ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পৃথিবীর বাইরেও ভূমিধস!

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৃথিবীর বাইরেও ভূমিধস!

৬৭পি ধূমকেতুর আসওয়ান পাহাড়ের কিনারায় ৭০ মিটার দীর্ঘ ও ১ মিটার চওড়া ফাটল (সাদা তীর চিহ্নিত)

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : পৃথিবী থেকে ৩১৭ মিলিয়ন মাইল দূরে থাকা একটি ধূমকেতুর মধ্যে প্রথমবারের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন ভূমিধসের ঘটনা।

এতদিন পৃথিবীতে ভূমিধসের ঘটনা মিললেও এই প্রথম পৃথিবীর বাইরে ভূমিধসের ঘটনার দেখা মিলেছে।

৬৭পি নামক একটি ধূমকেতুর কক্ষপথে থাকা রোসেটা মহাকাশ যান সেখানে ২০০০ টন ভূমি পতনের ছবি তুলেছে।

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ধূমকেতুটিতে বিশাল ধূলা বিস্ফোরণের সঙ্গে ১০০ মিটার দীর্ঘ ভূমি ধসে পড়েছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ধূমকেতুটিতে ‘আসওয়ান’ নামক একটি পাহাড়ে ৭০ মিটার দীর্ঘ ও ১ মিটার চওড়া ফাটল দেখা যায়। ২০১৫ সালের ১০ জুলাই আরেকটি পৃথক ক্যামেরায় ওই এলাকায় ব্যাপক ধূলা সৃষ্টির ছবি ধরা পড়ে। এর পাঁচ দিন পরেই পরিস্কার ছবিতে ভূমিধসের ঘটনা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। ওই স্থানের অভ্যন্তরে বরফ গলে যাওয়াই এই ভুমিধসের কারণ বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

২১ মার্চ ২০১৭ সালে ন্যাচারাল অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় ধূমকেতুটির পৃষ্ঠ কৃত্রিম অবস্থায় ছিল। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে আসওয়ান অঞ্চলে পাহাড়ের খাড়া স্থানটির তাপমাত্রা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে মাইনাস ১৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে প্রায় ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যেত, যখন এর পৃষ্ঠ ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকতো। স্থানটি প্রতি ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১.৫ ঘণ্টা আলোকপ্রাপ্ত হতো। তীব্র তাপমাত্রায় ধূমকেতুটির ভূপৃষ্ঠে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

৬৭পি ধূমকেতুর আসওয়ান অঞ্চলে ১০০ মিটার ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট বিস্ফোরণের দৃশ্য (তীর চিহ্নিত অংশ) 

 

২ মার্চ ২০০৪ সালে, ৬৭পি ধূমকেতু অভিযানে যাত্রা শুরু করা রোসেটা মিশনের সমাপ্তি ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। মহাকাশে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করেছে রোসেটা মহাকাশ যান এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ধূমকেতুটির কক্ষপথে ২ বছর ছিল।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সৌরমণ্ডলের ভেতর দিয়ে যাত্রা শেষে ৬৭পি ধূমকেতুর কাছে পৌঁছেছিল এই মহাকাশ যান। ধূমকেতুটির কাছে পৌঁছাতে গিয়ে রোসেটাকে নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে এবং প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মাইল পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। এই দীর্ঘ পথে শক্তি বাঁচানোর জন্য তাকে ৩১ মাসের জন্য অকেজো করে রাখা হয়েছিল। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ফের সচল করা হয় এবং একই বছরের আগস্টে এটি কক্ষপথে পৌঁছায়।

কক্ষপথে থাকা রোসেট মহাকাশযানটি থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ধূমকেতুর পৃষ্ঠে ফিলি নামক একটি ক্ষুদ্র রোবটযান অবতরণ করে। কোনো ধূমকেতুর বুকে মানুষের তৈরি রোবটযানের অবতরণ এটিই প্রথম। ধূমকেতু পৃষ্ঠ পর্যালোচনা ও উজ্জ্বল ছবি ধারণের জন্য ফিলিকে ব্যবহার করা হয়।

৬৭পি ধূমকেতুটি প্রতি ৬.৪৫ বছর পর পর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ১৯৬৯ সালে এটি আবিস্কৃত হয়।

তথ্যসূত্র : মিরর।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়