ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১৯৫৪ বিশ্বকাপ: গোলের রেকর্ড গড়া আসরে চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানি

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:২৭, ২২ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯৫৪ বিশ্বকাপ: গোলের রেকর্ড গড়া আসরে চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানি

বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানি। দলটির অধিনায়ক ফ্রিটজ ওয়ালটারকে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করছে সমর্থকরা

আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা! তার পরেই শুরু `গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ`। বিশ্বকাপ ফুটবল। এক মাস সারা পৃথিবীকে এক সুরে বেঁধে রাখবে সেই এক খেলা। সারা বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ টিভির পর্দাতেই রোনালদো, মেসি, নেইমারদের পায়ের জাদুতে মগ্ন হবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে এসে গেল ফুটবল বিশ্বকাপের মৌসুম। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসকট ‘জাভিবাকা’।

প্রায় শতবর্ষের কাছাকাছি চলে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল কিভাবে? ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসই বা কি ছিল? বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো কেমন ছিল? রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। তাঁদের জন্য রাইজিংবিডি’র বিশেষ আয়োজন ‘‘ফিরে দেখা বিশ্বকাপ’’। ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা হবে বিশ্বকাপের আগের ২০টি আসর। আজ প্রকাশ করা হচ্ছে পঞ্চম পর্ব।

বিশ্বকাপে ফ্রিটজ ওয়ালটারের ব্যবহার করা বুট, স্মারক ‍পুরস্কার ও ফুটবল। রয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিটও


১৯৫৪ বিশ্বকাপ:
চারটি দেশ ঘুরে অবশেষে বিশ্বকাপ খুঁজে পেল ইউরোপের ক্রীড়াঙ্গনকে। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ড। শুরুতে প্রতিযোগিতায় ছিল অনেক দেশই। তবে ভোটাভুটিতে প্রায় সর্বসম্মতিক্রমেই নির্বাচিত হয় সুইজারল্যান্ড। নির্বাচন প্রক্রিয়াটা অবশ্য ১৯৫০ বিশ্বকাপের স্বাগতিক ব্রাজিলকে বেছে নেওয়ার দিনই নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ২২ জুলাই লুক্সেমবার্গ পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলকে নির্ধারণ করার পাশাপাশি ১৯৫৪ সালের জন্য সুইজারল্যান্ডকে বেছে নেয় ফিফা।
 

বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল


যথারীতি চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিক দল মূল পর্বে জায়গা পায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মোট ৩৮টি দলের মধ্যে বাছাই পর্ব হওয়ার পর জায়গা পায় বাকি ১৪টি দল। ফুটবলের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ইংল্যান্ড আগের বিশ্বকাপেই অংশ নেয়। তবে পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচের আরেক দল স্কটল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ইউরোপ থেকে ইতালি, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি, হাঙ্গেরী, চেকোশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক; ল্যাটিন আমেরিকা থেকে ব্রাজিল ও উরুগুয়ে; কনকাকাফ অঞ্চল থেকে মেক্সিকো এবং এশিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পঞ্চম বিশ্বকাপে অংশ নেয়।

১৬ দল নিয়ে আয়োজিত এ বিশ্বকাপেও আগের তিন আসরের মতো যোগ হয় নতুন কিছু ভূতুরে নিয়ম। চারটি ভাগে বিভক্ত করে গ্রুপ পর্বে খেলা হয় ঠিকই। কিন্তু গ্রুপ পর্বের দলকেও ভাগ করা দুটি ভাগে -সিড ও আনসিড। মূলত ফুটবলের অভিজাত দলগুলোকে রাখা হয় সিডে। এতে গ্রুপের সিড দলদুটি নিজেরা মুখোমুখি হবে না। সিডরা খেলে আনসিড দলের বিপক্ষে। এমনকি গ্রুপ পর্বে দেখা হয়নি গোলপার্থক্য। সমান পয়েন্ট হলে খেলা হয়েছে প্লে অফ। আর গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল সমান হলেও খেলা হয়েছে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো সেই বিশ্বকাপটি জিতে নেয় একটি আনসিড দল। আগের আসরে নিষিদ্ধও ছিল দলটি। আর নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় পশ্চিম জার্মানি।
 

তুর্কীর কাছে ৭-০ গোলে হেরেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে দল ছিল তারা। ওই ম্যাচের একটি মুহূর্ত। তুর্কীর কাছে ৭ গোলে হারের পর পশ্চিম জার্মানির কাছে ৭-২ গোলে হেরেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। 


শুধু তাই নয়, কোয়ার্টার ফাইনালেও অদ্ভুত এক নিয়ম। চার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে একে অপরের মুখোমুখি হতে হয়। আর চার গ্রুপের চার রানার্সআপ দল একে অপরের মোকাবেলা করে। ফলে কোয়ার্টার ফাইনালেই দুটি ভালো দল ব্রাজিল ও ইংল্যান্ড বাদ পড়ে যায়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দুটি দল চলে আসে সেমিফাইনালে। মূলত জটিল এ নিয়মের কারণেই ব্রাজিল, উরুগুয়ে, ইতালি, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলো বাদ পরে যায়। আর পঞ্চম বিশ্বকাপের ফাইনালে ফেবারিট হাঙ্গেরির বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয় পশ্চিম জার্মানির।
 

১৯৫৪ বিশ্বকাপের পার্টিসিপেসন মেডেল


আর সে সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগায় জার্মানরা। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে যেই হাঙ্গেরির কাছে ৩-৮ গোলের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল, তাদের বিপক্ষেই ফাইনালে ৩-২ গোলে জিতে শিরোপায় চুমু খায় দলটি। এমনকি ফাইনালের ম্যাচে প্রথম ৮ মিনিটেই ২ গোলে পিছিয়ে ছিলো তারা। কিন্তু এরপরেই ভিন্ন এক জার্মানি। ১৬ মিনিটেই সমতায় আসে। এরপর ৮৬ মিনিটে ধারা বিপরীতে পুসকাস-জিবর-ককসিসদের অবাক করে গোল দিয়ে বসেন হেলমট রান। সেই গোলেই শিরোপা জয়। টপ ফেবারিট হাঙ্গেরি যারা আগের চার বছর অপরাজিত থেকে ২৫টি ম্যাচে গোল দিয়েছিল ১০৪টি, এমনকি বিশ্বকাপেও ৫টি ম্যাচে গোল দিয়েছিল ২৭টি, তারাই ফিরল মাথা নিচু করে।
 

পশ্চিম জার্মানি ও হাঙ্গেরির মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচের টিকিট


চতুর্থ বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের মোট ৫টি ভেন্যুতে মোট ২৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মোট গোল হয় ১৪০টি। যা এখন পর্যন্ত কোন আসরে গড়ে সর্বোচ্চ হওয়ার রেকর্ড। ম্যাচপ্রতি গোল ৫.৩৮। এই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক সুইজারল্যান্ডকে ৭-৫ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল অস্ট্রিয়া। মোট ১২ গোলের এ ম্যাচটি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ। আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন হাঙ্গেরীর ককসিস। দুটি হ্যাটট্রিকসহ একাই গোল দেন ১১টি। ফাইনালের আগে প্রতি ম্যাচেই কমপক্ষে ২টি গোল করেছেন। ফাইনালে ছিলেন গোলশূন্য। আর দলকেও দিতে হয়েছে খেসারৎ।




রাইজিংবিডি/২২ মে ২০১৮/মুহাম্মদ মেহেদী হাসান/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়