ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চাল কুমড়া চাষে আত্মকর্মসংস্থান

রুমন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৭ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চাল কুমড়া চাষে আত্মকর্মসংস্থান

হোসেনপুর উপজেলার ধনকুড়া গ্রামের একটি চাল কুমড়ার খেত

রুমন চক্রবর্ত্তী, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের সব উপজেলার গ্রামগুলোতেই নিয়মিতভাবে চাল কুমড়ার চাষ হচ্ছে। নতুন আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও কৃষকের ভাগ্য বদলে এ জেলায় চাল কুমড়া চাষ বেশ সাড়া ফেলেছে। জেলার প্রত্যন্ত হাওর উপজেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় এখন সারা বছরই চলছে চাল কুমড়ার চাষ। সারা বছর চাল কুমড়া বাজারে বিক্রি করে অর্থের সংস্থান হচ্ছে কৃষকদের। তবে জেলার হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় চাল কুমড়ার চাষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।কিশোগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার কৃষি বান্ধব গ্রাম ধনকুড়া। এ গ্রামের সুলতান উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম নিজের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে লেখাপড়ার পাশাপাশি পতিত জমিতে কুমড়া চাষ শুরু করেছেন। পরিবারের কাছ থেকে সামান্য পুঁজি নিয়ে বাড়ির সামনে পৌনে এক একর পতিত জমিতে কুমড়ার চারা রোপন করেন। কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে তার খেতে। প্রতি সপ্তাহে  জমি থেকে কুমড়া বাজারজাত করা হচ্ছে। এ বছর বাজার মূল্য ভালো থাকায় প্রতিটি কুমড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি চাল কুমড়া চাষে আমার ভাগ্যে এমন সুফল আসবে। এ বছর ফলন ভাল হয়েছে, আগামীতে আরও ভাল ফলনের লক্ষ্যে আমি কিছু বেশি পরিমাণ জমিতে চাল কুমড়া চাষ শুরু করব।’

 

হোসেনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘বোরো চাষের বাইরে পতিত জমিতে সবজি চাষে কৃষকরা কুমড়া চাষে লাভবান হয়েছে।

 

পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। এ বছর চাল কুমড়া চাষে কৃষকরা ঘুরিয়েছেন তাদের ভাগ্যের চাকা। প্রতিবছরই এখানে বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ার চাষ বেড়েই চলছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে কুমড়া চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে চাল কুমড়া ঘরের চালে এবং পুকুরের আশ পাশে চাষ হতো। আর এখন জমিতে মাচা করে চাল কুমড়ার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা।

 

কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর এখানে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার চাষ হয়েছে। পাকুন্দিয়ার চরপলাশ গ্রামের মৃত আ. সাহিদের পুত্র বর্গাচাষি সোহেল মিয়া বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে চাল কুমড়া চাষ করছি। প্রতিবছরের মতো এইবারও এক বিঘা জমিতে চাল কুমড়ার চাষ করেছি। কুমড়া চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার টাকা।’ এতে দেড় লাখ টাকার মতো বিক্রয় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

একই এলাকার বর্গাচাষি আবুল কালাম জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে তিনি চাল কুমড়ার চাষ করেছেন। বিগত বছরের তুলনায় এবার ফলনও ভাল। প্রতি সপ্তাহেই চাল কুমড়া বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকার এসে খেত থেকেই চাল কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য এলাকায়। প্রতি সপ্তাহে ১শ থেকে দেড়শ চাল কুমড়া পাইকারী দরে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মুহাম্মদ লিয়াকত হোসেন খান বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। কুমড়া চাষের প্রধান শত্রু মাছি পোকা। আবাদকৃত কুমড়ার ফুলে ও ফলে এই পোকা বসলে কুমড়া লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কুমড়া ঝরে পরে।’ তিনি পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কৃষকদের পাশে থেকে চাষাবাদে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ কিশোরগঞ্জ/১৭ নভেম্বর ২০১৫/ রুমন/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়