ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাহে রমজান

সংযম ও তাকওয়া অর্জনের মাস

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪০, ১৮ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংযম ও তাকওয়া অর্জনের মাস

বিশ্বের মুসলমানদের কাছে  আবার এসেছে মাহে রমজান। পুণ্যময় এই মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুযায়ী এই মাসে ৩০ দিন রোজা পালন করতে হয়।  তিনি এ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য সুবেহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ফরজ করেছেন। সূরা বাক্বারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পার।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত এই  রোজা।  মনের কুপ্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম উপায় রোজা।  রমজান আমাদের সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়।  সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হইল তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। তাকওয়ার মূল আবেদন হচ্ছে আল্লাহকে রাজি-খুশি রাখতে যে সব কাজ করা দরকার তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে করা, আর যে সব কাজ করতে আল্লাহ ও তার রসূল নিষেধ করেছেন তা না করা। দিনের বেলায় শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়, পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের জবান ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নিজেকে বিরত রাখতে হবে সব ধরনের মিথ্যা এবং অন্যায় অপকর্ম থেকে।

রমজান মাসের মর্যাদা ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনুলকারীম। মানবজীবনের পরিপূর্ণ জীবনবিধান হলো এই কোরআন। আর এ মাসের মধ্যেই রয়েছে মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর। রমজান মাসে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দোজখের দরজাসমূহ এবং শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়। এই মাসের নেক আমল অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়।

রোজা ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। পবিত্র রমজানের শিক্ষা হচ্ছে সংযম। এ মাসে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন। রোজার মাস এলেই দেখা যায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় লাগামহীন। রমজানে বিশেষ কিছু খাদ্যসামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা  এ বাড়তি চাহিদাকে  সামনে রেখে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। এ প্রবণতা মাহে রমজানের শিক্ষার পরিপন্থী।

অন্যদিকে  দেখা গেছে রমজান মাসে ধনী বা সম্পদশালীদের অনেকে ব্যাপক অপচয় করেন। এসব না করে পবিত্র এই মাসে মানবতার সেবায় ব্যয় করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের যেমন কল্যাণ হয় তেমনি যিনি এ সেবায় ব্রত হবেন তার জন্যও তা অশেষ কল্যাণ বয়ে আনবে। রমজানের শিক্ষা হচ্ছে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য বা বিপদে সহায়তা দান। সুতরাং সিয়াম সাধনার যে শিক্ষা, এর মাধ্যমে অর্জিত জীবনবোধ যদি আমাদের জীবনাচরণে প্রতিফলিত হয়, তাহলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।

হাদীস শরীফে আছে রোজাদারের জন্য দুটো সময় খুবই আনন্দের। একটি হচ্ছে ইফতারের সময় আর অন্যটি হচ্ছে আখিরাতে যখন সে আল্লাহর দীদার লাভ করবে। রোজা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়। লোক দেখানোর কোনো সুযোগ নেই এখানে। রোজাদারকে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজ হাতে পুরস্কার দিবেন এবং মাফ করে দেবেন তার অতীতের সব গুনাহ। এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের জীবন পরিশুদ্ধ হোক। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন, যাতে আমরা পবিত্র রমজানের শিক্ষা সঠিকভাবে উপলব্ধি ও অনুশীলন করতে পারি। রাব্বুল আলামিন আমাদের সঠিকভাবে রমজানের রোজা পালন করার তাওফিক দিন। -আমিন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়