ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফ্রান্স রূপকথায় আটকে গেল বেলজিয়াম

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১০ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফ্রান্স রূপকথায় আটকে গেল বেলজিয়াম

ইয়াসিন হাসান: কত ম্যাচ আসে আর কত ম্যাচ যায়। খুব কম ম্যাচই আছে, যেগুলো স্মৃতিতে চিরকালের জন্য আটকে যায়।

ফ্রান্স-বেলজিয়ামের ম্যাচটি হয়তো স্মৃতিতে চিরকালের জন্য আটকে রইবে না! কিন্তু সাময়িক সময়ের জন্য হলেও আনন্দ দিবে, প্রেরণা জোগাবে। দিবে উৎসবের উপলক্ষ্য। প্যারিসে রাতভর আনন্দ আর উৎসবের উপলক্ষ্য তৈরি করে দিয়েছেন গ্রিজমান, এমবাপ্পে আর উমতিতিরা। বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে ২০০৬ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স। ১৯৯৮ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আবারও সুযোগ বিশ্বকাপ জেতার। স্যামুয়েল উমতিতির একমাত্র গোলে জয়সূচক একমাত্র গোলটি পায় ফ্রান্স।  

রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে দুই দলের লড়াইকে বলা হচ্ছিল ড্রেস-রিহার্সাল। কিন্তু উত্তেজনা যতটা মাঠের বাইরে ছিল মাঠের ভেতরে ঠিক তার উল্টো। বলার মতো কয়েকটি চোখ ধাঁধানো আক্রমণ, অসাধারণ কয়েকটি সেভ আর দুর্দান্ত কিছু শট। সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রথম সেমিফাইনালের সারাংশ এতোটুকুই। শেষ পর্যন্ত উমতিতির গোলে ফ্রান্স রূপকথায় আটকে গেল বেলজিয়াম। ফ্রান্স ফুটবলের নবজাগরণের লড়াইয়ের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের ফুটবলাররা।

টানটান উত্তেজনার ম্যাচ না হলেও ৬৭ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম জেগে ছিল ম্যাচের পুরোটাক্ষণ। প্রিয় দলের লড়াইয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি হবে না তা কি আর হয়। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের চিৎকার আর সমর্থণই কাজে আসল! ফরাসিরা এখন বিশ্বকাপের মুকুট থেকে মাত্র এক পা দূরে।

অথচ ম্যাচের শুরুতে মাঠ গুছিয়ে উঠতে পারেনি ফ্রান্স। সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিট থেকেই একের পর আক্রমণ শানায় বেলজিয়াম। একাধিক সুযোগ পেলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি হাজার্ডরা। মাঠ গুছিয়ে পরিকল্পিত আক্রমণে যায় ফ্রান্স। গ্রিজম্যান, এমবাপ্পেরা সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কাঙ্খিত গোল পায়নি প্রথমার্ধে।

১২ মিনিটে পগবার লং পাসে পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেতেন এমবাপ্পে। কিন্তু ১৯ বছর বয়সি এমবাপ্পে দুই ডিফেন্ডারের সঙ্গে দৌড়ে পারেননি। তিন মিনিট পর হ্যাজার্ডের শটে এগিয়ে যেতে পারত বেলজিয়াম। কিন্তু বল গোল পোস্টের খানিকটা ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ১৭ মিনিটে মাতুউদি মাঝ মাঠ থেকে বল পাস থেকে বামপ্রান্তে। পাভার্ডের ফিরতি পাসে শট নিয়েছিলেন মাতুউদি। কিন্তু তার শট আটকে ফেলেন কুর্তোয়া।

বেলজিয়ামের শক্তির জায়গা কাউন্টার অ্যাটাক। জাপান ও ব্রাজিলকে হারাতে বড় ভূমিকা রেখেছিল কাউন্টার অ্যাটাক। কুর্তোয়ার থেকে বল পেয়ে ১৯ মিনিটে হাজার্ডের মাপা ক্রস ছিল একেবারে গোলমুখে।  কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ান শেষ ম্যাচে ফ্রান্সের হয়ে গোল করা ভারানে। তার সহায়তায় গোল হজমের থেকে বাঁচে ফ্রান্স। ২১ মিনিটে ফ্রান্সের মান বাঁচান গোল রক্ষক হুগো লরিস। ডি বক্সের ভেতরে চাডলির কর্ণার কিক থেকে বল পান অল্ডারউইরিল্ড। ফাঁকা জায়গা থেকে শট নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু টটেনহ্যামের হুগো লরিস ডানদিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন।

এরপর অনেকটা সময়ে বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল দুই দল। ৩৪ মিনিটে গ্রিজম্যানের পাস থেকে বল পান এমবাপ্পে। এমবাপ্পে বল পাস করেন জিরুর্ডকে। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ জিরুর্ড। বলেই পা লাগাতে পারেননি এ ফরাসি ফরোয়ার্ড।

৩৯ মিনিটে এমবাপ্পের অসাধারণ এক পাসে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকেন পাভার্ড। এবার কুর্তোয়া বেলজিয়ামের নায়ক। ডানপাশ থেকে নেওয়া পাভার্ডের শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে উমতিতির পায়ের ফাঁক দিয়ে বল পান লুকাকু। বল লাগে তার বাহুতে। নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বল ফসকে যায় তার কাছ থেকে। ফলে গোলশূণ্য থাকে দুই দলের প্রথমার্ধের লড়াই।   

প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে খলনায়ক হতে পারতেন উমতিতি। লুকাকুর ভুলে বেঁচে যান। বিরতির পর সেই উমতিতি ফরাসিদের আনন্দে ভাসান। গ্রিজম্যানের পাস থেকে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নেন জিরুর্ড। কোম্পানির পা ছুঁয়ে বল যায় বাইরে। কর্ণার কিক নেন গ্রিজম্যান। ফেলানিকে টপকে ম্যাচের ৫১ মিনিটে হেড দেন উমতিতির। ওই হেডে কিছুই করার ছিল না কুর্তোয়ার। লিড পেয়ে যায় ফ্রান্স।

৫ মিনিট পর গ্রিজম্যান-এমবাপ্পে আবারও সুযোগ সৃষ্টি করেন। এবারও ফ্লপ জিরুর্ড। গ্রিজম্যানের পাস থেকে এমবাপ্পের ব্যাকহিল পাস জিরুর্ডকে। কুর্তোয়াকে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি জিরুর্ড। ৬০ মিনিটে বেলজিয়ামের হয়ে সবথেকে বড় সুযোগটি হাতছাড়া করেন ডি ব্রুইন। ডি বক্সে জটলার ভিতরে বল পেয়েও গোল করতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলা এ মিডফিল্ডার।

৮০ মিনিটে হাজার্ডের শট ফিরিয়ে দেন ভারানে। সেটাও ছিল গোলমুখে। ৮৮ মিনিটে ডি ব্রুইনের ক্রস থেকে পাওয়া বলে লুকাকু হেড করলেই গোল হতো। কিন্তু গ্রুপ পর্বে ৩ গোল করা লুকাকু শেষ বাঁশি বাজার আগে সুযোগটি হাতছাড়া করেন। ৯২ মিনিটে লিড বাড়ানোর সুযোগ ছিল ফ্রান্সের। কিন্তু ওই কুর্তোয়া আবারও বেলজিয়ামের ত্রাতা। এবারও তার বিশ্বস্ত হাত বাঁচিয়ে দেয় বেলজিয়ামকে।   

সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত বেলজিয়াম ছিল অপ্রতিরোধ্য। কোন ম্যাচ না হেরে শেষ চার পর্যন্ত এসেছিল। কিন্তু নক আউট পর্বের শেষ ম্যাচে সব শেষ তাদের। ফ্রান্সও তাই। সব বাঁধা টপকে ওরা এখন ফাইনালের মঞ্চে। রাশিয়ায় তারাও ছিল অপ্রতিরোধ্য। শেষটা রাঙাতে পারলে দিদিয়ের দ্যেশমের শিষ্যরা ইতিহাসের পাতায় আটকে যাবেন চিরকালের জন্য। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ জুলাই ২০১৮/ইয়াসিন

 

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়