ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অমীমাংসিত রহস্য (শেষ পর্ব)

স্বপ্নীল মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অমীমাংসিত রহস্য (শেষ পর্ব)

সাইবেরিয়ান ক্রেটার

স্বপ্নীল মাহফুজ : পৃথিবী একটি গ্রহ। সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় পৃথিবী সম্পর্কে আমরা বেশি জানি, এর কারণ হলো আমরা এ গ্রহে বাস করি। কিন্তু পৃথিবীর সকল রহস্য এখনো আমাদের নখদর্পনে আসেনি। এ গ্রহ সম্পর্কিত অনেক বড় বড় রহস্যই অমীমাংসিত রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা অমীমাংসিত রহস্যগুলো উম্মোচন করতে নিরলস গবেষণা করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* পৃথিবীর কেন্দ্রে কি আছে?
বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবীর পৃষ্ঠ সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি, কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো এমন কোনো প্রযুক্তি নেই যা পৃথিবীর কেন্দ্রে কি আছে তা আমাদেরকে জানাতে পারে। পৃথিবী পৃষ্ঠের তুলনায় ভূত্বকের নিচে আরো বেশি কিছু থাকতে পারে এবং এ গ্রহের বেশিরভাগই অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আমরা জানি যে, ভূত্বকের নিচের স্তর ম্যান্টল গঠিত হয়েছে শক্ত সিলিকেট শিলা দ্বারা। কিন্তু আমাদের গ্রহের একেবারে কেন্দ্রে কি আছে তা এখনো রহস্যাবৃত। অনেক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবীর সবচেয়ে ভেতরের স্তরে রয়েছে লোহা ও নিকেল, যদিও ১৯৫০ সালে তারা আবিষ্কার করেন যে, পৃথিবী কেন্দ্রের পরিমাপকৃত ঘনত্ব হিসাব করার জন্য  এসব উপাদান যথেষ্ট হালকা নয়।

* ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ কি ছিল?
মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে ডাইনোসররা ছিল প্রাগৈতিহাসিক বিশ্বের অবিসংবাদিত শাসক। কিন্তু হায়, তারা আজ জাদুঘরের আকর্ষণীয় উপকরণ ও সিনেমার বিষয়বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়! কিন্তু ঠিক কি কারণে ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে এ বিশাল প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়? এ বিষয়ে অনেকগুলো মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। একটি তত্ত্ব ধারণা দিচ্ছে যে, একটি বিশাল গ্রহাণু পৃথিবীকে আক্রান্ত করেছে। আরেকটি তত্ত্বমতে, ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ হলো আগ্নেয়গিরির বিশাল উদগীরণের একটি সিরিজ। অন্য একটি তত্ত্ব হলো, ধূলি ও অন্যান্য কণা সূর্যকে আড়াল করেছিল, যার ফলে জীবন-ধারণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছিল, যেমনটা হয়ে থাকে সূর্যের আলোর সাহায্যে খাবার প্রস্তুতকারী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে। বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণেও ডাইনোসরদের প্রাণনাশ হয়ে থাকতে পারে। কিছু উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা গ্রহাণু ও আগ্নেয়গিরি সংক্রান্ত তত্ত্ব দুটিকে সমর্থন করছে।

* চাঁদের গঠন কিভাবে হয়েছে?
বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে জানেন না যে, পৃথিবীর সঙ্গী উপগ্রহ চাঁদ কিভাবে গঠিত হয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, গঠিতব্য পৃথিবী ও সামান্য ছোট প্রোটোপ্লানেটের (গ্রহ ভ্রুণ) মধ্যকার সংঘর্ষ থেকে চাঁদের উদ্ভব হয়েছে। অ্যাপোলো মিশনের নমুনা থেকে জানা যায়, চাঁদের রাসায়নিক গঠনের সঙ্গে পৃথিবীর রাসায়নিক গঠনের খুব মিল রয়েছে। এটি ধারণা দিচ্ছে যে চাঁদ কোনো পৃথক বস্তু নয়, বরং পৃথিবীর একটি খন্ড থেকে চাঁদ গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য একটি তত্ত্ব হলো, চাঁদ ছিল একটি বিচরণকারী বস্তু, যা সৌরজগতের কোথাও গঠিত হয়েছে এবং এটি পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তি তাকে ধরে ফেলে!

* পৃথিবী কিভাবে নাম পেলো?
একটি মজার বিষয় হলো: পৃথিবী হলো সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার নাম কোনো রোমান বা গ্রীক দেবতার নাম থেকে আসেনি। পৃথিবীকে ইংরেজিতে আর্থ বলে। আর্থ শব্দটি এসেছে পুরোনো ইংরেজি ও জার্মান শব্দ গ্রাউন্ড থেকে। কিন্তু কেউ জানে না যে পৃথিবী কখন তার নাম পেয়েছে অথবা কে এ নামকরণ করেছে। পৃথিবীর নাম পুরাণ থেকে না আসার একটি প্রধান তত্ত্ব হলো, প্রাচীন লোকদের ধারণায় আসেনি যে অন্যান্য গ্রহের মতো পৃথিবীও একটি গ্রহ। তারা মনে করত যে অন্যান্য গ্রহ ছিল স্বর্গীয় বস্তু যারা পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে এবং সে অনুসারে তাদের নামকরণ হয়েছে। অবশ্য এ তত্ত্বের কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই।

* সাইবেরিয়ান ক্রেটারগুলো কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ভট ও সাম্প্রতিক রহস্যগুলোর একটি হলো সাইবেরিয়ান ক্রেটার (গর্ত)। রাশিয়ার ইয়ামাল ও জিডান উপদ্বীপে অবস্থিত বিশাল এ গর্তগুলো ২০১৪ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং এরপর থেকে এদের পরিবর্তনশীলতা থামেনি। এগুলো আরো বড় হয়েছে এবং তাদের উৎপত্তি নিয়ে তত্ত্বেরও অভাব নেই। কোনো তত্ত্ব উল্কার পতন সংক্রান্ত, কোনো তত্ত্ব অ্যালিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পৃক্ত। এছাড়া অন্যান্য তত্ত্বও রয়েছে। সর্বাধিক প্রচলিত তত্ত্বটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সাইবেরিয়ার পার্মাফ্রস্ট বা ভূগর্ভস্থ হিমায়িত অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ জনিত বুদবুদ থেকে এসব গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে।

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়