ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ফ্লাইট সঙ্কটে অনিশ্চয়তায় ২০ হাজার ওমরাহযাত্রী

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ১১ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফ্লাইট সঙ্কটে অনিশ্চয়তায় ২০ হাজার ওমরাহযাত্রী

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালন করতে বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যক ওমরাহযাত্রী সৌদি আরব যান। তাদের মধ্যে অনেকেই পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন সেখানে। প্রতিবারের মত এবারও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ওমরাহযাত্রী প্রস্তুতি শেষ করেছেন ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যাবেন কিন্তু শেষ মুহূর্তের বাধা ফ্লাইট সঙ্কট ও চড়া দামে ওমরাহ টিকিট।

এই অতিরিক্ত টিকিটের দাম ও ফ্লাইট সঙ্কটের কারণে ওমরাহ যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ফলে প্রায় ২০ হাজার ওমরাহযাত্রী নির্ধারিত সময়ে ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর ৮ মে পর্যন্ত সৌদি সরকার বাংলাদেশকে এক লাখ ৬২ হাজার ৫০৮টি ওমরাহ কোটা দিয়েছে; যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলোর আসন সে অনুযায়ী বাড়েনি। এ সুযোগে এয়ারলাইন্সগুলো ওমরাহ যাত্রীদের বিমান ভাড়া অতিরিক্ত বাড়িয়ে নেয়। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার ওমরাহ হজ যাত্রীর ফ্লাইট অনিশ্চিত। অথচ তাদের অনেকেই ওমরাহ হজ পালন করতে যাবেন বলে সৌদি আরবে হোটেল বুকিংসহ আনুষঙ্গিক পেমেন্ট দিয়ে দিয়েছেন। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে ২০ হাজার যাত্রীর ভিসা ও হোটেল বাবদ খরচ হওয়া টাকার পরিমাণ ৮০ কোটি থেকে ৯০ কোটি টাকা। যাত্রীদের ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া না গেলে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ আর ফেরত পাওয়া যাবে না।

জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যগামী কিছু বিমান সংস্থা পবিত্র এই রমজান মাসে বাংলাদেশ থেকে তাদের ফ্লাইট কমিয়ে দেয়। ফলে রমজান মাসে ওমরাহযাত্রীরা ফ্লাইট সঙ্কটে পড়েন। এই সুযোগে বেশ কিছু এয়ারলাইন্স ইচ্ছেমতো টিকিটের দাম বাড়িয়ে যাত্রীদের জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দ্বিগুণ টাকায়ও মিলছে না টিকিট। শুধু তাই নয়, ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ২০ মে একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে। যেদিন টিকিট বুকিং শুরু হয়েছে সেদিন ১০ মিনিটের মধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অথচ এখনো ২০ হাজার ওমরাহযাত্রী কোন টিকিটই সংগ্রহ করতে পারেননি।

অভিযোগ আছে, বেশ কিছু ট্র্যাভেল এজেন্সি আগ থেকে টিকিট বুকিং করে এখন চড়া দামে বিক্রি করছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক ওমরাহযাত্রী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার টিকিট না পাওয়ায় অনেকের ওমরাহ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ছুটি কাটাতে আসা অনেকে টিকিট সঙ্কটের কারণে নির্ধারিত সময়ে ফেরত যেতে পারছেন না। অনেকের ভিসা বাতিলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও ভূক্তভোগী অনেকেই জানিয়েছেন।

এ অবস্থায় সঙ্কট সমাধানে মাঠে নেমেছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন (হাব)। তারা জরুরি ভিত্তিতে সঙ্কট সমাধানে মধ্যপ্রাচ্য গামী বিশেষ করে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, হাবের সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিমের নেতৃত্বে হাব নেতৃবৃন্দ বিষয়টি দ্রুত সমাধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কথা বলেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর সঙ্গে। বিষয়টি তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিমান মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছেন। এমনকি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। বিমান প্রতিমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করেছেন হাব নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ হাব নেতৃবৃন্দ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত ফ্লাইট সঙ্কট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি উত্তরণে ফ্লাইট বাড়ানো দাবি হাবের :
পবিত্র রমজান মাসে ২০ হাজার ওমরাহ যাত্রীর ওমরাহ পালনের নিশ্চয়তা বিধানে  জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনের হোটেল ভিক্টরিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের ওমরাহ যাত্রীর ফ্লাইটের তীব্র সংকট ও দ্বিগুণ ভাড়া বাড়ায় উদ্ভুত জটিলতা তুলে ধরেন হাব সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ওমরাহ হজ যাত্রীর ফ্লাইট অনিশ্চিত। অথচ তাদের অনেকেই ওমরাহর জন্য সৌদি আরবে হোটেল বুকিংসহ আনুষঙ্গিক পেমেন্ট দিয়ে দিয়েছেন। যদি তারা ওমরাহ করতে যেতে না পারেন তাহলে ভিসা ও হোটেল বাবদ খরচ হওয়া ২০ হাজার যাত্রীর ৮০ কোটি থেকে ৯০ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।’

হাব সভাপতি অভিযোগ করেন, আগে যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা সরাসরি ওমরাহ বিমান ভাড়া ছিল ৫০ হাজার টাকা, সেখানে এখন এ রুটে ওমরাহ যাত্রীদের ভাড়া ৮০ হাজার টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। আবার এত বেশি ভাড়া দিয়েও যাত্রীদের ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ছুটিতে আসা অনেক অভিবাসী বিমানের আসন সংকট ও ভাড়া বাড়ার কারণে গন্তব্যে যেতে পারছেন না। তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে আর অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আকারে নিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্ভূত সঙ্কট সমাধানে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাব সভাপতি বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশের থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটগুলোতে যাত্রী সংখ্যা কম থাকে। এ রুটের ফ্লাইটগুলো ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে পরিচালনা করলে যাত্রীরা ওমরাহ পালন করতে পারবেন এবং বিমান লাভবান হবে। এছাড়া বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে বাংলাদেশের ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ সহজ করে দিতে হবে। ওপেন স্কাই এবং তাদেরকে হ্যান্ডেলিং পার্কিং সুবিধা মওকুফ করে বা কমিয়ে দেয়া যেতে পারে।

টিকিট সঙ্কটের বিষয়ে শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘টিকিট সঙ্কট সমাধানে দ্রুত সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। ফ্লাইটের টিকিট বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে এক সাথে অধিক সংখ্যক টিকিট যেন না দেয়া হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। যাতে কোন রকমের সিন্ডিকেট হতে না পারে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাব সভাপতি বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশের দুই কোটি মানুষকে বিমানে চড়ে বিদেশ যেতে হয়? একমাত্র বাংলাদেশের এই সংখ্যক মানুষ প্রবাসী। অভিবাসীদের অবদানের বিষয়টি সামনে রেখে সরকারকে অবশ্যই ওমরাহসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটের টিকিট সংকটের দ্রুত অবসানে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাবের মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার, সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহসভাপতি এএস.এম ইব্রাহীম, অর্থ সম্পাদক মুফতী আব্দুল কাদের মোল্লা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল্লামা ড. কফিল উদ্দিন, জনসংযোগ সচিব মাজাহারুল ইসলাম, ইসি সদস্য মো. আবু তাহের, আবুল হাসান, মাহবুবুর রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মে ২০১৯/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়