ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিজেএমসিকে ৭ শর্তে ১৬৯ কোটি টাকা ঋণ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিজেএমসিকে ৭ শর্তে ১৬৯ কোটি টাকা ঋণ

কেএমএ হাসনাত : ঈদকে সামনে রেখে পাটকল শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য ঋণ হিসেবে ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ছাড় করেছে সরকার। তবে এর সঙ্গে ৭ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি আদেশ জারি হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া মজুরি, মে ও জুন মাসের মজুরি এবং উৎসব বোনাস দেওয়ার জন্য সোমবার এ অর্থ ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। তবে এ থেকে পাটকল কর্মকর্তারা কোনো টাকা পাবেন না। অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি এ অর্থ চলে যাবে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে প্রতি ছয় মাসের কিস্তিতে সরকারকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এজন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণ চুক্তি করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। পাটকল শ্রমিকদের জন্য ছাড়কৃত অর্থসহ গত ১০ অর্থবছরে (২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৮-২০১৯) বিজেএমসির অনুকূলে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, আপৎকালীন জরুরি বিবেচনায় এবং আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অনুকূলে ‘নগদ ঋণ’ খাতে এ অর্থ ছাড় করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ‘অপ্রত্যাশিত খাত’ থেকে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বরাদ্দকৃত অর্থেও মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকৃত বকেয়া মজুরি হিসেবে ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, মে ও জুন মাসের মজুরি হিসেবে ৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং উৎসব বোনাসের জন্য ২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে এই অর্থের মধ্যে পাটকলের কর্মকর্তারা ‘এক পয়সাও’ পাবেন না বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্কুলারে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে ৭টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বরাদ্দকৃত অর্থ বিজেএমসির কারখানাগুলোর জন্য যে খাতে দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এ অর্থ সুনির্দিষ্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে দিতে হবে। অর্থ ব্যয়ের সাত দিনের মধ্যে মিলভিত্তিক শ্রমিকদের তালিকাসহ বিস্তারিত বিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এ অর্থ সরকারের বিধিবিধান অনুসারে ব্যয় করতে হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ ব্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি ও অর্থ বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) বর্ণিত শর্ত যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ বিজেএমসির অনুকূলে ‘পরিচালন ঋণ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ অর্থ আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে প্রতি ছয় মাসের কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণ চুক্তি করতে হবে বলেও এতে জানানো হয়েছে। এছাড়া, বরাদ্দ দেওয়া অর্থ কেবল শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি এবং উৎসব ভাতা খাতে ব্যবহার করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত বিজেএমসির অনুকূলে ৭ হাজার ৪৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এবার এর সঙ্গে আরো ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা যোগ হলো। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে কাঁচা পাট কিনতে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ঈদ বোনাস বাবদ দেওয়া হয় ৭০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ড ফান্ড ও অন্যান্য খাতে দেওয়া হয় ৬২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য বিল পরিশোধে দেওয়া হয় ১২৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই মিল আবার চালু করতে সরকারের ব্যয় হয় ১০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিজেএমসির অনুকূলে বন্ড ছাড়ার জন্য ব্যাংকের পেমেন্ট হিসেবে দেওয়া হয় ২ হাজার ৩৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রূপালী ব্যাংকের বকেয়া পরিশোধে ৪৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সরকারি গ্যারান্টির বিপরীতে কাঁচা পাট কিনতে ছাড় করা হয় ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেতন কমিশনের বকেয়া পরিশোধে দেওয়া হয় ৪০০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গুলশানে বিজেএমসির ১০ দশমিক ৩৩ বিঘা জমি কেনা বাবদ দেওয়া হয় ১ হাজার ৮০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ সোমবার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে বকেয়া বেতন, দুই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা হিসেবে দেওয়া হলো ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মে২০১৯/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়