ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১৯৬২ বিশ্বকাপ: গারিঞ্চার বিশ্বকাপে আবারও রাজা ব্রাজিল

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০০, ২৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৯৬২ বিশ্বকাপ: গারিঞ্চার বিশ্বকাপে আবারও রাজা ব্রাজিল

টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের মুকুট ব্রাজিলের মাথায়। বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ব্রাজিল দলের উল্লাস।

আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা! তার পরেই শুরু `গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ`। বিশ্বকাপ ফুটবল। এক মাস সারা পৃথিবীকে এক সুরে বেঁধে রাখবে সেই এক খেলা। সারা বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ টিভির পর্দাতেই রোনালদো, মেসি, নেইমারদের পায়ের জাদুতে মগ্ন হবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে এসে গেল ফুটবল বিশ্বকাপের মৌসুম। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসকট ‘জাভিবাকা’।

প্রায় শতবর্ষের কাছাকাছি চলে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল কিভাবে? ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসই বা কি ছিল? বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো কেমন ছিল? রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। তাঁদের জন্য রাইজিংবিডি’র বিশেষ আয়োজন ‘‘ফিরে দেখা বিশ্বকাপ’’। ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা হবে বিশ্বকাপের আগের ২০টি আসর। আজ প্রকাশ করা হচ্ছে সপ্তম পর্ব।

ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক গারিঞ্চা। পুরো বিশ্বকাপ একাই মাতিয়ে রাখেন এ সুপারস্টার


১৯৬২ বিশ্বকাপ: আগের দুইবার ইউরোপে হয় বিশ্বকাপ। টানা তৃতীয়বারও ইউরোপে আয়োজনের কথা ভেবেছিল ফিফা। তখনই বিশ্বকাপ বর্জনের হুমকি দেয় ল্যাতিন আমেরিকার দলগুলো। ফলে আবার বিশ্বকাপ ফেরে ল্যাতিনে। আয়োজক হিসেবেই এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু কি মনে করে চিলিকে স্বাগতিক ঘোষণা করে ফিফা তা আজও রহস্যই থেকে গিয়েছে।
 

ইতালি এবং চিলির ম্যাচের একটি মুহূর্ত


তার উপর বিশ্বকাপ আয়োজনের দুই বছর আগে ভয়ংকর ভূমিকম্প হয় চিলিতে। ৯.৫ মাত্রার। প্রায় বিধ্বস্ত হয় দেশটির অবকাঠামো। লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া চিলির চারদিকে শোকের মাতম আর দুর্ভিক্ষের ছায়া। স্টেডিয়ামগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ। তবে পিছু হটেনি চিলি। স্টেডিয়ামতো পুনঃনির্মাণতো করেই, সফলভাবে আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় দেশটি। যদিও কিছু নিন্দিত ঘটনাও পিছু ছাড়েনি।
 

১৯৬২ বিশ্বকাপের ব্যবহৃত বল


বাছাই পর্বে ৫৬টি দেশের মধ্যে লড়াই হয়। যথারীতি বেছে নেওয়া হয় ১৬টি দেশ। ইউরোপ থেকে সুযোগ পায় ১০টি দেশ – পশ্চিম জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি, চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বুলগেরিয়া। ল্যাতিন আমেরিকা থেকে খেলে ৫টি দেশ – ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, চিলি ও কলোম্বিয়া। এছাড়া কনকাফাক অঞ্চল থেকে সুযোগ মেলে মেক্সিকোর। এই বিশ্বকাপেই শক্তিশালী কোন দলই বাদ পরেনি বাছাই পর্বে।

চিলির ৪টি স্টেডিয়ামে মূল পর্বের মোট ৩২টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আগের বিশ্বকাপের মতোই ১৬টি দলকে চার ভাগে গ্রুপ করা হয়। গ্রুপ পর্ব কিংবা নকআউট পর্ব নিয়ে কোন বিতর্ক না হলেও মাঠের খেলায় বিতর্ক ছড়ায় এ বিশ্বকাপ। প্রথম পর্বে ইতালির বিপক্ষে এক প্রকার জোর করেই জয় ছিনিয়ে নেয় স্বাগতিক চিলি। সহিংসতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে ম্যাচটিকে 'ব্যাটল অব সান্তিয়াগো' নাম দেওয়া হয়। দুই দলই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে আহত করার খেলায় মেতে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত ইতালিকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল পুলিশি প্রহরায়। নিন্দিত এ ম্যাচটি চিলি জিতে নেয় ২-০ গোলে। চিলির গায়ের জোর অব্যাহত ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত।
 

ব্রাজিলের ফুটবলারদের দেওয়া হয় এই মেডেলটি


ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান পেলে। তার উপর সেমিফাইনালের ম্যাচে ব্রাজিলের প্রাণভোমরা গারিঞ্চাকে বহিষ্কার করা হয় প্রায় বিনা কারণেই। তবে এর আগেই জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। ফলে ব্রাজিল ম্যাচটি জিতে নেয় ৪-২ গোলে। নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের মাঝে বহিষ্কার হলে তখন পরের ম্যাচেও বহিষ্কার থাকার কথা। তবে গারিঞ্চাকে বহিস্কারের জোরালো কারণ না থাকায় পরের ম্যাচ খেলতে দেওয়া হয়। ফাইনালে গোল না করলেও তার শৈলীতেই চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেন গারিঞ্চা। আর কারণেই এ বিশ্বকাপকে বলা হয় গারিঞ্চার বিশ্বকাপ।
 

চেকোস্লোভাকিয়ার এক ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে ভেতরে ঢুকছেন গারিঞ্চা


সপ্তম বিশ্বকাপে মোট গোল হয় ৮৯টি।  এ আসরেই প্রথমবারের মতো গোল গড় ৩ এর নিচে (২.৭৮) আসে। এরপর আর কখনোই যা ৩ এর উপরে উঠতে পারেনি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ৬ জন খেলোয়াড়। ব্রাজিলের গারিঞ্চা ও ভাভা, চিলির লিওনেল সানচেজ, হাঙ্গেরির ফ্লোরিয়ান আলবার্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেলেন্তিন ইভামভ এবং যুগোস্লাভিয়ার দ্রাজান জেরকোভিচ প্রত্যেকেই ৪টি করে গোল দেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৮/মুহাম্মদ মেহেদী হাসান/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়