ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আলোচিত হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে চাঞ্চল্য

উজ্জল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলোচিত হত্যাকাণ্ডে সারাদেশে চাঞ্চল্য

ডেস্ক রিপোর্ট : বিদায়ী বছরে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা। এসব খুনের ঘটনার কোনটি বছরব্যাপী আলোচনায় থেকেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রাক্তন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী, হবিগঞ্জে  চার শিশু, নারায়ণগঞ্জে এক পরিবারের পাঁচজন এবং চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যাকাণ্ড অন্যতম।

 

মিতু হত্যাকাণ্ড :২০১৬ সালে আলোচিত খুনের ঘটনার অন্যতম চট্টগ্রামের প্রাক্তন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ড।

 

বিদায়ী বছরের ৫ জুন চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন মিতু। এই হত্যাকাণ্ড সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ঘটনার পরিক্রমায় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার চাকরিতে ইস্তফা দেন।

 

মিতু হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বাবুল আক্তারের এক সময়ের বিশ্বস্ত সোর্স মুছাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

 

তনু হত্যা : ২০১৬ সালে সারাদেশে আলোচিত হত্যার অন্যতম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা।

 

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসে বাসার পাশের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ ওঠে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তনুর লাশ উদ্ধারের পর দোষিদের শাস্তির দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়।

 

২১ মার্চ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে তার প্রথম ময়নাতদন্ত করেন ডা. শারমিন সুলতানা। ওই দিন অজ্ঞাতদের আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিসের কর্মী ইয়ার হোসেন। পরে গ্রামের বাড়ি জেলার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের তনুর লাশ দাফন করা হয়।

 

গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৪ এপ্রিল দেওয়া হয় প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত না থাকায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ফরেনসিক বিভাগ। এর মধ্যে ১৪মে কুমিল্লার আদালতে তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। গত ১৬মে তনুর কাপড়ে ৩ পুরুষের শুক্রানু পাওয়া যাওয়ার খবর সিআইডি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আবারো আলোচনায় উঠে আসে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ডিএনএ প্রতিবেদনের এমন গরমিল থাকায় তনু হত্যা মামলা সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

 

গত ১২ জুন সিআইডির কাছে তনু হত্যার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন ময়নাতদন্তকারী মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও মৃত্যুর কারণ পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর পূর্বে তনুর সঙ্গে সেক্সুয়াল ইন্টার কোর্স হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন মিথ্যা বলে দাবি করেন তার মা আনোয়ারা বেগম।

 

অধ্যাপক রেজাউল হত্যা : ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।  

 

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আন্দোলন শুরু করেন অধ্যাপক রেজাউলের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।  অধ্যাপক রেজাউল হত্যার দিনই থানায় মামলা করেন তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ। এ মামলায় পুলিশ বিভিন্ন সময় অন্তত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।

 

ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ হত্যা : বিদায়ী বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি ভবন থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে দিয়াজের মা জোবায়দা আমিন চৌধুরী দাবি করেন তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

 

লাশ উদ্ধারের পর দিয়াজের শরীরের তিন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলে জানান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা বিলকিস।

 

দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দিয়াজের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা মামলা দায়ের করেন।

 

দিয়াজ ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। গত বছর তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদকের পদ পান।

 

হবিগঞ্জে  শিশুহত্যা : বিদায়ী বছরে আলোচিত ঘটনার অন্যতম  হবিগঞ্জে ৪ শিশু হত্যা। ১২ ফেব্রুয়ারি বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।

 

হত্যাকারীরা ওয়াহিদ মিয়ার পুত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাত ভাই আব্দুল আজিজের পুত্র তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার পুত্র মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আব্দুল কাদিরের পুত্র ইসমাঈল হোসেনকে (১০) অপহরণ করে হত্যা করে বালি চাপা দিয়ে রাখে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মূল হোতা আব্দুল আলী বাঘালসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

এর মধ্যে কারাগারে আছেন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুল আলী বাঘাল, তার দুই ছেলে জুয়েল ও রুবেল, একই গ্রামের আজিজুর রহমান আরজু এবং শাহেদ আলী।

 

পলাতক ৩ আসামি হলেন- আব্দুল আলী বাঘালের ভাতিজা অটোরিকশাচালক বিল্লাল হোসেন, উস্তার মিয়া ও বাবুল আহমেদ। মামলার অন্যতম আসামি অটোরিকশাচালক বাচ্চু র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

 

নারায়ণগঞ্জে এক পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা : ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইল এলাকায় এক পরিবারের পাঁচজন খুন হন। পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও এক নারীর প্রতি আসক্তির জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।

 

নিহত পাঁচজন হলেন- মোরশেদ, তার বোন তাসলিমা এবং তাসলিমার দুই সন্তান শান্ত ও সুমাইয়া, তাসলিমার দেবরের স্ত্রী লামিয়া। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেলাবোয়। নারায়ণগঞ্জে বাবুরাইলে তারা ভাড়া থাকতেন।

 

এ ঘটনায় নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

এ মামলায় শফিকুল ইসলামের ভাগ্নে মাহফুজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামানের আদালতে মাহফুজ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মাহফুজ একাই পাঁচজনকে হত্যা করে বলে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৬/উজ্জল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়