ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

এক অঙ্কের সমাধান ৩০০ বছর পর!

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ১৯ মার্চ ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক অঙ্কের সমাধান ৩০০ বছর পর!

অধ্যাপক অ্যান্ড্রু উইলেস (১৯৯৮ সালের ছবিতে)

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : ১৫ মার্চ মঙ্গলবার, নরওয়ের সায়েন্স ও লেটার অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের ‘আবেল’ পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু উইলেস-এর নাম ঘোষণা করেছে। আবেল পুরস্কার গণিতের নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত।

৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম নামক যে গণিতিক সমস্যাটির সমাধান বিশ্বের কোনো গণিতবিদ করতে পারেননি, সেই গাণিতিক সমস্যাটির সমাধান অ্যান্ড্রু উইলেস করতে পারায়, ২০১৬ সালের আবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

আগামী মে মাসে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নরওয়েজিয়ান ক্রাউন প্রিন্স হাকুনের হাত থেকে গণিতের নোবেল ‘আবেল’ পদক ও প্রাইজমানি হিসেবে ৬০ লাখ নরওয়েজিয়ান ক্রোন বা পাঁচ লাখ পাউন্ড গ্রহণ করবেন ৬২ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু উইলেস। আর ওই সময়টাকে ‘গণিতের জন্য এক যুগান্তরকারী মুহূর্ত’ হবে বলে বিবৃতি দিয়েছে নরওয়ের সায়েন্স ও লেটার অ্যাকাডেমি।

অ্যাকাডেমি কমিটি তাদের বিবৃতি আরো বলেছে, ‘গণিতের সমীকরণ প্রমাণ করে বিখ্যাত হয়েছেন এমন অল্পসংখ্যাক গণিতবিদের মধ্যে অ্যান্ড্রু উইলেস একজন, বলা ভালো তিনিই একমাত্র গণিতবিদ, যিনি একটি সমীকরণ প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক সব সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন’।

১৬৩৭ সালে ফরাসি গণিতবিদ পিয়েরে দে ফারমাট বিশেষ একটি গাণিতিক সমীকরণ প্রণয়ন করেছিলেন। সেটি হচ্ছে, ‘there are no whole number solutions to the equation x^n + y^n = z^n, when n is greater than 2 (n-এর মান যখন ২-এর বেশি, তখন xn + yn = zn সমীকরণটির কোনো পূর্ণ সংখ্যার সমাধান নেই)। এই সমীকরণটিই ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম হিসেবে পরিচিত। যার সমাধানটি প্রমাণ করতে গিয়ে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের শীর্ষ সব গণিতবিদরা গোলক ধাঁধায় পড়েছিলেন। এটির সমাধানে বাঘা বাঘা সব গণিতবিদ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এবং ব্যর্থ হচ্ছিলেন।

সবচেয়ে পুরোনো ও জনপ্রিয় এই গাণিতিক সমস্যাটির সমাধান ১৯৯৪ সালে প্রকাশ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু উইলেস।
 
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে অ্যান্ড্রু উইলেস জানান, ‘১০ বছর বয়সে ক্যামব্রিজের স্থানীয় একটি লাইব্রেরিতে ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম বিষয়ে ইটি বেলের লেখা ‘দ্য লাস্ট প্রবলেম’ নামক বইটি পরার পর থেকে তিনি এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। শতকের পর শতক ধরে সকল গণিতবিদদের ধাঁধায় রাখা ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম সমাধানে কলেজ জীবন থেকেই তিনি চেষ্টা করে আসছিলেন।’

প্রিন্সটন ইউনির্ভাসিটিতে চাকরীকালীন সময়ে টানা ৭ বছর এই সমীকরণের পেছনে গোপনে সময় ব্যয় করেছেন অ্যান্ড্রু উইলেস, ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করার আগে পর্যন্ত।

১৯৯৩ সালে তিনি প্রথমবার এই সমীকরণের সমাধান প্রকাশ করেছিলেন অক্সফোর্ডে এক অনুষ্ঠানে প্রায় ২০০ গবেষকদের উপস্থিতিতে। কিন্তু কিছুদিন পরে এক গবেষক অ্যান্ড্রু উইলেসের প্রকাশিত ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম সমাধানের মধ্যে একটি বড় ভুল আবিস্কার করেন। এ ঘটনায় অ্যান্ড্রু উইলেস বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু পুণরায় তা সমাধানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ভুল সমাধানে তার সাবেক ছাত্র রিচার্ড টেলর সে সময় তাকে সাহায্য করেছিল।

পরবর্তীতে ১ বছরের গবেষণা শেষে অ্যান্ড্রু উইলেস ১৯৯৪ সালে র্নিভুল ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম এর সমাধান প্রকাশ করে বিশ্বকে হতবাক করে দেন। ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম সমাধান করার মধ্যে দিয়ে গণিতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়, যা ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে দুর্গম হয়ে ছিল।

আলোচিত গাণিতিক সমস্যাটি তিনটি জটিল গাণিতিক ক্ষেত্রের সমন্বয়ে অ্যান্ড্রু উইলেস সমাধান করেছিলেন। মডুলার ফর্ম, উপবৃত্তাকার রেখাচিত্র এবং গ্যালোয়া উপস্থাপনার দ্বারা।

ফারমাট’স লাস্ট থিওরেম প্রমাণকে শতাব্দীর সেরা গাণিতক প্রমাণ হিসেবে মনে করা হয়। মোট ১৩০ পৃষ্ঠায় তা প্রকাশিত হয়েছিল।

জটিল এই গাণিতিক সমস্যা প্রমাণের জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু উইলেসকে যদিও প্রায় দুই দশক পর ২০১৬ সালে ‘আবেল’ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ধৈর্য্যহারা প্রযুক্তিবিদ ও উদীয়মান প্রযুক্তিবিদদের জন্য এটি সুবর্ণ একটা সুযোগ, যেটি আবারো তাদের মনে করিয়ে দেবে, গণিতের ইতিহাসের সবচেয়ে উৎসাহমূলক এক গল্পের অধ্যায়ের।

আবেল পুরস্কারে মনোনীত হওয়ার পর অক্সফোর্ডের স্যার অ্যান্ড্রু উইলেসের অনুভূতির ভিডিও:

 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ মার্চ ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়