ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিল্পের আওতায় আসছে কৃষিযন্ত্র

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিল্পের আওতায় আসছে কৃষিযন্ত্র

হাসান মাহামুদ: কৃষিযন্ত্র উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণের উপর জোর দিতে যাচ্ছে সরকার। এই উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে একটি নীতিমালা। এটি বর্তমানে পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কৃষি কার্যে ব্যবহার্য যন্ত্রসামগ্রী তৈরীর শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য করবে সরকার।

সরকার কয়েক বছর ধরেই কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে উৎসাহিত করে আসছে। নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রসামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে হাওর অঞ্চলের কৃষককে ৭০ শতাংশ ও সারাদেশের কৃষককে ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। তবে নীতিমালা না থাকায় দেশে যন্ত্রপাতির উৎপাদন ও আমদানিতে ভারসাম্য আনা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর ও শুল্ক সম্পর্কিত সমস্যা দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা তৈরি হলে এসব সমস্যা দূর হওয়ার সাথে সাথে সরকার থেকে উন্নয়ন সহায়তায় দেওয়া কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণে আরো স্বচ্ছতা আসবে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হতে যাচ্ছে জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা ২০১৯। খাতটিতে শৃঙ্খলা আনা ও অগ্রাধিকারভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সুবিধার্থে এ কাজে হাত দিয়েছে সরকার। নীতিমালা তৈরি হলে কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন ও আমদানিতে থাকা সমস্যাগুলো দূর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন।

কৃষিবিদ এমদাদুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কৃষি যন্ত্রসামগ্রী নির্মাণ দেশের অর্থনীতি এবং কৃষিতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই খাতটি এখনো ভারি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত। কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক বা প্রস্তুত শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্পের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে কৃষি উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণে মোট আটটি কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। কৃষি কার্যে ব্যবহার্য যন্ত্রসামগ্রী তৈরীর শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য করবে সরকার। মূলধনী যন্ত্রপাতির উপর যুক্তিসঙ্গত হারে প্রণোদনামূলক আমদানি কর নির্ধারণ করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুত ও সংযোজন শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক রেয়াত সুবিধা অব্যাহত রাখা হবে।

কৃষি কাজের যন্ত্র তৈরীর শিল্পকে শিল্প নীতিতে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হবে এই শিল্পের বিকাশের স্বার্থে। উদ্যোক্তাদের অর্জিত লভ্যাংশের উপর আরোপিত আয়কর প্রদানের প্রয়োজন অনুসারে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হবে। এ শিল্পের যন্ত্রাংশ বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাট রেয়াত সুবিধার বিষয় বিবেচনা করা হবে।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রাংশের উৎপাদন খরচ ও কৃষক উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশে কৃষি যন্ত্রপাতি সংযোজন শিল্পকে উৎসাহিত করা হবে। এক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী যৌথ বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে। সংযোজন শিল্পে উৎপাদিত যন্ত্রাংশের একটি অংশের ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে উচ্চ মূল্যের নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ইত্যাদি আমদানির পাশাপাশি যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ থাকবে। তবে এই সকল যন্ত্রপাতির পুনঃসংযোজন কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক কর্তৃক মান ঘোষণা করতে হবে।

কৃষি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারকদের নিয়ে যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী জোন প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই শিল্পের উন্নয়নে বিশেষায়িত উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উচ্চতর সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করা হবে।

কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থা, খামারের ক্ষুদ্রায়তন ও খণ্ডিত জমিন প্রকারভেদ অনুযায়ী কৃষকবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতির প্রচলনকে উৎসাহিত করা, বৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে কৃষিকে ঝুঁকিমুক্ত ও সহজসাধ্য করা এবং কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ গতিশীল করা- এই তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ের যুগ্মপ্রধান মো. রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা ২০১৯-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে নীতিমালাটি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত খসড়া নীতিমালাটি প্রণীত হয়েছে। খসড়া নীতিমালাটির উপর সবার মতামত আহ্বাণ করা হচ্ছে। এরপর সকল পক্ষের মতামত ও পরামর্শ অনুসারে এটি চূড়ান্ত করা হবে।

এ নীতিমালা প্রণয়নে কৃষি ও কৃষকের কল্যাণ বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে সহায়তা প্রদানে অগ্রাধিকার, টেকসই পরিবেশ, প্রতিযোগিতার বাজার এবং সকল অংশীজনের মাঝে সমতা বজায় রাখার মূলনীতি অনুসৃত হয়েছে।

নীতিমালায় কৃষি যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান, সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা প্রদান ও কৃষি যন্ত্র বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে শুল্ক নির্ধারণ, কারিগরি সহায়তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি সেবা প্রদানকারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

সংরক্ষণশীল কৃষি বিশেষ অঞ্চল ভিত্তিক যান্ত্রিকীকরণ যেমন হাওর অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল ও পাহাড়ি বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম এবং নীতির কথা এতে বলা হয়েছে। কৃষিতে যুব শক্তি এবং নারী শক্তির অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও রয়েছে নীতিমালায়।

কৃষি যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান এবং কৃষি যন্ত্র সরবরাহ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কর্তৃক প্রণোদনা ভর্তুকি প্রদানের সুযোগ থাকবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৯/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়