ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘এতদিন যে কষ্ট করেছি তা আজ সফল হলো’

মো. নিজাম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ৩১ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এতদিন যে কষ্ট করেছি তা আজ সফল হলো’

মো. নিজাম উদ্দিন: আমি মো. নিজাম উদ্দিন (আইডি নং-৪৫৭৭)। আমি বর্তমানে ফরিদপুর সার্ভিস সেন্টারে কর্মরত আছি। ঘটনাটি প্রায় চার বছর আগের। তখন আমি মাদারিপুর সর্ভিস সেন্টারে কর্মরত ছিলাম। ঘটনাটি হলো, মাদারিপুর প্লাজা থেকে সন্ধানী ড্রাগস নামে একটি ফার্মেসি WCOM-12 মডেলের ফ্রিজ কিনেছিল। ফ্রিজটি কেনার দুই থেকে তিন মাস পর গ্রাহক অভিযোগ করেন, ফ্রিজটির গ্লাস ঘেমে পানি পড়ে। ফলে তাদের দোকানের ফ্লোরে থাকা মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।

আমি অভিযোগ পাওয়ার পর গ্রাহকের দোকানে গিয়ে ফ্রিজটির কোনো সমস্যা পাইনি। কিন্তু গ্রাহক একই সমস্যার কথা বলে বারবার অভিযোগ করেন এবং এটি বদলে আরেকটি ফ্রিজ দিতে বলেন। আমি ফ্রিজের কোনো সমস্যা না পাওয়ার কারণে তখনকার টিম লিডার জনাব ফজলুল হক স্যারকে ঘটনাটি জানাই। সব শুনে স্যার মাদারিপুর এসে আমাকে নিয়ে সরাসরি গ্রাহকের দোকানে যান। ফ্রিজটি দেখে স্যার নিজেও কোনো সমস্যা খুঁজে পাননি। আমরা তখন গ্রাহকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। কথাপ্রসঙ্গে গ্রাহক আমাদের জানাল যে, যখন সে রাতে ফ্রিজ চালু করে দোকান বন্ধ করে চলে যায় তখন ফ্রিজটির গ্লাস ঘেমে পানি পড়ে। গ্রাহকের কথা শুনে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, পরদিন সকালে আমরা আবার ফ্রিজটি দেখতে যাব।

যাই হোক, কথা মতো পরদিন সকালে আমি গ্রাহকের দোকানে গিয়ে দেখি, সে খুব ভোরে দোকান খুলে বসে আছে। আমি তাকে বললাম, যে ফ্রিজটিতে সমস্যা আমি সেটা পুনরায় দেখব। গ্রাহক তখন আমাকে জানাল যে, ফ্রিজটির পানি সে মুছে ফেলেছে। এই বলে সে আমাকে আর ফ্রিজটি দেখতে দিলো না। উল্টো বলল যে, আপনারা ফ্রিজের সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেননি। সুতরাং রিপলেস করে দিন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন। আমি প্লাজায় এসে শুনলাম প্লাজাতেও নাকি সেই গ্রাহক অভিযোগ দিয়ে ফ্রিজটি রিপলেস করে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন।

এমতাবস্থায় মাদারিপুর সার্ভিস সেন্টারের শাখা ব্যবস্থাপক শাহ্ মো. মেহেদি হাসান (৮১০৯), টিম লিডার জনাব মো. ফজলুল হক (১৬২৫) এবং আমি বসে পরামর্শ করলাম, আগামী কাল সকালে গ্রাহকের সাথে কোনো কথা না বলে আমি তার দোকানে যাব। গিয়ে ফ্রিজটির সমস্যা দেখব। পরদিন সকাল ৬টার সময় গ্রাহকের দোকানে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দেখলাম তার দোকানের কর্মচারী এসেছে দোকান খোলার জন্য। দোকান খোলার পর আমি ফ্রিজটি চেক করে দেখি, ফ্রিজের গ্লাস ঘেমে পানি ফ্লোরে পড়েনি। তখন সেই কর্মচারীকে আমি সমস্যার কথা জানতে চাইলে সে আমাকে জানায়, ফ্রিজটির কোনো সমস্যা নেই। সে আমাকে আরো জানায়, তার দোকানের মালিক এই ফ্রিজটি বদলে একটি ফ্রস্ট ফ্রিজ নিতে চায়। তাই সে বারবার একই অভিযোগ করছে যাতে আমরা তাকে ফ্রিজটি বদলে দেই। প্রায় ১ ঘণ্টা পর গ্রাহক দোকানে এসে আমাকে দেখে খুব রেগে গেলেন। আমাকে বললেন, আপনি আমাকে না বলে আমার দোকানে এসেছেন কেন?

তখন আমি তাকে বুঝালাম যে, আমরা সবসময় গ্রাহকের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করি। তাই আমি আপনার সাথে কথা না বলে ফ্রিজটি দেখতে এসেছি। ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন। তখন সে একটু নরম হয়ে এসেছে। আমাকে বলল, এর আগে অন্য একটি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনেছিলাম। ফ্রিজের সমস্যা হলে আমি অভিযোগ দেয়ার ২০ দিন পর আমার বাসায় ওরা লোক পাঠিয়েছিল। অথচ আপনাদের কাছে আমি যে ক’বার অভিযোগ করেছি আপনারা সেই ক’বার সর্বোচ্চ ১ দিনের ভেতর এসে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। আপনাদের মতো এতো ভালো সার্ভিস আমি আর পাইনি। তখন আমি তাকে বুঝালাম, আমাদের প্লাজা থেকে কিস্তিতে ফ্রিজ কেনার সুযোগ আছে। আপনি চাইলে কিস্তিতে একটি ফ্রস্ট ফ্রিজ নিতে পারেন। আমার কথা শুনে তিনি খুব খুশি হয়ে ধন্যবাদ জানালেন। তখন আমার মনে হলো, এতদিন এই ফ্রিজটির জন্য যে কষ্ট করেছি, তা আজ সফল হলো।

মো. নিজাম উদ্দিন উপরোক্ত লেখাটির জন্য মা দিবসে তৃতীয় সেরা লেখক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিভাগে কর্মরত। গত ১৩ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে মা দিবস। এই দিনটিকে স্মরণে রেখে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃতীয় সেরা লেখক মো. নিজাম উদ্দিনের মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক। এ সময় তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ালটনের মতো এমন স্বনামধন্য কম্পানি মা দিবস উপলক্ষে আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তিকে সেরা মা হিসেবে যে সম্মাননা প্রদান করেছে এজন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ ওয়ালটন সম্পর্কে তার অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমার বড় ছেলে নিজাম উদ্দিন এবং পরে ছোট ছেলে লিটন ওয়ালটনের সার্ভিস সেন্টারে চাকরি পায়। আমার পরিবার বলতে আমি ওয়ালটনকেই বুঝি। আমি সবসময় ওয়ালটনের মঙ্গল কামনা করি।’

তিনি ছেলে নিজাম উদ্দিনের ছেলেবেলার স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার নিজাম খুব মেধাবী ছিল।দারিদ্র্যের কারণে বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারে নাই। খুব কষ্টে আমাদের পরিবার চলত, এমন সময় সে ওয়ালটন কম্পানিতে চাকরি পায়।এবং প্রথম মাসের বেতন পেয়ে সে যখন আমার কাছে দেয়, সেদিন আমার চোখে আনন্দের অশ্রু এসেছিল।’

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মে ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়