফাঁকি প্রতিরোধে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এনবিআর।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশী মিশনসমূহে বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট গ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে ওই লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি এনবিআর, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) ও পুলিশের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার কাজ হবে কর ফাঁকিবাজ বিদেশী নাগরিকদের চিহ্নিত করা।

২০১৮ সালের  সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে বোর্ড সভা থেকে নেওয়া এমন কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে কাজ চলছে বলে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে জানিয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) দেওয়া তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারিমট গ্রহণ করা বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৪ জন এবং ইটিআইএন নিবন্ধিত বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা ১২ হাজার ৪১ জন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ কর্মী বেআইনিভাবে এদেশে চাকরিরত আছে। বিদেশী কর্মীদের করজালের আওতায় আনতে পারলে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে দেশ বঞ্চিত হবে না। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বিদেশী নাগরিকদের করজালের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আগত বিদেশী নাগরিকদের আয়কর বিষয়ে সম্যক ধারণা প্রদানের জন্য একটি লিফলেট প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার প্রধান উদ্দেশ্য বিমান ও স্থলবন্দর দিয়ে আগত বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশকালে একটি লিফলেটের মাধ্যমে আয়কর বিষয়ে ধারণা দেওয়া।

৯ম বোর্ড সভায় এ বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- লিফলেটের আকর্ষণীয় ও নান্দনিক প্রচ্ছদ তৈরি করতে হবে। লিফলেটের শব্দ চয়ন ও অন্যান্য বিষয় সদস্যদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে সমন্বিত করে প্রস্তুত করতে হবে।

লিফলেটের গায়ে আকর্ষণীয় স্থানে ইংরেজিতে শুধু উপার্জনকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শব্দসমূহ সংযোজনের সিদ্ধান্ত হয়। বিদেশী মিশনসমূহে বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট গ্রহণকারী বিদেশী ব্যক্তিদের নিকট লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণ এবং বিমানবন্দরে আগত বিদেশী শুধু যারা বাংলাদেশে চাকরির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করবে এরকম ব্যক্তির কাছে লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়।

অন্যদিকে, দেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের খুঁজে বের করতে  বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) ও পুলিশের সাহায্য নিতে যাচ্ছে এনবিআর। একই সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে বলেও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। টাক্সফোর্স প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বিদেশী নাগরিদের বাংলাদেশে প্রবেশ, চলে যাওয়া, আবাসস্থল ও তারা কতবার বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন বা অবস্থান করছেন এ ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমানে দেশে বসবাসরত বিদেশী নাগরিকদের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নেই। ২০১৬ সালে এ ধরনের উদ্যোগ এনবিআর নিলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এনবিরের আয়কর শাখা সরেজমিনে অন্তত ৩০টি কোম্পানির হদিস পেয়েছেন যেখানে বিদেশী নাগরিকরা কর্মরত আছেন। ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলোকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। পাশাপাশি কর কর্মকর্তারা বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে কর বুথ স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিদেশী নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করলেও বেশিরভাগই কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এদেশে আসেন এবং অবৈধভাবে কাজ করতে থাকেন। এজন্যে নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোই দায়ী। আমরা এ সকল বিষয় মাথায় রেখেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশপাশি সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সম্প্রতি বলেছেন, বিদেশীদের একটা ট্যাক্স কালচারের মধ্যে আনতে চাই। বিদেশীদের অনেকে বাংলাদেশে টুরিস্ট ভিসায় এসে চাকরি করছেন। এসব যাতে না হয় সেটা আমরা লক্ষ্য রাখব। সাধারণত বিদেশীদের আয়ের ৩০ শতাংশ কর হিসেবে দিতে হয়।

১৯৮৪ সালের ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিদেশী নাগরিকদের বেতনের ৩০ শতাংশ কর দেয়ার কথা। বিদেশী নাগরিকদের কোনো কর মওকুফের সুযোগ নেই। বিদেশী সকল নাগরিক যদি করের আওতায় আসে তা অন্তত ৫০ হাজার হওয়ার কথা। যদিও এর আগে এনবিআর টাস্কফোর্স গঠন করে সরেজমিনে পরিদর্শনে যেয়ে আইনি জটিলতায় বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে। এজন্যে আইনের সংস্কারও প্রয়োজন মনে করছে এনবিআর।

২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দেওয়া তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশায় বৈধভাবে কর্মরত আছেন ৪৪ দেশের ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন নাগরিক। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৮৮৫ জনই নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সবচেয়ে বেশি আছেন ভারতের নাগরিক। প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন এ দেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশীদের মধ্যে রয়েছেন ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন ব্যবসায়ী, ৮ হাজার ৩০০ বিশেষজ্ঞ, ৩ হাজার ৬৮২ কর্মকর্তা, ২ হাজার ১০৫ খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক, ৯২২ মূলধন বিনিয়োগকারী, ৮০৪ ব্যক্তিগত কর্মচারী, ৭২৭ কারিগরি যন্ত্রসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, ৫৬১ এনজিওকর্মী, ৪০০ গবেষণা বা প্রশিক্ষণ স্টাফ ও ১৩২ জন গৃহকর্মী। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পোশাক কারখানাগুলোর ১৬ শতাংশই বিদেশী নাগরিক।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়