ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘নির্দয় ব্যবহারে অরিত্রী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নির্দয় ব্যবহারে অরিত্রী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়’

মামুন খান : ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিনাত আক্তারের নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষকসুলভ আচরণে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী।

অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার মামলার চার্জশিটে এ কথা উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার।

গত ২০ মার্চ নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে অভিযুক্ত করার মতো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তার অব্যাহতির আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, অরিত্রী অধিকারী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার ৯ম শ্রেণির (বিজ্ঞান) ‘ক’ শাখার শিক্ষার্থী। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার হলে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও গত বছরের ২ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে অরিত্রী পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোনসহ প্রবেশ করে এবং সঙ্গে রাখে। পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা হলের সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা আফসানা আমতু রাব্বী অরিত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি নেন এবং পরের দিন বাবা-মাসহ তাকে স্কুলে আসতে বলেন।

অরিত্রী বাসায় গিয়ে ঘটনার বিষয়ে তার বাবা-মাকে জানায়। ৩ ডিসেম্বর সকাল ১১ টার দিকে অরিত্রীকে নিয়ে তার বাবা-মা শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনার কাছে যান। ওই সময় হাসনা হেনা স্কুলের কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও শাখাপ্রধান জিনাত আক্তারের কাছে নিয়ে যান। অরিত্রীসহ তার মা-বাবাকে দেখেই জিনাত আক্তার উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। অরিত্রীকে টিসি দেওয়া হবে বলে তার বাবা-মাকে জানান তিনি। তখন অরিত্রীসহ তার বাবা-মা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের সাথে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে অরিত্রী নাজনীন ফেরদৌসের পা ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অরিত্রীর বাবা ও মা তাদের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ক্ষমা চান। কিন্তু নাজনীন ফেরদৌস তাদের কথায় কর্ণপাত না করে অরিত্রীকে টিসি দেওয়া হবে বলে জানান। এরপর নাজনীন ফেরদৌসের সাথে অরিত্রীর বাবা-মায়ের কথা কাটাকাটি হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে অরিত্রীর বাবা ও মা খেয়াল করে দেখেন তাদের মেয়ে রুমে নেই। তারা বাইরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু অরিত্রীকে কোথাও না পেয়ে তারা বাসায় চলে যান। বাসায় গিয়ে দেখেন অরিত্রী তার রুমে আছে। ওই দিন বেলা ২টার দিকে অরিত্রী তার রুমের দরজা বন্ধ করে রুমের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

আসামিদের নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষকসুলভ আচরণে অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

চার্জশিটে ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সেই মোবাইল ফোন, পরীক্ষার খাতাসহ ছয় প্রকার আলামত জব্দ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। উক্ত ধারায় মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।

অরিত্রীর আত্মহত্যায় ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর ৫ নভেম্বর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ৯ ডিসেম্বর জামিন পান হাসনা হেনা। ১৪ জানুয়ারি নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আক্তার আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী মামলায় অভিযোগ করেন, গত ৩ ডিসেম্বর পরীক্ষা চলাকালে অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষক। মোবাইল ফোনে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে পরদিন তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। দিলীপ অধিকারী স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ওই দিন স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে শান্তিনগরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ এপ্রিল ২০১৯/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়